একটি মোবাইল কল এবং অতঃপর…

(কাহিনীটা আসলে আমার দুই জন সি সি আর ক্লাসমেট এর। কিন্তু দুইজনই ব্যস্ত থাকায় ওদের অনুমতি সাপেক্ষে আমি লিখছি।)

সেই নার্সারী থেকে শুরু করে আজ অব্দি মোস্তফার দুঃখ, সে জীবনে প্রেম তো দূরে থাক কোন মেয়ের কাছাকাছি আসার সুযোগ ও পায় নি। তাই মেয়েদের মিষ্টি কন্ঠের প্রতি তার আকর্ষণটা একটু বাড়াবাড়িই। অফিস এর চরম ব্যস্ততার মাঝেও ভর দুপুরে কোন এক নাম না জানা ভার্সিটি কন্যার অজানা নাম্বার হতে কল তাকে বিরক্ত করতে পারার কথা না।

কিন্তু দিনটা ছিল মোস্তফার জন্য খুবই খারাপ। সকাল বেলা থেকেই কাজে ঘাপলা। ফলাফলস্বরুপ, ঊর্ধ্বতনের ঝারি খেয়ে মেজাজ তিরিক্ষি। তাই সেদিন অজানা নাম্বারের সেই কন্যার সাথে তার আলাপ মোটেই সুখকর কিছু হল না।

মোস্তফাঃ হ্যালো।
অজানা নাম্বারঃ হ্যালো।
মোস্তফাঃ কে বলছেন প্লিজ?
অ নাঃ আমি একজন মেয়ে।
মোস্তফাঃ আপনি যে মেয়ে তা তো গলা শুনেই বুঝতে পারছি, যদি না আপনি আবার ওই কেস হন। আপনার নাম-পরিচয় টা দয়া করে বলবেন কি?
অ নাঃ এটা না বললে কি কথা বলা যায় না?
মোস্তফাঃ ধুররর ভাগেন। জীবনে আর ভুলেও কখনও কল দিবেন না।

এর পর ওই নাম্বার হতে কল বন্ধ হল ঠিকই, কিন্তু যা শুরু হল তা হচ্ছে মিস কল অত্যাচার। অপমানের শোধ নিতে সে দিনে-রাতে, অফিস টাইমে-রেস্ট টাইমে এমনভাবে মিস কল দিতে থাকল যে, মোবাইল অন রাখতে মোস্তফার মোবাইল সেট দিনে ২ বার চার্জ করতে হয়। অবশেষে উপায়ন্তর না দেখে কল দিল মোস্তফা।

অ নাঃ হ্যালো।
মোস্তফাঃ আপনি আমাকে মিস কল দিয়ে বিরক্ত করছেন কেন?
অ নাঃ আপনি বলেছেন কল না দিতে, তাই মিস কল দিয়ে ঝাল মিটাচ্ছি।
মোস্তফাঃ এইটা কোন কথা হল? মানুষকে এইভাবে বিরক্ত করা মোটেও ঠিক না।
অ নাঃ ধুররর ভাগেন। জীবনে আর ভুলেও কখনও কল দিবেন না।

এর পর মিস কলের যা রেট হল, তাতে দিনে ২ বার চার্জেও মোস্তফার সেট অন রাখা মুশকিল হয়ে পড়ল। এই মহা বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে অবশেষে মোস্তফা ছুটল প্রিয় বন্ধু ক্যাডেট কলেজ এর রুমমেট খালিদ এর কাছে। সব শুনে খালিদ সেই অজানা নাম্বারে কল দিল তার নিজের মোবাইল থেকে।

অ নাঃ হ্যালো।
খালিদঃ কেমন আছেন? আপনার সাথে একটু কথা বলার জন্য ফোন দিলাম।
অ নাঃ আপনার পরিচয়? আমি আপনার সাথে কেন কথা বলব?
খালিদঃ আমার পরিচয় বোধ হয় আপনার দরকার হবে না। আমি আপনাকে কিছু তথ্য দেওয়ার জন্য ফোন দিলাম। আমার মনে হয়, আপনার এগুলো জানাটা জরুরী।
অ নাঃ কি তথ্য?
খালিদঃ আসলে আপনার এই নাম্বারটা আমি একটা পাবলিক বাস এর সিটের পিছনে লেখা দেখলাম। সাথে আজে বাজে অনেক কিছু লেখা। তাই এই নাম্বারের মালিককে তা জানানোটা আমার কর্তব্য মনে করলাম।
অ নাঃ কি লেখা সেখানে?
খালিদঃ সেটা আমার মুখ দিয়ে বের হবে না। মানুষ এত বাজে কথা কিভাবে লিখে। ছি……
অ নাঃ আমার এই নাম্বার তো তেমন কেউ জানে না। অবশ্য একজন……
খালিদঃ অবশ্য একজন……কি?
অ নাঃ না কিছু না। আপনাকে ধন্যবাদ।

এর ঠিক ২ মিনিট পর মোস্তফার মোবাইলে কল।

মোস্তফাঃ হ্যালো।
অ নাঃ আপনি আমার মোবাইল নাম্বার সহ আজে বাজে কথা বাথরুমে লিখে রেখেছেন কেন?
মোস্তফাঃ বাথরুমে……..!!!???!!! কি বলছেন এসব?
অ নাঃ ভং করেন কেন? ওয়েট……..(কল ড্রপ)

এবারে খালিদ এর নাম্বারে কল।

খালিদঃ হ্যালো।
অ নাঃ ওই লেখা গুলো আপনি বাথরুমে দেখেছেন না?
খালিদঃ আরে বাথরুমে কেন হবে? আর বাথরুমে লিখলে আমি দেখবই বা কিভাবে?
অ নাঃ তো কোথায়?
খালিদঃ পাবলিক বাসের সিটের পিছনে।
অ নাঃ ওহ আচ্ছা, ঠিক আছে। থ্যাংক ইউ।

এবারে আবার মোস্তফার নাম্বারে কল।

মোস্তফাঃ হ্যালো।
অ নাঃ আপনি পাবলিক বাসের সিটের পিছনে আমার মোবাইল নাম্বার সহ আজে বাজে কথা লিখে রেখেছেন কেন?
মোস্তফাঃ কি যা তা বলছেন? আমি কখনোই এই ধরণের কিছু করব না।
অ নাঃ অবশ্যই আপনি করেছেন। আপনি ছাড়া এই কাজ আর কেউ করতে পারে না। বলেন কেন এই কাজ করলেন।
মোস্তফাঃ ধুররর ভাগেন। জীবনে আর ভুলেও কখনও কল দিবেন না।

………………………………………………….
এর ৩ দিন পর মোস্তফা একটি এস এম এস রিসিভ করল।
” I am going to Australia. Good Bye. ”
মোস্তফা যখন খালিদকে এস এম এস টি দেখাল, সাথে সাথে খালিদ মোস্তফার মোবাইলে আরেকটি এস এম এস টাইপ করে পাঠাল অজানা নাম্বার এর উদ্দেশ্যে।
” Onekdiner shopno cilo, Australia er matite paa rakhbo. Apni ferot asar somoy amar jonno ek dibba mati niye asben please. Oitar upor paa rekhe shopno ta sotti korbo. ”

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এস এম এস টির ডেলিভারী রিপোর্ট আর আসে নি, কারণ সে অজানা নাম্বারটি আর কখনোই অন হয় নি এর পর।

( মোরালঃ বিপদে সকল বুদ্ধি শেষে হয়ে গেলে ক্যাডেট কলেজের বন্ধুর কাছে যাও।)

৭,৪২৯ বার দেখা হয়েছে

৭০ টি মন্তব্য : “একটি মোবাইল কল এবং অতঃপর…”

মওন্তব্য করুন : আব্দুল্লাহ্ (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।