‘ওয়ার্ল্ডকাপ নামা’

রেইনিং ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নরা কেন নেক্সট ওয়ার্ল্ড কাপ নিতে পারে না ??

৯৮ থেকে মোটামুটি ভালভাবে ওয়ার্ল্ড কাপ দেখি, তখন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কোন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নকে নেক্সট ওয়ার্ল্ড কাঁপে চ্যাম্পিয়নের মত খেলতে দেখি নাই। ৯৮ এর চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ‘০২ তে ফার্স্ট রাউন্ড থেকেই বাদ, ‘০২ এর চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ‘০৬ এ কোয়ার্টার থেকেই বাদ, ‘০৬ এর চ্যাম্পিয়ন ইটালি ‘১০ এ ফার্স্ট রাউন্ড থেকেই বাদ, ‘১০ এর চ্যাম্পিয়ন স্পেনের অবস্থা ‘১৪ তে এসে মোটেও ভাল ঠেক্তেছে না ! জিনিসটা আসলে কো- ইন্সিডেন্স বা কাকতাল মনে হলেও মোটেও কাকতাল না, একটু ভালভাবে এনালাইসিস করলেই ব্যাপারটা বোঝা যায় ।।

মুখে আমরা যত যাই বলি না শেষ পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড কাপের বেষ্ট টীম ই শিরোপাটা নিয়ে যায়, এর বাতিক্রম তেমন একটা ঘটে না। কোন একটা টিম তখনই ওয়ার্ল্ড কাপ জেতে যখন তাদের ‘কি-প্লেয়ার’ রা সহ টিমের বেশির ভাগ প্লেয়ার তাদের’ পিক অফ লাইফ’ ফর্মে থাকে। কিন্তু ফুটবলারদের এই ফর্ম হয় খুবই ক্ষণস্থায়ী। ৯৮ এ জিদান তো ছিলই, পাশাপাশি ডেশাম,থুরাম,বারথেজ, লরেন্ত ব্লাঙ্ক, পেতিত, লিজারাজু, অরি রা সবাই তাদের লাইফের পিক ফর্মে ছিল। ওয়ার্ল্ড কাপ জেতার পর এই চ্যাম্পিয়নদের স্ট্যাটাস এলিভেটেড হয়ে তাদের পার্সোনাল রেপুটেশান লিজেন্ডারি লেভেলে চলে যায়, তাই কোন ম্যানেজারের পক্ষে এত হাই স্ট্যাটাসের প্লেয়ারদের বাদ দিয়ে নেক্সট ওয়ার্ল্ড কাপের বেষ্ট ইলেভেন সিলেকশান করা পসিবল হয় না, যদিও তার হাতে হয়ত বেঞ্চে বেটার অপশন থাকে ! ফ্রেশ ব্লাড আর ইয়াং স্পিরিট ছাড়া ফুটবলে বড় ম্যাচ জেতা সম্ভব না। ২০০৬ এ ব্রাজিল  ফুলেফেপে ঢোল হওয়া রোনালদোকে বসাতে পারে নাই, রেপুর জন্য সম্ভব হয় নাই, সেই মূল্য চুকাইতে হইছে ভালভাবেই, ইতালিরও নেক্সট কাপে একই দশা হইছে । বুড়া হাড় দিয়ে ছোট খাট ম্যাচ জেতা গেলেও আর যাই হোক, ওয়ার্ল্ড কাপ জেতা যায় না । কেউ পারেও নাই ।

এবারের স্পেনের টিমের সেই ‘হাজার বছরের পুরানো’ রোগে ধরছে, লিজেন্ড দের রেপুটেশান অগ্রাহ্য করতে না পারার রোগ। স্পেনের সাইডবেঞ্চ দিয়েই ওয়ার্ল্ড কাপ জেতার মত টিম হয়ে যায়, কিন্তু বেষ্ট ইলেভেনে খেলতেছে জাভি, এলান্সো, ক্যাসিয়াস দের মত বুড়া ঘোড়ারা , যারা তাদের সেরা ফর্মকে পেছনে ফেলে এসেছে কিন্তু রেপুটেশানের জোরে টীমে রয়ে গেছে। আজকে বেষ্ট ইলেভেন চেঞ্জ করে কোকে, ফ্যাব্রিগাস,মারটিনেজ আর উইং এ পেড্রো কে নামাক, খেলা চেঞ্জ হয়ে যেতে বাধ্য। কিন্তু এই হার্ড চয়েস ডেল বস্ক নিতে পারে কিনা তার ওপরই ডিপেন্ড করতেছে স্পেন এর ফিউচার।

এক্সসেপশান যে ছিল না তা না। ‘৯৮ এর জিজু ০৬ এ ব্যাক করে দলকে ফাইনালে তুলে আনছে, ‘০৬ এর পিরলো এখনও দাপটের সাথে খেলতেছে । কিন্তু জিজু বা পিরলোর মত প্লে-মেকাররা বছর বছর জন্মায় না, জেনারেশানে হয়ত একজন আসে। জাভি আর যাই হোক, জিজু বা পিরলো না ।

স্পেনের মত হট ফেভারিট একটা টিমের এই দুর্দশা দেখতে ভাল্লাগতেছে না । ডেল বস্ক কি হার্ড চয়েস নিতে পারবে ??

১,৩১১ বার দেখা হয়েছে

৭ টি মন্তব্য : “‘ওয়ার্ল্ডকাপ নামা’”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    এখন যেহেতু ব্যাগ গোছানো লাগছেই। সম্ভবত পরিবর্তন ছাড়া আর উপায়ও নেই।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    স্পেন কিন্তু ঠিক এক বিশ্বকাপে হারিয়ে যাওয়া দল না, ওদের এই গোল্ডেন জেনারেশন জ্বলে ওটাহ শুরু করেছিল আসলে ২০০৭ এর দিক থেকে, এরপর ২০০৮ এর ইউরো, ১০ এর বিশ্বকাপ আবার ১২ এর ইউরো।

    তবে নিঃসন্দেহে এবারের বিশ্বকাপে হারের পিছনে ডেল বস্কের পুরোনোদের আকড়ে ধরাকেই দোষ দিব। এর আগের ফ্রান্স, ইতালি বা ব্রাজিলের ক্ষেত্রে কিন্তু ঘটনাটা এরকম ছিল না, ০৬ এর রোনাদোর কথা বলছো ও কিন্তু ঐ অবস্থা থেকেও ৫ ম্যাচে ৩ গোল করেছিলো আর ওর থেকে বেটার অপশন কে ছিল তখন ব্রাজিলের?


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. নাফিস (২০০৪-১০)

    এছাড়াও আরেকটা কারন বলবো একটা পার্টিকুলার প্লেয়িং স্টাইল এর প্রতি অন্ধ বিশ্বাস। ওদের কোনো প্ল্যান বি ছিলো না.. এই টিকি তাকার প্রতিষেধক টিকা সবাই বের করে ফেলেছে। এই অবস্থায় গোড়ার মতন একই প্যান পেনে পাসিং গেম খেললে কোন লাভ নাই.. দেল বস্ক এতলেটিকো মাদ্রিদের প্লেয়ার দের ইউটিলাইজ করতে পারেনি। ঘরোয়া লীগের একটা দলকে প্রাধান্য দিয়ে টিম করা স্পেন এর অনেক পুরনো ট্রেডিশন। গত কয়েক বছরে বার্সার প্লেয়ারদের দাপট ছিল.. সেটা খুব লজিকাল। কিন্তু এই সিজনের পরে দেল বস্কের উচিত ছিল গাবি ও কোকেকে মিড এ আরো সুযোগ দেওয়া :/

    জবাব দিন
  4. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    বিশ্বকাপ জিতে লিজেন্ড আগেও হতো কিন্তু খেলায় থেকে টাকা পয়সা উপার্জনের ব্যাপারটা, ঐ টাকার যোগানদারদের চাপটা এত ছিল না যা এখন আছে।
    এর বাইরে যেসব ব্রান্ডের ওরা ব্রান্ড এমবেসেডর সেগুলার চাপও থাকে।
    সব মিলিয়ে বেশিরভাগ খেলোয়াড় যে বার্ণ আউটের মধ্য দিয়ে যায়, সেটা এখনকার দিনে এক বিশ্বকাপের বেশী ধরে রাখা যে যাচ্ছে না, এটাই আসল কারন।
    এতসবের মধ্যে পড়ে কোচেরও হাওয়ায় গা ভাসানো ছাড়া গতি থাকে না।
    কারন লিজেন্ডদের বাদ দিয়ে দল করে সেই দল যদি হারে, দোষ পুরোটাই যাবে কোচের দিকে।
    আর লিজেন্ডদের রেখে দল করে সেই দল যদি হারে, দোষ ভাগাভাগি হয়ে যাবে কোচ আর লিজেন্ডদের মধ্যে।
    কোচ কেন সেইফ প্লে করবে না?
    আফটার অল সেতো একজন বেতনভূক কর্মচারিও...

    তোমার মূল ধারনাটা ঠিকই আছে। আমি ওটায় একটু অগমেন্ট করলাম।


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোকাব্বির (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।