রোড টু জার্মানী ৩

রোড টু জার্মানী
রোড টু জার্মানী ২

আজকের আলোচনার বিষয় জার্মানীতে এপ্লাই করার বিস্তারিত উপায়।

জার্মানীতে এপ্লাই করার জন্য একটি সাইট একাই একশ, এখান থেকে আপনি খুঁজে নিতে পারবেন আপনার পছন্দ মত বিষয়, লেভেল, ভাষা মাধ্যম এবং ইউনিভার্সিটি। সেই সাথে পাওয়া যাবে এপ্লাই করতে কি কি যোগ্যতা দরকার, খরচের ধারনা, এপ্লাই করার ডেডলাইনসহ অজস্র দরকারী তথ্য। সুতরাং মিডিয়ার দ্বারস্থ না হয়ে বরং এখান থেকে জেনে নিন সবকিছু, ঠিক যা যা আপনার চাই।

সাইটটির ঠিকানা এখানে (http://www.daad.de/deutschland/foerderung/stipendiendatenbank/00462.en.html )

আরেকটি দরকারী সাইট- http://www.dw-world.de/dw/0,,13795,00.html

আরো জানতে হলে – ঢাকাস্থ জার্মান কালচারাল সেন্টার (www.goethe.de/dhaka) অথবা জার্মান দূতাবাসের ওয়েবসাইট (www.dhaka.diplo.de) থেকে পাবেন জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার পর্যাপ্ত তথ্য।

বাংলাদেশী ছাত্ররা বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (BSA) গড়ে তুলেছে যা নতুন ছাত্রদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। BSA-এর ওয়েবসাইট www.bsa-germany.de

৯/১১ এর পরে যখন ইউ,এস,এ –র ভিসা সিস্টেম আমাদের মত মুসলিম দেশগুলোর জন্য কঠিন হয়ে গিয়েছিল, মূলত তখন থেকেই বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য ছাত্ররা জার্মানী যাওয়া শুরু করে।

ক) উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানী যেতে হলে প্রথমে দেখতে হবে পড়াশুনার কোন ধাপের জন্য জার্মানী যেতে চান,

১. ব্যাচেলর লেভেল ২. মাস্টার্স লেভেল, নাকি ৩. পি,এইচ,ডি লেভেল

খ) দ্বিতীয়ত দেখতে হবে কোন সাবজেক্টে পড়তে চান,

গ) তৃতীয়ত দেখতে হবে কোন মাধ্যমে পড়তে চান-

১. ইংরেজী নাকি ২.জার্মান

ক.১) ব্যাচেলর লেভেল
উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কেউ ব্যাচেলর লেভেলে ভর্তি হতে চাইলে তাকে জার্মান ভাষা কোর্সে ভর্তি হতে হবে। খুব কমসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে ইংলিশ ভাষায় কোর্স চালু আছে। প্রথম চেষ্টা করতে পারেন ইংলিশ ভাষায় পড়ানো হয় এমন কোনো subject-এ ভর্তি হতে। তা না পেলে দু’ভাবে ব্যাচেলর কোর্সে ভর্তি হওয়া যেতে পারে।

প্রথমত, বাংলাদেশে জার্মান ভাষার কিছু প্রাথমিক জ্ঞান নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য apply করুন। ভর্তি হতে পারলে এখানে এসে মূল কোর্স শুরুর আগে ছয় থেকে এক বছরের মধ্যে জার্মান ভাষার বাকি কোর্স করে ফেলুন। (recommended )

অথবা

সরাসরি বাংলাদেশ থেকে জার্মানির যেকোনো ভাষা শিক্ষা কেন্দ্রে apply করুন। ভর্তি হতে পারলে ভাষা শিক্ষার জন্য ভিসা পাবেন। এখানে এসে ভাষা শিক্ষা সমাপ্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার পছন্দের subject-এ ভর্তি হতে পারেন। তবে এই প্রক্রিয়া বেশ costly. (not recommended)
(এপ্লাই করার যোগ্যতা, ও অন্যান্য requirements সম্পর্কে জানা যাবে DAAD এর ওয়েবসাইট থেকেই )

ক.2) মাস্টার্স লেভেল
মাস্টার্স লেভেলে ইন্রেজী মাধ্যমে পড়ার জন্য যথেষ্ট পরিমান সাবজেক্ট পাওয়া যায় ।বর্তমানে প্রায় অর্ধশতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক বিষয়ে আন্তর্জাতিক মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্স চালু আছে। ধীরে ধীরে সব বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক বিষয়ে ইংরেজি মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাস্টার্স কোর্স চালুর পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

মাস্টার্সে ভর্তির জন্য প্রথমে কোনো কোনো ভার্সিটিতে আপনার সাবজেক্ট আছে তার তালিকা তৈরি করুন। আপনার যোগ্যতা (যেমন¬ রেজাল্ট, TOEFL/IELTS ইত্যাদি) পুরোপুরি খাপ না খেলেও apply করুন।
(এপ্লাই করার যোগ্যতা, ও অন্যান্য requirements সম্পর্কে জানা যাবে DAAD এর ওয়েবসাইট থেকেই )

ক.৩) পি,এইচ,ডি লেভেল
পিএইচডি’র জন্য সরাসরি apply করতে পারেন। ভার্সিটির ওয়েবসাইট থেকে আপনার সাবজেক্ট সংশ্লিষ্ট ফ্যাকাল্টির ইনস্টিটিউটগুলোর তালিকা তৈরি করুন।যদিও জার্মান বা ইউরোপীয় মাস্টার্স ডিগ্রি না থাকলে সরাসরি পিএইচডিতে নিতে চান না।
অনেক ইংলিশ ভাষাভাষী Scholarship নিয়ে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি Self Finance পিএইচডি করার সুযোগ থাকলেও জার্মানিসহ অনেক ইউরোপীয় দেশ এই নিয়মের ব্যতিক্রম। এখানে পিএইচডি পর্যায়ের সব ছাত্রই প্রায় চাকরির সমপরিমাণ বৃত্তি বা বেতন পেয়ে থাকেন। কিন্তু এসব সুযোগ বিজ্ঞান বা প্রকৌশল বিষয়ের ছাত্রদের জন্যই বেশি।
(এপ্লাই করার যোগ্যতা, ও অন্যান্য requirements সম্পর্কে জানা যাবে DAAD এর ওয়েবসাইট থেকেই )

বি.দ্রঃ ছাত্রদের দৈনন্দিন কাজের প্রয়োজনে ব্যবহারিক জার্মান ভাষা শিক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কোর্সগুলোতে জার্মান ভাষার কোর্স বিনামূল্যে শেখানো হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খণ্ডকালীন ছাত্র চাকরি বা পিএইচডি গবেষণার জন্য জার্মান ভাষা তেমন একটা জরুরি নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে পার্টটাইম কাজের জন্য জার্মান ভাষা জানা জরুরি।

ইউনিভার্সিটিতে নিজ খরচে পড়তে যেতে চাইলে সহজেই চান্স পাওয়া যায়, তবে কেউ যদি স্কলারশীপ পেতে চান তাহলে DAAD (www.daad.de) জার্মান সায়েন্স ফাউন্ডেশন (DFG), জার্মান শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের (BMBF, www.bmbf.de) এসব ওয়েবসাইটে আপনাকে ব্যাপক সার্চ করতে হবে।

ইন্টারনেটই আপনার সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী। কোনো মিডিয়া সেন্টার নয়, সরাসরি আপনি নিজেই চেষ্টা করুন ভর্তির জন্য। প্রথমে সব ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটগুলোর তালিকা করুন, বিশেষ করে ইংলিশ ভার্সনগুলোর। যত বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে apply করবেন, আপনার চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা ততই বেড়ে যাবে। জার্মান ইউনিভার্সিটিতে কোন এপ্লিকেশন ফি নেই, যার জন্য কাগজপত্র পাঠানো ছাড়া আর কোন বাড়তি খরচ নেই। (যেখানে ইউ,এস,এ কিংবা কানাডায় এপ্লাই করতেই অফেরতযোগ্য ১০০ ডলার এপ্লিকেশন ফি দিতে হয়)

এবার আসি জার্মানীর এডুকেশন সিস্টেমে।

জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার প্রায় ৩০০ ইনস্টিটিউশন রয়েছে। এর মধ্যে ৮২টি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩৬টি অ্যাপ্লাইড বিশ্ববিদ্যালয় এবং মিউজিক ও ফাইন আর্টবিষয়ক ৪৬টি কলেজ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ২০ লাখ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ১২ শতাংশ বিদেশী। বিদেশীদের মধ্যে আবার ৯ শতাংশই পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা জার্মানিতে শেষ করেছেন। গত ১৫ বছরে জার্মানিতে বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে।

উচ্চশিক্ষার জন্য এখানে তিন রকম ইউনিভার্সিটি আছে-

১. University (যেগুলো বাংলাদশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মত, বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য সব বিভাগই আছে):

প্রথম ভাগে আছে নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়, যেগুলো মূলত ইউনি (Uni) হিসেবে পরিচিত। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্যসহ সব অনুষদই পড়ানো হয়। আকারে ইউনিগুলো বড় হয়ে থাকে।

২. Technical University (বাংলাদশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য):

দ্বিতীয়ত টেকনিক্যাল বা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (Technical University), যেখানে প্রকৌশলসহ বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলো পড়ানো হয়। সাথে সাথে রয়েছে ব্যাপক গবেষণামূলক প্রকল্প।

৩. University of Applied Sciences (Hochschule/ Fachochschule) – ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এর পর্যায় পরে:

তৃতীয়ত অ্যাপ্লায়েড বিশ্ববিদ্যালয় (University of Applied Sciences)। Hoch শব্দের অর্থ High আর schule হল স্কুল । মানে দাঁড়াচ্ছে হাই স্কুল , অর্থাৎ কলেজ । আর Fach এর অর্থ Trade বা Specialized Hochschule কলেজ/হাই স্কুল। যেখানে ছাত্রদের মূলত চাকরি অরিয়েন্টেড (Job-oriented) বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়। গবেষণামূলক কাজ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না বললেই চলে।

সুতরাং এপ্লাই করার আগে বুঝেশুনে এপ্লাই করুন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিষয় নির্ধারণের ব্যাপারে আপনাকে বুদ্ধিমান হতে হবে। আপনার টার্গেট যদি হয় শুধু মাস্টার্স বা পিএইচডি শেষ করে দেশে ফিরে যাওয়া তাহলে যেকোন সাবজেক্ট আপনি চয়েস করতে পারেন। আর যদি মাস্টার্স শেষ করে পিএইচডি করতে চান বা জার্মানীতে জব (Job)করতে চান তাহলে ট্রেডিশনাল সাবজেক্ট চয়েস না করে যুগোপযোগী সাবজেক্ট চয়েচ করতে হবে।
চাকরির ক্ষেত্রে জার্মান ভাষা জানা থাকলে বাড়তি সুবিধা এবং চাকরি পাওয়া সহজ হয়। জার্মানিতে অবস্থিত বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে জার্মান ভাষা জানা জরুরি নয়।

সুতরাং যেভাবেই এপ্লাই করুন না কেন, জার্মান ভাষা শেখা থাকলে সবখানেই সুবিধা পাওয়া যাবে। তাই পারলে জার্মান ভাষাটা আগেভাগেই শিখে ফেলুন।

( চলবে নাকি চলবে না?? )

৪,০০৪ বার দেখা হয়েছে

৩৩ টি মন্তব্য : “রোড টু জার্মানী ৩”

  1. আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

    আবেদিন এর সাথে আমি প্রায় সম্পূর্ণ একমত। শুধু Hochschule/ Fachochschule এর ব্যাপার টায় দ্বিমত পোষণ করছি। Hoch শব্দের অর্থ High আর schule হল স্কুল । মানে দাঁড়াচ্ছে হাই স্কুল , অর্থাৎ কলেজ । আর Fach এর অর্থ Trade বা Specialized Hochschule কলেজ/হাই স্কুল। তবে কোন ভাবেই আমাদের পলিটেকনিক এর category তে পরে না। কারন ওখান থেকেও বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি প্রদান করা হয়।বরং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এর পর্যায় পরে। (আমার University 'র নাম ও Universitat Gesamt Hochschule Paderborn ছিল ,Gesamt অর্থাৎ সমষ্টি )।
    দ্বিতীয়ত আরেকটা ব্যাপার এখানে উল্লেখ্য : যারা HSc পাশ করে সোজা ভর্তি হতে চায় তাদের জন্য। জার্মান দের ইন্টারমিডিয়েট (Abiture) ১৩ স্কুল বছর এর পর, আর আমাদের ১২ বছর শেষে। এই নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়। They sometime wants "Completion of 13 School Year." এটা মাথায় রাখা ভাল। Best Regards,- Azizul Hakim/FCC/1972~78.


    Smile n live, help let others do!

    জবাব দিন
    • আবেদীন (২০০০-২০০৬)

      ভাইয়া,
      আমি এখনো জার্মানী যাইনি (সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবরে যাব)।আমি যা কিছু লিখেছি, বাংলাদেশে বসে যতটুকু জেনেছি তা থেকে লিখেছি।
      সুতরাং আমার ভুল হওয়াই স্বাভাবিক।
      আপনার ইনফর্মেশনগুলো খুব তাড়াতাড়িই আপডেট করে দেব।

      আপনার ইনফর্মেশনের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

      জবাব দিন
    • আবেদীন (২০০০-২০০৬)

      ছয় মাস এয়ারলাইন্সে চাকরি করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতেছি,
      বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে,এরোনটিক্যালের পড়াশুনা না বাড়িয়ে যত তাড়াতাড়ি কজে ঢুকে পড়া যায় ততই ভালো। এই লাইনে ভালো পজিশনে যেতে, দীর্ঘ পড়াশুনার চেয়ে কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বেশী দরকারী।

      জবাব দিন
  2. শান(০৩-০৯)

    মাত্র ত 2nd semester শুরু করব...... জব আ ঢুক্মু কেম্নে???আত তারাতারি আমারে ক চাকরি দিব???/ আমার sub choose আ কি ভুল হইল???
    ভাই্‌আপ্নি ত দেখি সব জানেন... :boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :thumbup: :thumbup: :thumbup: :thumbup: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute::
    আপনার mob num টা kindly দেন.i need urgently ur suggestion...

    জবাব দিন
  3. আবেদীন (২০০০-২০০৬)

    এয়ারলাইনসের চাকরিতে লিংক লাগে...এমন কথা শুনিনি কখনো...AME(Aircraft Maintenance Engineer) ডিপার্টমেন্টে আমার ব্যাচের ৪ জন চাকরিতে ঢুকেছে, যাদের এয়ারলাইনসে কোনই জানাশুনা লোক ছিল না।
    পুরাটাই নির্ভর করতেছে চাকরির বাজারের উপর।
    যেমনঃ এই বছরে প্রচুর লোক নেয়া হয়েছে। তুমি পাস করার বছরে ডিমান্ড ক্যামন থাকবে তা তো এখন অনুমান করা যাচ্ছে না।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফরিদ (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।