এলোমেলো রাজনৈতিক ছড়া- চার

[আলোচিত বিষয়ঃ লইয়্যার, বেতনভোগী ইমাম, গৃহকত্রী]


স্বর্গের দেয়ালে হলো যে এক ছিদ্র
মাসটা স্বর্গে তখন আশ্বিন, কি ভাদ্র।
স্বর্গের হাওয়া ঢোকে সেটা দিয়ে নরকে
নরকবাসীরা সে হাওয়া খায় দমকে।
তা দেখে স্বর্গবাসী বসালো সালিশ
ভগবানের কাছে দিল কঠিন নালিশ।
নরকবাসীরাই বা দেবে কেন ছাড়?
মিষ্টি স্বর্গ হাওয়া আসছে এধার!
তারাও করলো মিটিং, শলা-পরামিশ
ভগবানের কাছে দিল তারাও নালিশ।
ভগবান বসলেন- করতে এ বিচার
“পাঠাও যে যার উকিল, একি অনাচার!
যার যত নালিশ আর আপত্তি যত
উকিলদ্বয় করবে সবের প্রতিনিধিত্ব”।

মাগার খোঁজ নিয়ে দেখা গেল……

সব উকিল যে নরকে! কাকে রেখে কাকে পাঠায়?
স্বর্গ গোটাটা খুঁজেও উকিল না পাওয়া যায়।
গল্পটা যাকে নিয়ে- সদাই করেন মিথ্যাচার
সত্য যে কাকে বলে, জানেনা যিনি লইয়্যার।


ভূঁড়িখানা সুবিশাল, গোঁফহীন দাড়ি
নুরানী চেহারা আমার, মাথায় পাগড়ী।
ভূরিভোজ অতিপ্রিয়, খাই বাড়ী বাড়ী
কাম-কাজে পিছু হাঁটি, বেজায় আনাড়ী।
থাকি আমি মসজিদে, ভাড়া-ভুতো নাই
আরবী পড়িয়ে সাথে বাড়তি কামাই।
বেতনটি মাসে পাই ঠিকঠাক মত
ভাগ নিই সাথে ওঠে দান-খয়রাত যত।
এলেম ভুলেছি সবই, ব্রেইনখানি ভোঁতা
ওয়াজ-নসিহতে আমি শুধু মারি চোথা।
আল্লাহ-খোদার ভয় হয়ে গেছে মাটি
রিজিকের মালিক মানি- মসজিদ কমিটি।
ওয়াজের ফাঁকে-ফাঁকে চোরা-চোরা তাকাই
মেয়েছেলের চেহারা যদি দেখা যায়!
তাকালে পরের বার, হবে যে গোনাহ্‌
পোষাই পয়লাবারে, কে চাই পানাহ্‌?
শকুনের চোখ যেন, দেখি ডান-বাম
বলো দেখি কে আমি? (মসজিদের) বেতনভোগী ইমাম।


রাত-দিন চোখ দুটি থাকে টেলিভিশনে
কাজের মেয়েকে রাখি খুব কড়া শাষনে।
ঘুম ভেঙ্গে সকালেই লাগে ‘বেড টি’
সাথে, ডাইনিং টেবিলে নাস্তা রেডী।
সাহেব অফিসে যান- সে কোন্‌ ভোরে!
ঘুমিয়ে থাকি যে আমি আরাম করে।
দুপুরের রান্নার আলাদা বুয়া
দুপুরে আমার চাই একটু শোয়া।
কি কি হবে রান্না হুকুম দিয়ে
বিছানায় আমি নিই একটু গড়িয়ে।
কাপড়টি ধুয়ে দেয় বুয়াটি ঠিকা
আধাশোয়া হয়ে পড়ি আমি পত্রিকা।
ভিসিআর-এ সাথে চলে হিন্দী ছবি
সিনেমা দেখা আমার আরেক ‘হবি’।
তার সাথে প্রতিদিন একটু সপিং
রক্তে আমার মিশে আছে মার্কেটিং।
সাহেব কামান টাকা- কালো নাকি সাদা
মাসের শুরুতে আমার বাজেট আলাদা।
তবু, সংসারের চাপে আমি উঠছি হাঁপিয়ে
একই সাথে কেন জানি যাচ্ছি মুটিয়ে।
পরতে পরতে ফ্যাট্‌, করি হাঁসফাঁস
সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে প্রাণ নাভিশ্বাস।
মেজাজটা দিন দিন হচ্ছে খারাপ।
গালাগালি ছাড়া দিতে পারিনা আলাপ।
সব রাগ ঝাড়ি আমি কাজের মেয়েকে
হেন-তেন কারনে মারধোরি তাকে।
কখনও আটকে রাখি, দিই না যে খেতে
মশারী ছাড়াই শোয়াই ঘরের মেঝেতে।
চুলের মুঠিটি ধরে দিই লাথি-ঝাঁটা
একই সাথে কেড়ে নিই বেতনের টাকা।
শাষন তাকেই করি, করি বিরামহীন
গৃহের কত্রী আমি, ক্ষমতা সীমাহীন।

আব্দুর রহমান আবিদ
রচনাকালঃ এপ্রিল, ২০১০

৯১৬ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “এলোমেলো রাজনৈতিক ছড়া- চার”

মওন্তব্য করুন : আব্দুর রহমান আবিদ (৮০-৮৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।