এলোমেলো রাজনৈতিক ছড়া- তিন

[আলোচিত বিষয়ঃ মাস্তান, আবারও রাজাকার, রাজনীতিবিদ]


বস্তির এপাশটা আমারই দখলে
ওপাশটা কানকাটা শুক্কুরের কবলে।
নীলক্ষেতের আধাআধি আমার আওতা
সাধ্যি কি কারো আছে দেয় ভাওতা?
কাঁটাবন পার হলে পিচ্চি কামাল
পুরোটা সে একা নেয় ওঠে যত ‘মাল’।
আমি পাই সিকি ভাগ, জগলুর ‘বলাকা’
গালকাটা সুমইন্যা খায় পুরোটা ‘মল্লিকা’।
ভাগ করা আছে সবই, যার যার এলাকা
বুঝাপড়া মজবুত, ব্যবস্থা সব পাকা।
যার যার এরিয়াতে চলে চাঁদাবাজী
আপোষে শেয়ার করি, সেভাবেই রাজী।
পুলিশকে ভয় নেই, ভাগ নিয়ে সরে
ঝামেলা করলে বেশী, ধরি যে ওপরে।
লাইনটা ঠিকঠাক আছে বহুদূর
ফোন এলে ছেড়ে দেয় করে সুড়সুড়।
থানা-জেল-হাজতে যাই আর আসি
‘ইঁদুর-বিড়াল’ খেলতে বড় ভালবাসি।
এলাকার ত্রাস আমি, করোনা বিভ্রাট
মাস্তান আমি এক, মুকুটহীন সম্রাট।


চেহারাটা নিরীহ, ছাঁটা গোঁফ-দাড়ি
টুপী-মুপীর খুব একটা ধার না যে ধারী;
পাঞ্জাবী, জোব্বা এ্যাভয়েড করি
প্যান্ট-শার্টই বরাবর আমি যে পরি।

বিলকুল নই আমি টিপিক্যাল হুজুর
দুনিয়ার লাইনে ওঠা বহুদূর;
প্রশাসন, ব্যাংক কিম্বা সচিবালয়
কোন্‌ পেশা বাকি আছে? যেথা আমি নাই!

নামাজটি কম পড়ি, রোজাতে দুর্বল
ঈমানের বেলায় কিন্তু বেজায় সবল।
কখনও ‘ভোকাল’ আমি, কখনও চুপচাপ
শিখিনি শিথিল হতে, করিনাকো মাফ।

জাতীয়তাবাদী আমি কভু কিন্তু নই
‘ব্লেন্ড’ হওয়ার সুবিধা, ফায়দাটি লই।
পাই যদি সুযোগ আমি করতে যে ‘কিক’-
তবে প্রথমেই বিএনপি, পরে আওয়ামীলীগ।

চোখ বুজে ফলো করি দলের কমান্ড
‘ফুল্‌ফিল্‌’ করি যত ওনাদের ডিমান্ড।
চাইনা ব্যাখ্যা আমি- কি ভুল, কি ঠিক
দোহাইটা ধর্মের, যা বলে সঠিক।

কে বলে একাত্তরে করেছিটা ভুল?
কোন্‌ শালা দিতে বলে আমাকে মাশুল?
ক্ষমতায় কোনোভাবে যদি যেতে পারি
ঘরে ঘরে আটকাবো আগে দুই নারী।

ইসলামী জোশে দেব জিহাদী ভাষন
তার সাথে কায়েম হবে জামাতী শাষন।
হাত-পা’র রগ কেটে কবচিবো জান
মডেলটি সামনেতে আছে তালিবান।

জমিনে দাঁড়াবো আমি, করে ছারখার
কাফের, মুনাফেক যত মেরে একাকার।
ভয় তুমি কেন পাও? করো হাহাকার?
চোখ বুজে বিশ্বাসো; আছি, আমি ‘রাজাকার’।


টাকা-কড়ি ঢের আছে, যা নেই- তা ‘নীতি’
সোৎসাহে ফুলটাইম করি রাজনীতি।
এলাকায় আছে নাম, লোকজনে চেনে
সালিশ-ফালিশে সবাই কথাখানা মানে।
বিপদে-আপদে শোনাই কথা মমতার
মনেতে লুকোনো আছে, লোভ ক্ষমতার।
সদস্য হয়ে দলে ঢুকি সুঁচ হয়ে
এর কথা ওকে দিই সদাই লাগিয়ে।
দলাদলি, কোন্দলে সুযোগ আসে খাঁসা
আমাকেই ‘চুজ্‌’ করে- হাইকমান্ডের মিমাংসা।
দল করি ফাও নয়, লক্ষ্য ঠিক অতি
সাধারন সম্পাদক কিম্বা সহ-সভাপতি।
পেয়ে যাই পদখানা খাঁটিয়ে যে ব্রেইন
টার্গেট এর পরে- উপজেলা চেয়ারম্যান।
সিঁড়ি বাই তরতর- একে একে পদ
সহজেই পৌঁছে যাই- স্বপ্নের সংসদ।
এরই নাম উত্থান- কারো হার, কারো জিত
উঠে আসি সফল আমি- এক ‘রাজনীতিবিদ’।

আব্দুর রহমান আবিদ
রচনাকালঃ এপ্রিল, ২০১০

১,৫৮২ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “এলোমেলো রাজনৈতিক ছড়া- তিন”

মওন্তব্য করুন : আব্দুর রহমান আবিদ (৮০-৮৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।