……আরও কিছু সিসিসি ডায়লগ

……ক্যাডেট কলেজের ৬ বছরে প্রত্যেক ক্যাডেট কতই না আজব আজব ডায়লগ এর সন্ধান পায়। আর এই নিয়ে লেখাও হয়ে গেছে প্রচুর। আরও কিছু ডায়লগ মনে পড়ল, ভাবলাম শেয়ার করি।

১. এস এস সি র লম্বা ভ্যাকেশন কাটিয়ে ক্লাস ইলেভেনে ব্যাক করলাম ১৯ইনটেক। ডিসিপ্লিনের অবস্থা তখন যা হয়। তাই এ্যাড্জুটেন্ট স্যার ক্লাসের সবাইকে ডাকলেন অডিটরিয়ামে। আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন আমাদের সমস্যা কোথায়। আমরা সবাই চুপ-চাপ জন্য স্যার নিজেই বলে উঠলেন, “তোমাদের ক্যাডেটদের নিয়ে বিরাট ঝামেলা। নিজেরাই বুঝতে পার না, কি যে চাও। তোমরা গার্লফেন্ড খুঁজে বেড়াও শর্ট স্কার্ট টাইপ, আর বউ খুঁজে বেড়াও বোরকা টাইপ।”

২. সিসিসি এর জনৈক রসায়ন স্যার(যথেষ্ট ভীতু হিসেবে পরিচিত) নাইট ডি এম হিসেবে রাউন্ড দিচ্ছিলেন রাত ২টার সময়ে। আজিজুল সে সময় যাচ্ছিল বাথরুমে। ঘুমের ঘোরে হেলে-দুলে যাওয়ার সময় মোড় ঘুরতেই সেই স্যারের সাথে ধাক্কা। আজিজুল এর কানে ভেসে এল স্যারের তীব্র আর্তনাদ।

ঘটনা বুঝে উঠে স্যার এসে আজিজুল এর হাত ধরে বললেন, “বাবা, ভয় পাইছ”?
আজিজুল স্যারের মনের ভাব বুঝে জবাব দিল, “জ্বী স্যার, পাইছি”।
এবারে অভয় দেয়ার ভঙ্গিতে স্যার বলে উঠলেন, “বাবা, অসুবিধা নাই; আমিও পাইছি”।

৩. একই স্যারের ঘটনা। স্যার আবার মাঝে মাঝে গান গাইতেন। একদিন ২১শে ফেব্রুয়ারীর সকালে নগ্নপদে হণ্টন এর পর অডিটরিয়ামে জমা হলাম আর স্যার গান গাইতে উঠল। গানের কথা ছিল, “যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক, আমি তোমায় ছাড়ব না মা”। ঠান্ডায় ক্যাডেটদের এমনিতেই অনেক কষ্ট হইছে, তার উপর এই ঠান্ডা গান কোন ক্যাডেটেরই পছন্দ হল না। অডিটরিয়ামের সকল ক্যাডেট তাই গানের প্রাণ ফিরিয়ে আনল স্যারের সাথে গলা মিলিয়ে, কিন্তু ক্যাডেটীয় বুদ্ধিতে গানের কথায় একটু পরিবর্তন এনে। ক্যাডেটরা গানের ‘ছাড়ে ছাড়ুক’ অংশটিকে পরিবর্তন করে করে দিল, ‘স্যারে ছাড়ুক’।
……গানের পুরো অংশেই সবাই চুপ। শুধু সেই অংশেই ৩০০ ক্যাডেট একসাথে চিল্লাইয়া উঠে, ‘স্যাআআআরে ছাআআআড়ুক’। সমগ্র অডিটরিয়ামে সেই একই আওয়াজ। আড়চোখে পিছনে তাকিয়ে দেখি, এ্যাড্‌জুটেন্ট আর প্রিন্সিপ্যাল স্যারও মুখ চেপে হাসতেছেন।

৪. তিতাস হাউসে আমাদের হাউস বেয়ারা ছিলেন ইউনুস ভাই। বিরাট ভাব-চক্কর নিয়ে চলা-ফেরা করতেন। উনাকে একটু তেল মেরে কথা বললে সিরামমম খুশি হতেন এবং অনেক কাজ করে দিতেন। আমার রুমে আমরা চার জন মিলে কার্ড খেলছিলাম। উনি এসে বললেন, ‘কাজটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না’। আমরা তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলাম, “আরেহ, বস্ ইউনুস ভাই দেখি। হাউস মাস্টার-ডিউটি মাস্টার কেউ নাই, আপনি এত কড়া হলে হয় নাকি ভাই?” এর উত্তরে স্মিত হাসি দিয়ে উনি বলে উঠলেন, “কে বলছে, হাউস মাস্টার নাই? B-) হাউস মাস্টার এর অনুপস্থিতিতে আমিই তো হাউস মাস্টার”। উল্লেখ্য, কার্ড খেলার ঘটনাটি আর রিপোর্ট হয় নাই।

৫. ক্যাডেট কলেজ এ স্যারদের সম্পূর্ণ নামের প্রথম লেটার নিয়ে নামীয় সংকেত তৈরি করে ডিউটি মাস্টার লিস্টে দেওয়া হত। এই কারণে ইসলাম শিক্ষার শ্রদ্ধেয় রুহুল আমিন মোক্তার স্যারের নাম ছিল, RAM. উনি পরে চলে যান এসসিসি তে। উনার স্থান পূরণ করতে সিসিসি তে জয়েন করেন শ্রদ্ধেয় খোরশেদ আলম খান স্যার। সংক্ষেপে KAK.

৬. ক্যাডেটদের মুখে মুখে স্যারদের নাম হরহামেশাই বিবর্তিত হয়ে যেত। শ্রদ্ধেয় আবু জামাল স্যারের নামটি বিবর্তিত হয়ে দুই রকম হয়ে গিয়েছিল। বিবর্তনের ধাপ দুইটি এ রকমঃ
ক. আবু জামাল > আবুজ মাল > আবুঝ মাল > অবুঝ মাল
খ. আবু জামাল > আজু বামাল > আজুব মাল > আজব মাল

৭. রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের আমার ক্লাসমেট নিস্তার আহমেদ সেই বাইচ্চাকাল থেকে আমার বন্ধু। ক্যাডেট কলেজের ভ্যাকেশনগুলো সব সময় একসাথে থাকতাম। ওর একটা ব্যাপার ছিল, ও সব সময় আরসিসি কে সিসিসি এর চাইতে বস প্রমাণ করার চেষ্টা করত; তা প্রয়োজনে চাপা মেরে হলেও। এই যেমন একদিন আমি বললাম, “জানিস, আমাদের কলেজের এ্যাড্জুটেন্ট স্যার এত ছোট হাফপ্যান্ট পরে আসে যে আর একটু হলেই সব দেখা যেত”। তো নিস্তার কি আর হারতে পারে, শাহী ক্যাডেট বলে কথা(আরসিসি ভাইয়েরা মাইন্ড কইরেনা না প্লীজ)। সে বলে উঠল, “আরেহ এ আর এমন কি? আমাদের এ্যাড্জুটেন্ট স্যারের হাফপ্যান্ট পামেলা অ্যান্ডারসনকে দিলে সে তা পরে বীচ্ ভলিবল খেলতে রাজী হবে না; কারণ তাতে তার ইজ্জত ঢাকবে না”।

৮. বিএমএ এর একটা ঘটনা শেয়ার করি। আমার কোর্সমেট ছিল খান। সেই শুরুর দিন থেকে স্টাফরা ওকে দেখলেই মজা করে, “খান সাহেব, আপনি কি খান”? এই নিয়ে বেচারার মনে অনেক দুঃখ ছিল। তো যাই হোক, সেকেন্ড টার্ম এ উঠার পর নতুন একজন স্টাফ আসলেন, হালিম স্টাফ। জিসি অফিস এর সামনে দিয়ে একদিন আমি আর খান মার্চ করে যাচ্ছি; পিছনে শুনি হালিম স্টাফ চিল্লাইয়া উঠল, “খান সাহেব, আপনি কি খান”? সবাইকে অবাক করে দিয়ে পিছনে তাকিয়ে খান বলল, “স্টাফ, হালিম খাই……হালিম”।

৯. আমার ক্লাসমেট সাজমুল নিতান্তই সহজ-সরল ভাল ছেলে। পোলাপাইন ওরে প্রচুর জ্বালাইত। আমাদের জুনিয়র ইমরুল এর নামের সাথে ওর নামের বেশ মিল। একটা ছড়া বানানো হল ওদের নাম মিলিয়ে।
……সাজমুল ইমরুল,
……একই গাছে দুই ফুল,
……দুই জনে করছে কি ভুল।
তো সবাই এই ছড়া বলে ওকে জ্বালায়। একদিন সালেহ একটু বেশিই করে ফেলছিল। সাজমুল তখন মহা বিরক্ত। তাই সালেহ যখন মজা করে আবৃত্তি করল,
……সাজমুল ইমরুল,
……একই গাছে দুই ফুল,
……দুই জনে করছে কি ভুল।
সাজমুল তখন আরও একটা লাইন যোগ করে দিল এর সাথে,
……সালেহ তাদের ভুলের মাশুল।
(জানের ভয়ে নামসমূহ পরিবর্তিত)

৫,৭৯৩ বার দেখা হয়েছে

৫৩ টি মন্তব্য : “……আরও কিছু সিসিসি ডায়লগ”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    এই শীতের মইধ্যে দৌড়াদৌড়ি কইরা আইসা মেজাজটা বিলা হয়া গেছিলো- এই লেখা পইড়া হাসতে হাসতে মন ভালো হয়া গেলো...যাহ,আগামী ২০০০০ সেকেন্ড আব্দুলের পাঙ্গা মাফ B-)

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ (০৪-১০)

    আমরা কলেজ থেকে আসার কিছুদিন আগে আগে একদিন রাত তিনটার সময় dm room এর সামনের ঘণ্টা বাজানোর শখ জাগসিল একজনের।সে মনের সুখে বাজাচ্ছিল আর গান ধরসিল
    খলা বাবা কলা খাবা গাছ লাগায়া খাও(dm এর নাম ছিল খলিল)!!!!!
    হটাৎ সে অনুভব করল খলা বাবা রুম থেকে বের হয়ে তার পিছনে দাড়িঁয়ে আছে।তারপর সেও দৌড় আর স্যারেও দিসে দৌড় একেবারে ১০০ মি. স্প্রিন্ট।যারা সেই জিনিষ দেখসিলাম তারা এখন ভুলতে পারি নাই। অবশ্য সেই বেচারারে স্যার ধরতে পারে নাই। :)) :)) :)) :))


    জুনায়েদ

    জবাব দিন
  3. রিয়াজ (৯৮-০৪)

    "আমাদের এ্যাড্জুটেন্ট স্যারের হাফপ্যান্ট পামেলা অ্যান্ডারসনকে দিলে সে তা পরে বীচ্ ভলিবল খেলতে রাজী হবে না; কারণ তাতে তার ইজ্জত ঢাকবে না ।” =)) =)) =)) =)) =)) =)) :clap: :clap: :clap: =)) =)) =)) =)) =))
    দোস্ত নিস্তার তোর গ্যাজ আর কমল না


    জানি সত্য নয়,শুধু কল্পনায়...ইচ্ছের ঘুড়ি আমরা ওড়াই...স্বপ্ন গুলো সত্যি হবে তারি অপেক্ষায়

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।