বিডিআর বিদ্রোহ ও রাজনীতির কচড়া

[মুখবন্ধঃ ছড়াটা লেখা শুরু করেছিলাম বিডিআর বিদ্রোহের মর্মান্তিক ঘটনার কিছুদিন পরপরই, যদিও সেসময় পুরোটা শেষ করা হয়নি। যে কোনো কারনেই হোক, সেসময় ই-ফোরামগুলোতে প্রকাশের জন্যে ছড়াটা কেন জানি পাঠানো হয়নি। সম্প্রতি কম্পিউটারে আমার পুরোনো লেখার ফোল্ডারগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে হঠাৎ করেই ছড়াটা খুঁজে পেয়ে মনে হলো ই-ফোরামগুলোয় প্রকাশের জন্যে ছড়াটা পাঠানো উচিত, যদিও ঘটনাটা ইতিমধ্যেই অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। আরেকটা কথা, আমার এ ছড়াটা কোনো রাজনৈতিক মোটিভেশন থেকে রচিত নয়। ব্যক্তিগত পছন্দ ও রাজনৈতিক মতাদর্শের কারনে আমি যদিও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন নীরব বা মৌন সমর্থক, কিন্তু আমার ব্যাক্তিগত বিচারে পিলখানায় বিডিআর কর্তৃক শতাধিক সামরিক অফিসারকে হত্যা করা ও খুনীদের অবাধে পালিয়ে যাওয়া প্রকারান্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের চরম অদূরদর্শিতা, নির্বুদ্ধিতা ও সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় বহন করে। রাজনৈতিক মতাদর্শের কারনে একজন আমেরিকানের আমেরিকার ‘রিপাবলিকান পার্টি’কে সমর্থন করার অর্থ যেমন এই নয় যে, বুশ ও বুশ-প্রসাশনের সব বিষয়কেই অন্ধের মত সমর্থন করা- ব্যাপারটা অনেকটা সেরকম। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক দর্শনও খানিকটা তাই। জানিনা বিএনপি সেসময় সরকারে থাকলে এর চেয়ে ভাল কিছু করতে পারতো কিনা। বিএনপি’র যে কোনো গোঁড়া সমর্থক হয়ত সাথেসাথেই জোর গলায় বলে উঠবেন- “অবশ্যই পারতো”। যদিও সঠিক করে কিছু বলা কঠিন যেহেতু বিএনপি সরকার পরীক্ষাটার সম্মুখীন হয়নি, তারপরও বুকে হাত দিয়ে নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করলে দেখবেন- ‘বিবেক মনে হয়না ততটা সাঁয় দেয়’।]

উৎসর্গঃ বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পরিবারকে

শতেক জনে বুদ্ধি দিলো- ‘সমস্যাটি ভারী’,
করলে দেরী না জানি কি হয়, তা কি বলতে পারি?
মানতে দাবী সমস্যা নেই, করুন আলোচনা।
আপোষ-টাপোষ যা খুশী করুন- মানা করছি না।
উপ-, প্রতি-, কিম্বা পুরো- মন্ত্রী যেগুন আছে,
যাকে ইচ্ছে পাঠান তাকে, তবু আপনি থাকুন পিছে।
করলে শুধু ওদের ওপর সবটিই ভরসা,
বিফল হলে মরবে মানুষ, রইবেনা বাঁচার আশা।

অভিজ্ঞতার থলে খালি, কথাবার্তায় ফাঁকা;
মন্ত্রী তিনি স্বরাষ্ট্র যে, চেহারা বোকাসোকা।
বয়স ভারে চলতে-ফিরতে কষ্ট ওনার অতি;
তবু তাকেই পাঠানো হলো- করতে এটার গতি।
রাতভর নাকি ছুটোছুটি করে সফল হলেন ভারী!
মুক্ত হলো ক’জন মানুষ? কর্‌-এ গুনতে পারি।
সেটুক নিয়েই গর্ব অতি নেত্রী মাননীয়া’র-
“আহা বেচারা! ঢের করেছে, দোষ দিওনা তার”।

‘স্থানীয় সরকার-পল্লী উন্নয়ন’ প্রতিমন্ত্রী যিনি,
নামের সাথে মিলটা রেখে ‘গণক’ বোধহয় তিনি।
সবাই যখন ঘাবড়ে গেল- ‘যাচ্ছে সময় বয়ে’!
উনি তখন গরম গরম বক্তৃতা যান দিয়ে।
শতেক আর্মি জিম্মি তখন, আটকা চারিধার;
বিদ্রোহীরা তখনও ভেতরে, হয়নি পগার পার।
বললো সবাই- “এখনই সময়, সিদ্ধান্তটা নাও”।
গণক সাহেব গণনা করলেন, “সময় বাড়িয়ে দাও”।

র‌্যাব-চিতা আর কোব্‌রা যত- বাহিনী ছিল যে রেডী,
সমর সাজে সাঁজোয়া বাহিনী গেড়েছিল ঘিরে ঘাঁটি।
পিলখানা ঘিরে হাজারো আর্মি করলো প্রতীক্ষা;
আসবে কখন নির্দেশ ওনার, শুধু সেটারই অপেক্ষা।
ধৈর্য্যের বাঁধ আর যে মানেনা, হচ্ছেটা কি ভেতরে?
নেতা-নেত্রীরা করছে আলাপ, মাখছে না কিছু গতরে।
‘পার করোনা রাতটি যেন’- শংকাটি মনে সবার;
নির্দেশ তিনি তবু না দিলেন, সময় গেল যা যাবার।

এক-এক করে দেড়টি দিন যে, গেল চলে পেরিয়ে;
ব্যূহ গলে সব খুনীরা অমনি চলে গেল পালিয়ে।
ছেলেকে হারিয়ে শূন্য হলো কত যে মায়ের বুক,
এক নিমেষেই কেড়ে নিল ওরা কত মানুষের সুখ!
স্বামীকে হারিয়ে কত যে বধু বিধবা হলেন অকালে!
বাবা হারানো সন্তানদের আহাজারি গেল বিফলে।
বিচারের আশায় বুক বেঁধে আজ বসে আছি যারা মোরা,
আখেরে হয়ত পাওয়ার খাতায় শূন্যই পাবো তারা।

নেতৃত্বের গাফিলতি আর নির্বুদ্ধিতার রূপ,
বিশ্বে তুমি আর পাবেনা কোথাও এমন প্রুফ।
ঘাড়টি ধরে মন্ত্রীগুলোরে বের করে হতো দিতে;
তা না, আত্মম্ভরে ঘুরছেন তারা বহাল তবিয়তে!
লাজ-লজ্জার বালাই তো নেই, যেন ‘শেম্‌লেস্‌ ক্রিয়েচার্‌স্‌’;
প্রধান যিনি, তিনিও কি খুব ‘ডিফ্‌রেন্ট দ্যান আদার্‌স্‌’?
শ্রষ্টাই জানেন আমাদের দেশে আসবে সেদিন কবে?
যেদিন, নেতা-নেত্রীরা বেশী কিছুনা- স্রেফ ভালমানুষটি হবে!!

পাদটিকাঃ ‘শেম্‌লেস্‌ ক্রিয়েচার্‌স্‌’ = shameless creatures
‘ডিফ্‌রেন্ট দ্যান আদার্‌স্‌’ = different than others

রচনাকালঃ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

১,৮০০ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “বিডিআর বিদ্রোহ ও রাজনীতির কচড়া”

  1. তৌফিক (৯৬-০২)

    সালাম ভাইয়া। ব্লগে স্বাগতম। আপনার আগের লেখাগুলো পড়েছি, কিন্তু মন্তব্য করা হয়নি।

    আমার ব্যক্তিগত মত হলো, বিডিআরের মর্মান্তিক ঘটনটাকে বিদ্রোহ বলাটা আমি ঠিক মেনে নিতে পারি না। বিদ্রোহী কবি, সিপাহী বিদ্রোহ - এসব পড়ে বড় হয়েছি বলেই হয়তো। আমি একে বিডিআর ম্যসাকার বা হত্যাকান্ড বলব। বিদ্রোহ শব্দটার স্পিরিট অনেক অনেক মহান।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তৌফিক (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।