“ইউনূসের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে”

এক. দেশের অবস্থা কেমন
বেশ কিছুদিন আগে শান্তা ফোন করেছিল। অনেকক্ষণ কথা হলো। আলাপের এক পর্যায়ে শান্তা জানতে চাইলো দেশের অবস্থা কি? বললো, যারা দেশ ঘুরে যায় প্রায় সবাই খারাপ বলে। দেশের অবস্থা নিয়ে শান্তাকে সেদিন অনেক কথাই বলেছিলাম। প্রবাসীরা যখন দেশের পত্রিকা পড়ে, তারা রীতিমতো ঘাবড়ে যায়। খুন, ধর্ষন, লুটপাট, দুর্নীতি, আওয়ামী লীগ-বিএনপির রেষারেষির সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে নারীর ওপর যৌন নির্যাতন। প্রতিদিন গণমাধ্যমে নির্যাতন, মৃত্যু, আত্মহত্যার খবর পড়তে-শুনতে কারই বা ভালো লাগে! যৌন শব্দটা ভীষণ কানে-চোখে লাগে। মনে হয় ভীষণ অশ্লীল একটা শব্দ। লজ্জা দেয়। ব্যবহার করতে চাই না। কিন্তু একে বোঝাতে অন্য শব্দগুলো এতো শ্লীল যে বিভৎসতা বোঝানো যায় না। যে মেয়েটার ওপর এই পীড়নটা হয়, তার যন্ত্রণা কি কোনোভাবে আমরা ভাগাভাগি করে নিতে পারবো? পারা যায়?

দুই. এই নিয়ে আছি
শান্তাকে বলেছিলাম, এসব আমাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। আমরা এর মধ্যেই তো আছি, থাকছি। কিন্তু দেখো এরপরও দেশ-মানুষের উন্নতি হচ্ছে। গত প্রায় দুই দশক ধরে গড়ে প্রায় ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। গাড়িতে ঢাকার রাস্তা ঢেকে যাচ্ছে। ফৌজদারহাটে আমরা ৫৬ জন ছিলাম ‘৭৪ সালের ২১তম ব্যাচে। আমাদের বন্ধুদের হাতে গোনা দুয়েকটি পরিবার ছিল অবস্থাপন্ন। বাকিরা মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত। বছরে ঈদের সময় নতুন এক জোড়া শার্ট-প্যান্ট পেতাম। তাতেই ভীষণ খুশি ছিলাম। বাসায় একটা সাদাকালো টেলিভিশন এসেছিল সত্তুরের দশকের শেষদিকে। বাবা স্বপ্ন দেখতেন একটা গাড়ি কিনবেন। ‘৯২ সালে তিনি যখন আমাদের ছেড়ে যান, তখন ৪ ভাই ১ বোনের পরিবারে আমি আর আমার বউ উপার্জন করতাম। দুজনে মিলে তখন আয় ৬/৭ হাজার টাকার মতো ছিল। তিন নম্বর ভাইটাকে বাবা কোরিয়া পাঠিয়েছিলেন। ও তখন টাকা পাঠাতো। ৩০ বছর বয়েসি একটা যুবক সংসারটা এভাবে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। মা প্রায়ই অভিযোগ করতেন, বাবা বেঁচে থাকতে বাসার বাজার অনেক ভালো ছিল। মা তো জানতেন না, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল, মাসের বাজার, দুই ভাইয়ের পড়ার খরচ, নিজেদের চলার জন্য খরচ করে এর চেয়ে ভালো থাকা যায় না। অবশ্য ফয়েজ (স্থপতি) তখন পড়ার ফাঁকে আয় করতে শুরু করে দিয়েছে।

তিন. একটি খবর এবং প্রবাসী আয়
নিম্ন আয়ের দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে চলতি বছর প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছেন প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি ডলার। যা নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বিশ্বব্যাংকের মাইগ্রেশন অ্যান্ড রেমিটেন্সেস ফ্যাক্ট বুক ২০১১-তে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

২০১০ সালে নিম্ন আয়ের ৪০টি দেশে মোট বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এদের মধ্যে বাংলাদেশে এসেছে এক হাজার ১০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের পরেই যথাক্রমে—নেপাল, তাজিকিস্তান ও কেনিয়ার অবস্থান।

বিদেশ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহে বরাবরের মতো শীর্ষে রয়েছে ভারত। চলতি বছর প্রবাসে অবস্থানরত ভারতীয়রা দেশটিতে পাঠিয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। ২০০৯ সালের তুলনায় ভারতে বৈদেশিক মুদ্রা আসার পরিমাণ কিছুটা বেশি। গত বছর ভারতে চার হাজার ৯০০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা এসেছিল। প্রবাসীদের পাঠানো মোট বৈদেশিক মুদ্রার চার ভাগের এক ভাগই যায় ভারত ও চীনে। (প্রথম আলো : ০৬ ডিসেম্বর, ২০১০)

চার. বাঙালি ইউনূস
ইউনূস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ভালোই ছিলেন। মাথায় কি ভূত চাপলো, তিনি অর্থনীতির তত্ত্বগুলো পরীক্ষা করতে চাইলেন। গেলেন পাশের জোবরা গ্রামে। নিজের পকেট থেকে বঞ্চিত মানুষদের ঋণ দিলেন। কে বলেছিল! একজন স্বপ্নবাজ মানুষ ছিলেন। তিনি দেখতে চাইলেন যাদের কৃষি ব্যাংক ঋণ দেয়না তাদের এর আওতায় আনা যায় কিনা! ঘোরতর অন্যায় করলেন তিনি। তিনি জানতে কি জানতেন না নিজের অজান্তেই একটা বড় শত্রুপক্ষ তিনি তৈরি করছেন। যারা আজো তার পিছু ছাড়ছে না।

পাঁচ. গরীবের রক্তচোষা
কল্পকাহিনী রক্তচোষা বা ভ্যাম্পায়ারের গল্প শুনেছি, চলচ্চিত্র দেখেছি। বাস্তবের ইউনূসের মুখে রক্তচোষার যে কাল্পনিক চেহারা আমরা এঁকে যাচ্ছি, আহ্‌ তা যদি সত্যিই দেখতে পেতাম! ইউনূস রক্ত চুষছেন আর তাতে নিউইয়র্ক, লন্ডনে বা মুম্বাইয়ে তার মিলিয়ন ডলারের বাড়ি আকাশচুম্বি হচ্ছে না! গর্ব করার জন্য আমাদের ইউনূস নয়, একজন মুকেশ আম্বানি দরকার্। নেই তাতে কি! আমাদের সালমান রহমান আছে না! তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় টাকার অভাবে তার একাধিক কোম্পানি ‘মার্জার’ করতে হয়! দেউরিয়া হয়ে গেছে যে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার দুই বছরে সালমান জিএমজি এয়ারলাইন্সে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে, ওয়েস্টইন হোটেলের শেয়ার কিনে, ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি চ্যানেলে, কিনে স্কলাসটিকা স্কুল, এটিএন বাংলা, বিলট্রেড (প্রি ফেব্রিকেটেড ইন্ডাষ্ট্রি), ঢাকা-সাংহাই সিরামিকস, সিঙ্গার এবং বিডিনিউজ24ডটকম। পরিশোধ করে আইএফআইসি ব্যাংকের আড়াইশ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। আরো কি কি কিনছেন বা কিনবেন তার বিবরণ না দেওয়াই ভালো। আর বেচারা ইউনূস জড়িয়ে পড়েন টেলিনরের সঙ্গে লড়াইয়ে! নোবেল পুরস্কার পেয়ে ইউনূস হয়ে যান আমাদের প্রতিপক্ষ।

ছয়. গ্রামীণ দারিদ্র এবং শক্তি দই
আগেই বলেছি সত্তুরের দশকের তথাকথিত মধ্যবিত্ত নিয়ে। সে সময় সরকারি চাকুরে বাবা সন্তানদের নিয়ে রেশন দোকানে লাইন দিয়ে চাল-গম-তেল কিনতেন! আত্মসম্মানের কোনো বালাই ছিল না। সেই লাইনে কলতলার পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়াও হতো। সেই বাবার ছেলে হয়ে আমি যখন আশির দশকে রাজনীতি করেছি, বাবার সব ক্ষোভ ছিল আমার পায়ে বাটার রাবারের ‘সানডাক’ স্যান্ডেলের বিরুদ্ধে।

গ্রামীণ দারিদ্র আমি দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে। আরো পরে আশি আর নব্বইয়ের দশকে। গত এক দশকে গ্রামে যাওয়া হয়নি। রোজার ঈদের সময় ছোট চাচা গ্রাম ঘুরে এসে বললেন, জাকাত নেওয়া পরিবারে সংখ্যা মাত্র ৪২টি। তার বর্ণনায় তৃপ্তি ছিল। সে আনন্দ আমাকেও ছুঁয়ে গেছে। আমাদের গ্রামটি বেশ বড়। কিন্তু গত চার দশকে সেখানে দারিদ্র কমেছে। গ্রামে আমাদের পরিবারের কেউ আর স্থায়ীভাবে থাকে না। সম্পর্কের যে চাচাকে সত্তুরের দশকে আমাদের উপর নির্ভরশীল দেখেছি তিনি এখন আমাদের চাষের প্রায় সব জমি কিনে নিচ্ছেন। না ক্ষুদ্র ঋণ নয়, সন্তানদের প্রবাসী আয় তার টাকার উৎস।

গ্রামীণ দারিদ্রের বিরুদ্ধে “শক্তি দই” হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণ, প্রবাসী আয়, আত্মকর্মসংস্থান, সৃজনশীলভাবে বাঙালির বেঁচে থাকার নানা পথ ও পদ্ধতি উদ্ভাবন। গত চার দশকে জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুনের বেশি, এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দারিদ্র ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনতে কতো কোটি মানুষ দুষ্টচক্রমুক্ত হয়েছে তার সরল অংকটি আমার মাথায় কিছুতেই ঢোকে না! এসএসসি ও এইচএসসিতে অংকের ভয়ে মানবিকে পালিয়েছিলাম। একই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’বছর পর অর্থনীতিকে বিদায় দিয়েছি।

চালের দাম বাড়ছে। সরকার ট্রাকে করে ২৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করছে। প্রতিদিন অফিসে আসার পথে দেখি ট্রাকের পেছনে লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। কিন্তু সীমিত আয়ের চাকুরেরা যাবে কোথায়? গরীব হওয়ার কিছু সুবিধা অর্থনীতিবিদরা আজকাল বলছেন। এর ব্যবহারিক মূল্যও আছে। গরীব মানুষ ট্রাকের পেছনে লাইন ধরতে পারে। রিকশাওয়ালা, সিএনজি চালক, দিনমজুর তাদের ভাড়া বা মজুরি বাড়িয়ে সেটা সামাল দেয়। পোশাক শ্রমিকদের আয়ও সীমিত। তাই তারা ক্ষোভ জানাতে ভাংচুর করে, কারখানায় আগুন দেয়। তবে তারা ট্রাকের পেছনে দাঁড়াতে পারে। আমরা তিন বা চার দশক আগে রেশনের দোকানে দাঁড়াতে পারতাম। এখন সরকারি চাকুরে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তো রেশন পান না, ট্রাকের পেছনে দাঁড়াতেও পারেন না। সৎ আয়ে সংসার চালানো কঠিন। তাই তাদের নানা ধান্ধায় ঢুকে পড়তে হচ্ছে। ঘুষ, কনসালটেন্সি আরো কতো কি! উপায় নাই। শহুরে নামহীন এই ‘দরিদ্র’দের শক্তি দই এসব ছাড়া আর কি!

সাত. অতঃপর দুই বছর
আওয়ামী লীগের মহা মহাজোটের সরকার দু’বছর পূর্ণ করলো কদিন আগে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার আলাদা আলাদা জরিপ করেছে সরকারের পারফরমেন্স নিয়ে। দুই জরিপই বলেছে, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমছে। বাড়ছে বিএনপির। তবুও জরিপে আওয়ামী লীগ ৭ থেকে ১০ শতাংশ এগিয়ে আছে। কিন্তু পৌরসভা ভোটে কি হচ্ছে এসব? রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল বিভাগে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমানে সমান। এমনকি জামায়াতও বেশি পৌরসভায় জিতেছে জাতীয় পার্টির চেয়ে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ভোট বাকি। কি চমক দেবেন ভোটাররা? প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের জরিপ নিয়ে যে আওয়ামী লীগাররা ভ্রু কুঁচকিয়েছিলেন তাদের চোখ শেষ পর্যন্ত কপালে উঠবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

চালের দাম, আইনশৃঙ্খলা, দেশের অবস্থা নিয়ে নিশ্চিন্ত শেখ হাসিনা নজর দিয়েছেন এখন গ্রামীণ ব্যাংক আর ইউনূসের দিকে, প্রথম আলো আর মতিউর রহমানকে সোজা করতে। রাজনীতিবিদরা তাদের চেয়ে শক্তিশালী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সহ্য করতে পারেন না, এটা নতুন নয়। কোনো প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত তারা গড়তে পারেননি। প্রথম আলোর ক্ষতি হয়নি। পাঠক এখনো টাকা দিয়ে পত্রিকা কেনে। কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের। “বেক্সিমকো (পড়ুন : সালমান) ব্যামো” ধরেছে গ্রামের ভূমিহীনদেরও। হাসিনা-ইউনূস বিতর্কে ঢুকে তারা গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত ঋণের সুবিধাবঞ্চিতরাই প্রমাণ করে ছাড়বেন গ্রামীণ ব্যাংকের দরকার আর তাদের নাই। ধ্বসে পড়বে ইউনূসের তখতে-তাউস! হাসিনা-সালমান-শাহ আলমরা বগল বাজানোর প্রস্তুতি নিতে পারেন। কি দরকার ছিল ইউনূস তোমার পুঁজিবাদকে রক্ষা করার! স্যালাইন দিয়ে কী বিপ্লব ঠেকিয়ে রাখা যায়! মেনন ভাইরা আবার কাস্তে-হাতুড়ি নিয়ে নেমে পড়তে পারেন। আমরা যারা লাইনচ্যূত হয়েছিলাম তারা গাড়িতে লাল ঝান্ডা তুলে কেএফসিতে ‘চিকেনব্রোস্ট’-এ কামড় দিতে দিতে শ্লোগান ধরবো, “দুনিয়ার মজদূর এক হও”!

আগ্রহীরা চাইলে নিচের লিংক দেওয়া লেখা দুটো পড়তে পারেন।

ড. ইউনূসকে নিয়ে প্রথম আলোতে অধ্যাপক রেহমান সোবহানের লেখা

ড. ইউনূসকে নিয়ে ডেইলি স্টারে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের লেখা

[শেষের আগে: পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আগেই। প্রায় দেড় মাস আগে শুরু করে আজ একরকম জোর করে লেখাটা শেষ করলাম। দেখলাম লেখাটা সময় ও গুরুত্ব হারাচ্ছে। তাই কিছুটা অগোছালো আর অতৃপ্তি নিয়েই আজ প্রকাশ করলাম। নিজগুনে ক্ষমা করে দেবেন সবাই।]

৫,১৬৩ বার দেখা হয়েছে

৪২ টি মন্তব্য : ““ইউনূসের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে””

    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      সাব্বির প্রথম হয়েছো। সেজন্য ধন্যবাদটুকু তোমার পাওনা হয়ে আছে। সেটাও দিতে দেরি হয়ে গেল। কিন্তু লেখা সম্পর্কে বক্তব্য কোথায়? অপেক্ষায় আছি।


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
      • সাব্বির (৯৫-০১)

        ধন্যবাদ ভাইয়া।
        আমি যে আপনার লেখার ভীষণ ভক্ত সেটা আর নাই বা বললাম।
        ভাইয়া আপনি তো এক লেখায় অনেক অনেক দিক তুলে ধরেছেন,তাই মতামত না দিয়ে এড়িঁয়ে যাবার চেষ্টা করেছিলাম 😀
        এফ রহমান,ইউনূস,মধ্যবিত্ত,প্রবাসী আয়,দেশের বর্তমান অবস্থা, মহা জোট কারে নিয়া বক্তব্য দিব 🙁
        বাংলাদেশী হিসাবে ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তিতে গর্বিত এবং আনন্দিত হওয়া ছাড়া সেকেন্ড কোন অপশন নাই। একটাই চাওয়া ঋণের কিস্তি আদায়ে যেন শক্তির অপব্যবহার না ঘটে। নিচে মর্তুজা ভাইয়ের করা মন্তব্যের সাথে একমত। ১/১১ এর পর থেকেই ইউনূস প্রতিপক্ষে রূপান্তর হয়েছে। তানা হলে ১৫-২০ ধরে গ্রামীন টিকে থাকার কথা না (সম্পূর্ন ব্যক্তিগত মতামত)।
        প্রবাসী আয়ের টাকা দেশে যায় তার হিসাব থাকে কিন্তু দেশ থেকে কি পরিমান টাকা বিদেশে আসে তা কি সঠিক ভাবে হিসাব করা হয়? আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনেক কে চিনি যারা দেশ থেকে কয়েক কোটি টাকা পাঠিয়েছে ব্যবসার উদ্দেশ্যে। সাদা টাকা না, কালো টাকা সেটা আমার দুঃখ না, দেশের টাকা দেশে ইনভেস্ট না করে, দেশের মানুষের কর্মসংস্থান না যুগিয়ে এত গুলো টাকা নিয়ে বিদেশে আসার কোন অর্থ আমি খুঁজে পাই না।

        জবাব দিন
  1. রেশাদ (১৯৯৩ -৯৯)

    প্রতিদিনের অভ্যস্ত চোখে এগুলোর আর কোন বিশেষ আবেদন নেই এখন, এমনই তো হওয়ার কথা ধরে নিয়ে একটু পরেই আপনার এই লেখাটার কথা ভুলে যাব, কিন্তু দেশটার জন্য খুব মন খারাপ হয় ভাইয়া, মন খারাপ হয় আমাদের অক্ষমতা আর অসহায়ত্বের কথা ভেবে। এই সম্পদ এই মেধা আর এই সম্ভাবনাটুকু নিয়েই আমাদের দেশটা কি আরো একটু ভাল চলতে পারত না? আমরাই কেন যেন সব গুবলেট পাকিয়ে ফেলছি। সদিচ্ছা থাকলেও তার প্রয়োগ নেই।

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      রেশাদ, অবশ্যই এই মেধা, এই সম্পদ দিয়ে দেশটা অনেক ভালো চলতে পারতো। কেন পারছে না সেটা তুমিও জানো, আমিও জানি। তবে এই হতাশায় আবার অর্জনের জায়গাগুলো হারিয়ে ফেলো না। এতো সমস্যা আছে বলেই হয়তো আমাদের দেশের মানুষ অনেক বেশি সৃজনশীল। বেঁচে থাকতে হবে না!


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
  2. আমিনুল (২০০০-২০০৬)

    আমরা বাঙালিরা একটু বেশীই হুজুগে,কাউকে মাথায় তুলে নাচতেও বেশি সময় লাগে না,তাকে পায়ের নিচে ফেলে পিষতেও সময় লাগে না।হাসিনা গং এর চক্ষুশূল উনি হইছেন কেয়ারটেকারের সময়ই,আসলে রাজনীতিবিদরা মনে হয় দেশটা কিনেই নিয়েছেন।সবই তাহাদের ইচ্ছে!!!আর তাদের সাথে আছেন কিছু ব্যাকবোনলেস সাংবাদিক,যারা ম্যাডাম/আপা থুথু ফেললেও বলেন 'আহা,কি সুন্দর করে ফেলল!'
    আমাদের সুযোগ্য প্রধানমন্রী ঘটনার কিছুই না বুঝে চায়ের দোকানের আবুল/কাশেমের মত ড.ইউনুসের বিরুদ্ধে একটা কমেন্ট করে বসলেন।বিধি বাম, উনি/তেনারা কবে যে বুঝবেন তারা ১৬ কোটি মানুষের একটা দেশের প্রধান নির্বাহী!

    আর আওয়ামী পাচাটা লেফটিস্টদের কাহিনীর জন্য বেশি না,আশেপাশে তাকালেই হয়।গতবার আর এবারের আইডিয়াল আর ভিকারুন্নিসায় ভর্তির জন্য আমার পরিচিত অনেকজনকেই দেখেছি ৩-৩.৫ লাখ করে মেনন ভাইদের কুড়ালের তলায় রেখে এসেছেন।

    জয় বাংলা!বাংলাদেশ জিন্দবাদ! :clap:

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      হুজুগটা বোধহয় সব জাতির মধ্যেই কমবেশি আছে আমিনুল। তবে ওটাকে গুরুত্ব দিই না। হুজুগেপনায় আবার নির্মল আনন্দের খোরাক পাওয়া যায়! রাজনীতিবিদরা আছেন না!

      তবে একটা বিষয় জানি, যে কাজ করে সমালোচনা তারই হয়। কিন্তু মানুষ হিসাবে আমরা সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে নিতে পারি না। সেটা তুমি, আমি, ইউনূস, হাসিনা, খালেদা- সবাই। আমরা আত্মসমালোচনা করি না। অথচ নিজেকে সঠিক পথে রাখার জন্য এর চেয়ে ভালো কোনো পথ হতে পারে না। চলো না, আমরাই সেটা শুরু করি।


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
  3. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    সানা ভাই,

    ধন্যবাদ যে অনেক ব্যস্ততার মাঝেও লেখাটা শেষ করেছেন।

    আশা করেছিলাম আপনি ক্ষুদ্রঋণ এবং গ্রামীনের কার্যক্রম নিয়ে আমার সমালোচনার জবাব দিতে বাস্তব তথ্যের আলোকে আপনার বক্তব্য তুলে আনবেন। সেই তথ্য-ভিত্তিক আলোচনাটা পেলাম না।

    আপনার ছোটবেলার দেখা বাংলাদেশ আজ অনেকই এগিয়ে গেছে। আর এই এগুনোতে সবথেকে বেশি অবদান দেশের গার্মেন্টস আর বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সের। এই দুই সেক্টরে খেটে-যাওয়া মানুষগুলোর কৃতিত্ব কিভাবে ক্ষুদ্রঋণের ঘরে যায়, আমার মাথায় এটা কিছুতেই ঢুকে না!

    আমাদের রাজনীতিকরা দূর্নীতিগ্রস্ত, স্বার্থপর, বাটপার- এসবই সত্য। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণের আলোচনায় এদের টেনে আনা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। কিছু বদলোকে কোন খারাপ কিছুর সমালোচনা করলে সেই খারাপ জিনিসটা ভালো হয়ে যায়না, কখনোই না। খারাপ যা' তা' নিজ গুণেই খারাপ, যেমন ভালো নিজগুণে ভালো।

    ডঃ রেহমান সোবহানের লেখা নিয়ে এইখানেই আমার প্রতিক্রিয়া পোষ্ট করেছি। দেখুন //cadetcollegeblog.com/mahmudh/27956 । ডঃ ফখরুদ্দীনও ক্ষুদ্রঋণের একজন হোমড়া-চোমড়া, তিনি পিকেওএসএফ-এর প্রধান ছিলেন। কাজেই, তার লেখাও যে ডঃ রেহমান সোবহানের মতো হবে তা' অনুমান করা যায়।

    যা' সত্য তা' সত্যই, আমরা মানতে চাই বা না-চাই। শুধু মাঝে মাঝে কিছু মানুষের উপর নির্ভেজাল আস্থা এনে আমরা বিভ্রান্তিতে পড়ি।

    সত্যের জয় হোক।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      ধন্যবাদ মাহমুদ তোমার মন্তব্যের জন্য।

      রেহমান সোবহান, ড. ফখরুদ্দিন তোমাকে সন্তুষ্ট না করতে পারলে আমি পারবো ভাবছো কেন? আমি একজন সাংবাদিক মাত্র। আর সাংবাদিকরা হচ্ছে সবজান্তা, আসলে কিছুই জানে না। তোমাকে বা কাউকে 'সত্যে'র পথে আনার দায়িত্ব তো আমি নিইনি। আমি তো এখনো জানিনা, সত্য কি! সত্য তোমার কাছে একটা, আমার কাছে আরেকটা। আমি শুধু নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছি মাত্র। গ্রহণ করা, না করা তোমার ব্যাপার।

      তুমি বারবার যে বাস্তব তথ্যের কথা বলছো, তুমি নিজেই তোমার লেখাগুলো পড়ে দেখো- সেখানে ক্ষুদ্রঋণকে নাকচ করার মতো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়েছো কিনা? আমি গবেষক বা শিক্ষক নই। যে কাজের চাপের মধ্যে থাকি তাতে এ নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা বা জরিপ করা, তার ভিত্তিতে বিশ্লেষণ দাঁড় করানো সেটা একেবারেই অসম্ভব। তুমি যেমন ক্ষুদ্রঋণের কিছু ব্যর্থ কেস স্টাডি দিচ্ছো, তেমনি কিছু সফল কেস স্টাডিও আছে। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণকে নাকচ করার মতো কোনো পূর্ণাঙ্গ গবেষণা এখনো পাইনি। সমালোচনা আছে, ভুল-ত্রুটি আছে, বাড়াবাড়ি আছে।

      আমি আগেই একবার বলেছিলাম, তোমার চিন্তা বা এ নিয়ে লেখালেখিটা একপেশে। রেহমান সোবহানের লেখা নিয়ে তোমার প্রতিক্রিয়ার শেষ অংশে সংযুক্তিকে ইত্তেফাকের একটি সংবাদকে উদ্ধৃত করতে গিয়ে তুমি ড. ইউনূস বা গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে তোমার ক্ষোভটাও লুকোতে পারোনি। কেন? আর ওই খবরটা যখন সংযুক্ত করলে তাহলে পরেরদিন ছাপা হওয়া এর ফলোআপ খবরটা তুলে দিলে না কেন? তার অর্থ হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে যায় এমন সব খবর তুমি উপেক্ষা করছো। এটা কি ঠিক? পরের দিনের খবরটা আমি ওইদিনই পড়েছিলাম, আজ খুঁজে পেয়ে তার লিংক দিলাম। "এমআরএর আওতায় নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই গ্রামীণ ব্যাংকের"- দেখো তো ওদের যুক্তি গ্রহণযোগ্য হয় কিনা!

      আর ড. ফখরুদ্দিন সম্পর্কে এখানে মন্তব্যে যা বলেছো তার আগে উনার লেখাটা তোমার পড়া প্রয়োজন ছিল। উনার সম্পর্কে জানা দরকার ছিল। গুগলেই এটা সম্ভব। এই ফখরুদ্দিন আহমেদ "রোডস স্কলার"। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাস্ট্র প্রবাসী। সেখানে অধ্যাপনা করেন। উনি কোনোদিন পিকেএসএফের কিছু ছিলেন না। পিকেএসএফে ছিলেন তত্ত্ববধায়ক সরকার প্রধান ড. ফখরুদ্দিন। আর ডেইলি স্টারের লেখক প্রথম বাংলাদেশি রোডস স্কলার ড. ফখরুদ্দিনের আরেকটি পরিচয়, তিনি একজন ক্যাডেট, ফৌজিয়ান।

      মুশকিলটা কি ভাইয়া তুমি তোমার জায়গা ছাড়বে না। এখন তুমি বলছো- গ্রামীণ দারিদ্র কমিয়েছে পোশাক শিল্প, প্রবাসী আয়। কিন্তু কিছুতেই ক্ষুদ্রঋণ না! কিভাবে এতোটা নিশ্চিত হলে?

      আমি এখানে যে শুধু ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে লিখিনি তা লেখাটা আরেকবার পড়লে বুঝবে। লেখাটা আসলে শান্তার সঙ্গে টেলিফোনে কথপোকথনের সূত্র ধরে দেশের অবস্থা নিয়ে শুরু হয়েছিল। শেষ করার সময় পাইনি। তাই গত দেড় মাসের রাজনীতি, দ্রব্যমূল্য, ইউনূস বিতর্ক, সরকারের দুই বছর, জরিপ, পৌর ভোটের ফল- নানা বিষয় চলে এসেছে। এসব মিলিয়ে 'আমরা কেমন আছি তা দেখে যা নিখিলেশ' ধরণের দিনলিপি। ইউনূস বা ক্ষুদ্রঋণ এর একটা অংশ, আমার পর্যবেক্ষণ মাত্র। এ নিয়ে আমাদের দুজনের কেন অনেকের মতেই পার্থক্য থাকতেই পারে। এটাই তো সমাজের জন্য মঙ্গল। বিতর্ক চলতে থাকুক। তবে চোখ-কান খোলা রেখে, হৃদয়কে উন্মুক্ত করে।


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
      • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
        রেহমান সোবহান, ড. ফখরুদ্দিন তোমাকে সন্তুষ্ট না করতে পারলে আমি পারবো ভাবছো কেন?

        - সানা ভাই, আমাকে শুধু তথ্যই সন্তুষ্ট করতে পারবে, আর তা' হতে হবে বাস্তব, কারো মুখের কথা নয়। উল্লিখিত দুইজনের কেউই ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কোন তথ্যই দেন নাই। প্রথমজন দেশের 'মান-মর্যাদা' নিয়ে বলেছেন আর দ্বিতীয়জন বলেছেন ব্যক্তি ইউনূসকে নিয়ে। আর আমার অবস্থান হচ্ছে, দুই থেকে পুরোই আলাদা, ডঃ রেহমান সোবহান (এবং একাডেমি'তে বাকি সবাই) যা'কে "পেশাদারী" বলে থাকেন।

        তুমি বারবার যে বাস্তব তথ্যের কথা বলছো, তুমি নিজেই তোমার লেখাগুলো পড়ে দেখো- সেখানে ক্ষুদ্রঋণকে নাকচ করার মতো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়েছো কিনা?

        - ভাইয়া, বিনয়ের সাথে আমি আবারো দাবী করছি যে, আমার লেখায় যথেষ্ট তথ্য আছে ক্ষুদ্রঋণকে দারিদ্র্য-উৎপাদনকারী হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য। বেশিরভাগই কোয়ালিটেটিভ তথ্য হওয়ায় কারো মনে হতে পারে যে তথ্য (নির্দিষ্ট করে বললে, কোয়ান্টিটেটিভ) নাই। এমন হয়ে থাকলে আকেরবার দয়া করে পড়ে আসুন আমার ব্লগ।

        আমি গবেষক বা শিক্ষক নই। যে কাজের চাপের মধ্যে থাকি তাতে এ নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা বা জরিপ করা, তার ভিত্তিতে বিশ্লেষণ দাঁড় করানো সেটা একেবারেই অসম্ভব। তুমি যেমন ক্ষুদ্রঋণের কিছু ব্যর্থ কেস স্টাডি দিচ্ছো, তেমনি কিছু সফল কেস স্টাডিও আছে। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণকে নাকচ করার মতো কোনো পূর্ণাঙ্গ গবেষণা এখনো পাইনি।

        ভাইয়া, আপনাকে গবেষক হতে হবে কেন? আপনার অবশ্যই নিজের জীবন-পেশা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ততা আছে, থাকবে। কিন্তু কিছু লোক ত' আছেই গবেষণা করার জন্য, যাদের পেশাই গবেষণা করা। সমাজের/রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকরা তাদের কাছ থেকে জেনে নেন "তথ্য-ভিত্তিক" পরামর্শ। সামাজিক বিজ্ঞানের এই জাতীয় পেশাদার লোকদের গবেষণা থেকেই আমি বলেছি যে ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য উৎপাদন করে। এবং তাদের মতামত গ্রহন করতে গিয়ে আমি বিবেচনা করেছি কি ধরণের তথ্য তারা ব্যবহার করেছে, কি পদ্ধতিতে তা সংগ্রহ করেছে, লজিক্যাল/তত্ত্বীয় কাঠামো গ্রহনযোগ্য কি না এইসব। এইখানে ব্যক্তি হিসেবে তারা বিবেচ্যই নয়। আমার একটা লেখার শেষে একটা পাঠ-তালিকা দিয়েছিলাম এমন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত আলোচনার। মনে হলো, আপনি সেগুলোকে গোনায় ধরেননি।

        কিন্তু কিছুতেই ক্ষুদ্রঋণ না! কিভাবে এতোটা নিশ্চিত হলে?

        ভাইয়া, আমি নিশ্চিত। এটা আমার ব্লগসমূহে আমি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি।

        ড. ইউনূস বা গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে তোমার ক্ষোভটাও লুকোতে পারোনি।

        ভাইয়া, শুরু থেকেই আমি ক্ষুদ্রঋণের বিরোধী। কারণ, এটা চরম দারিদ্র্য উৎপাদন করে। আর তাই এটা যার' অবদান, তারও বিরোধী। এখানে লুকোছাপার কিছু নেই।


        There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

        জবাব দিন
        • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

          দুঃখিত মাহমুদ, তোমার সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তোমার ২০০৯ এবং ২০১০-এ লেখা একাধিক ব্লগ পড়েও কোনো কোয়ান্টেটিভ জরিপ বা পরিসংখ্যান পেলাম না। কিছু কোয়ালেটিটিভ কেস স্টাডি আছে, তাও নিজের মতের সঙ্গে যায় এমন। এরকম কিছু তথ্য দিয়ে ক্ষুদ্রঋণকে নাচক তুমি করতে পারো, আমি নই। কারণ আগেই বলেছি, আমিও এরকম সফল কেস স্টাডি দিতে পারবো। সেপ্টেম্বর ২০১০-এর একটা তথ্য পেলাম, গ্রামীণ ব্যাংক সেই পর্যন্ত মোট ৫৬ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা ঋণ ৮৩ লাখ ১৯ হাজার ২৬৮ জনের মধ্যে বিতরণ করেছে। দেশের বাদবাকি এনজিও'র তথ্য আমার কাছে নেই। এই বিপুল অর্থ জলে গেছে তুমি বলতেই পারো। আসলে মন খোলা না থাকলে বিতর্কের অর্থ নেই।

          ক্ষুদ্রঋণের প্রসঙ্গ থাক, তুমি তো মনে করে এটা দারিদ্র উৎপাদন করে! তাই অন্য একটা যুক্তির কথা বলি। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে শিল্প বা আমদানি-রপ্তানি ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই লাভবান হচ্ছেন, এটা তো স্বীকার করো। কারণ লাভ না করলে, সম্পদ না বাড়লে এই ঋণগ্রহীতারা ঋণ নিতেন না এবং ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতেন না। বর্তমানে দেশে যে শক্তিশালী বেসরকারি খাত গড়ে উঠেছে তা হতো না। এই ঋণের একটা অংশ খেলাপি হয়। কেউ কেউ ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত খেলাপি হন। এই খেলাপিদের কারণে বা কেউ কেউ দেউলিয়া হয়ে গেলে ব্যাংক ঋণ ব্যবস্থা খারাপ বলে কী কেউ নাকচ করে দেবে?

          ব্যাংক ঋণ বা শেয়ারবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করে শিল্পায়ন হচ্ছে। আর সেই শিল্পায়নও দারিদ্র কমাতে কাজে লাগছে তাই না? দারিদ্র উৎপাদন করে শুধুই ক্ষুদ্রঋণ!


          "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

          জবাব দিন
          • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

            সানা ভাই, আবার আমার ব্লগগুলো পড়েছেন জেনে ভালো খুব লাগল।

            কোয়ালিটেটিভ তথ্য ছাড়া এই মুহূর্তে আমার কাছে কোন কোয়ান্টিটেটিভ তথ্য নেই ক্ষুদ্রঋণের ফলাফল নিয়ে। কাজেই যা' আছে, সেটাই ভরসা। কিন্তু গ্রামীন যে সাফল্য দাবী করছে, তাদেরও ত' কোয়ান্টীটেটিভ তথ্য নেই যা' দিয়ে তারা সাফল্য দাবী করে। বলেছেন,

            সেপ্টেম্বর ২০১০-এর একটা তথ্য পেলাম, গ্রামীণ ব্যাংক সেই পর্যন্ত মোট ৫৬ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা ঋণ ৮৩ লাখ ১৯ হাজার ২৬৮ জনের মধ্যে বিতরণ করেছে।

            - এটা এবং এই রকম যেসব তথ্য গ্রামীন দেয়, তা' শুধু বলে কতজনকে তারা ঋণ দিয়েছে। কিন্তু কখনোই কি তারা তথ্য দিয়ে দেখাতে পেরেছে গ্রহিতাদের মধ্যে কতজন সফল হয়েছে/লাভের মুখ দেখেছে?- না, গ্রামীনও এমন কোন তথ্য দেয়না। তাইলে, কোয়ান্টিটেটিভ তথ্য ত গ্রামীনেরও নাই!!!

            ইন ফ্যাক্ট, গ্রামীন চাইলেই তাদের গ্রহিতাদের মধ্যে কতজন সফল হচ্ছে সে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, যেমন আপনার উল্লিখিত তথ্যটা সংগ্রহ করেছে। কিন্তু কখনোই তা' করবে না, বা করলেও প্রকাশ করবে না- আমি বাজী রেখে বলতে পারি। কারণ, ঐখানে ঠিকই বের হয়ে পড়ে আসল কাহিনী- যে কয়জন গ্রহিতা 'ড্রপড আউট' (২০%-৩০%), তারা সকলেই সর্বস্ব হারিয়ে চরম দারিদ্র্যে নিপতিত হয়। এটা ক্ষুদ্রঋণের কাঠামোগত দূর্বলতা, কারো কোন ব্যক্তিগত ভালোমন্দের ব্যাপার নয়।

            এই বিপুল অর্থ জলে গেছে তুমি বলতেই পারো। আসলে মন খোলা না থাকলে বিতর্কের অর্থ নেই।

            - না ভাইয়া, ভুল বুঝেছেন। আমি কখনোই বলিনি যে, এই অর্থ জলে গেছে। আমি বলছি, এই অর্থ যে সাফল্যের কথা প্রচার করে (অর্থ্যাৎ দারিদ্র্য বিমোচন) ঐটা মিথ্যা। এই অর্থ অবশ্যই কয়েকগুণ মুনাফা নিয়ে আসে ঋণদাতার জন্য। কিন্তু দরিদ্র গ্রহিতারা আরো দরিদ্র হয়- এটাই আমার দাবী।

            সানা ভাই, কোয়ান্টিটেটিভ তথ্য নিয়ে একটা জোক পড়েছিলাম কোন একটা 'সোস্যাল স্ট্যাস্টিকস' বইয়ের ভূমিকায়ঃ
            "বিশ্বে তিন ধরণের মিথ্যা আছেঃ মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা, আর পরিসংখ্যান"। কোয়ান্টিটেটিভ তথ্যের অপব্যবহার থেকে এই তামাশা'র উৎপত্তি। গ্রামীন ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য নিয়ে যা' করে তা' তথ্যের অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।

            ভাইয়া, দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণের সাফল্যসূচক তথ্য দেখান, আমি আমার অবস্থান পাল্টাই। ভাইয়ে ভাইয়ে আর কতক্ষণ চলবে এই বিতর্ক? 🙂 🙂


            There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

            জবাব দিন
            • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

              মাহমুদ, ঠিক বলেছ, তুমি রহিম মিয়া বা করিমন বিবির ব্যর্থতার কাহিনী তুলে ধরে বলতে থাকবে যে ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র উৎপাদন করে; আর আমি সলিমউদ্দিন বা বানেছা বিবির সাফল্যের কথা তুলে ধরে দাবি করে যাবো এর সাফল্য আছে! দুজনের অবস্থানে পরিবর্তন হবে না। আর গ্রামীণ ব্যাংক নিজে কোয়ান্টিটিভ পরিসংখ্যান দিলে তুমি সেটা বিশ্বাস করবে কেন? কারণ, ওটা তো ওদের তৈরি করা হবে। আবার গবেষণায় সাফল্যের চিত্র বেরিয়ে আসলে বলতে পারো, ওই গবেষক গ্রামীণের কেনা। অথবা ব্যর্থতার চিত্র পাওয়া গেলে আমি বলবো, গবেষকের বিশেষ কোনো স্বার্থ আছে। আসলে নিজেরা খোলা মনে না থাকলে সমস্যা। আমি তোমাকে এই কথাটাই শুধু মনে করিয়ে দিতে চাইছি।

              যে কোনো ঋণের ক্ষেত্রে অবশ্যই "ড্রপড আউট" থাকবে। আমি তো বেশ কিছু সমালোচকের লেখায়/ গবেষণায় গ্রামীনের ব্যালেন্সশিট থেকে তথ্য নিয়ে ড্রপড আউটের পরিসংখ্যান পেয়েছি। এ কারণে পুরো পদ্ধতিটাই নাকচ হয়ে যায়! স্কুল থেকে অবশ্যই ড্রপড আউট হয়। কম-বেশি সারা বিশ্বেই। এ কারণে স্কুল ব্যবস্থা বাতিল করে দিতে হবে? নাকি ড্রপড আউটের কারণগুলো খুঁজে বের করে পরিমাণ কমিয়ে আনার পথ খুঁজতে হবে? এই ড্রপড আউটের কারণে ক্ষুদ্রঋণের যা সাফল্য আছে তা বলতে পারবে না গ্রামীণ ব্যাংক? ২০০৯ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ৫৬৭ কোটি টাকা লোকসানি ঋণ রাইট অফ করেছে। তাদের ব্যালেন্সশিটেই তো এই তথ্য পেলাম।

              সাফল্য তো আছেই। নইলে গ্রামীণের সদস্যরা ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সঞ্চয় করে কিভাবে? ৮৩ লাখ মানুষকে তো ধরে বেঁধে প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ গছিয়ে দেওয়া যায় না! এই পরিমাণ ঋণের টাকা তোমার মতে, "....... অবশ্যই কয়েকগুণ মুনাফা নিয়ে আসে ঋণদাতার জন্য।" মজার ব্যাপার হচ্ছে এই মুনাফাটা গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য বা ঋণগ্রহীতারাই ফিরে পায়। কারণ কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই বাণিজ্যিক ব্যাংকটির মালিক নন। ২০০৯ সালে ব্যাংকটির ঋণগ্রহীতারা ৩০% নগদ লভ্যাংশ পেয়েছেন। ২০০৬ সালে এই পরিমাণ ছিল ১০০%।

              পরিসংখ্যান দিয়ে অবশ্য তোমাকে সন্তুষ্ট করা যাবে না। এ নিয়ে একটি পুরনো বহু ব্যবহৃত জোকও উল্লেখ করেছো তুমি। অথচ আবার প্রমাণ হিসাবে কোয়ান্টিটিভ পরিসংখ্যানই চাইছো!! তুমিই বলেছো, "না, গ্রামীনও এমন কোন তথ্য দেয়না। তাইলে, কোয়ান্টিটেটিভ তথ্য ত গ্রামীনেরও নাই!!!" তোমার পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে আমি বিষ্মিত, সত্যি।


              "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

              জবাব দিন
              • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
                আবার প্রমাণ হিসাবে কোয়ান্টিটিভ পরিসংখ্যানই চাইছো!! তুমিই বলেছো, “না, গ্রামীনও এমন কোন তথ্য দেয়না। তাইলে, কোয়ান্টিটেটিভ তথ্য ত গ্রামীনেরও নাই!!!” তোমার পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে আমি বিষ্মিত, সত্যি।

                -এইটা আউট-অব-কন্টেক্সট হয়ে গেছে।

                ভাইয়া, কোয়ান্টিটেটিভ তথ্য আপনিই চাইছেন, আমি না। বিশ্বাস না হলে উপরের আপনার একটা 'প্রতি-কমেণ্টে' দেখেন (এই কমেন্টের দুইটা আগে)।

                আমি আমার কোয়ালিটেটিভ তথ্যেই সন্তুষ্ট। আমি এও জানি, কোয়ালিটেটিভ তথ্য দিয়ে অনেক বড় বড় গবেষণা হয়েছে, হচ্ছে, হবে। আপনি উপরে বললেন যে, আমি কোন কোয়ান্টিটেটিভ তথ্য ছাড়াই দাবি করছি ক্ষুদ্রঋণ ব্যর্থ। তাতেই না আমি বললাম যে, আপনি যে কোয়ান্টিটেটিভ তথ্য চাইছেন সেটা গ্রামীনেরও নাই এবং তা' সত্বেও গ্রামীন সাফল্য দাবি করে!!!

                ভাইয়া, আমি জানি আমি কি বলছি, কোন তথ্যের ভিত্তিতে বলছি। আর আমার যাবতীয় দাবী এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সেই তথ্যের ভিত্তিতেই। গ্রামীন বা আর কেউ কোয়ান্টিটেটিভ তথ্য সংগ্রহ+প্রকাশ করুক, তখন সেটা বিশ্লেষন করা যাবে। তথ্য যেদিকে নিয়ে যায়, মতামতও সেইদিকে যাবে।

                যে তথ্য নাই বলে (কোয়ান্টিটেটিভ তথ্য ) আপনি আমার উল্লিখিত গবেষণাগুলো গ্রহন করতে চাইছেন না, সেই তথ্য না-থাকার পরও আপনি ক্ষুদ্রঋণের সাফল্যের গল্পে বিশ্বাস করে বসে আছেন।- এই অবস্থায় মনে হয়, আলোচনার দরকার ফুরিয়ে গেল।

                ভাইয়া, দোওয়া রাইখেন যেন মন খোলা রাখতে পারি, বাস্তব-ভিত্তিক তথ্য ছাড়া অন্য কারো মুখের কথায় যেন বিশ্বাস না করি। আর নিজের মাঝে যেসব পরস্পরবিরোধীতা আছে, সেসব দূর করতে পারি।


                There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

                জবাব দিন
    • সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)
      ডঃ ফখরুদ্দীনও ক্ষুদ্রঋণের একজন হোমড়া-চোমড়া, তিনি পিকেওএসএফ-এর প্রধান ছিলেন। কাজেই, তার লেখাও যে ডঃ রেহমান সোবহানের মতো হবে তা’ অনুমান করা যায়।

      ডঃ ফখরুদ্দীন একজন ফৌজিয়ান এবং শিক্ষাবীদ। তিনি পিকেওএসএফ-এর প্রধান ছিলেন না।

      জবাব দিন
      • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

        সাইফ ভাই এবং সানা ভাই,

        আমি ডঃ রেহমান সোবহান এবং ডঃ ফখরুদ্দীনের কোন নেগেটিভ সমালোচনা করিনি, আমি শুধু দেখাতে চেয়েছি যে, আমাদের জাতীয় পর্যায়ে গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিবর্গ দিয়ে আসল ঘটনাওকে পাশ-কাটিয়ে মনোযোগ অন্যত্র সড়ানো হচ্ছে।

        এদের দুইজনের কেউই ক্ষুদ্রঋণের কাজের ধরণ বা ফলাফল নিয়ে কিছু বলেননি। একজন দেশের মান-সম্মান আরেকজন ব্যক্তি ডঃ ইউনূস নিয়ে কথা বলেছেন। আর আমার নজর ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য/ব্যর্থ্যতা বিচারে। তারা দুইজন- এবং তাদের মত চোখ-ধাঁধানো আরো অনেকের মুখ থেকেই দেশের মানসম্মান বা ব্যক্তি ডঃ ইউনূসের গুণগাণ করতেই পারেন। কিন্তু সেসব কোন ভাবেই তথ্য নয়, কাজেই বিবেচ্যও নয়।


        There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

        জবাব দিন
        • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

          মনে থাকতে থাকতে তোমার বারবার তোলা "এদের দুইজনের কেউই ক্ষুদ্রঋণের কাজের ধরণ বা ফলাফল নিয়ে কিছু বলেননি। একজন দেশের মান-সম্মান আরেকজন ব্যক্তি ডঃ ইউনূস নিয়ে কথা বলেছেন"- এই প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু বলে ফেলি।

          রেহমান সোবহান, ড. ফকরুদ্দিন বা আরো অনেকে ড. ইউনূসের কাজের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। আমি রেহমান সোবহানকে যতোটুকু জানি, তিনি সত্য বলতে দ্বিধা করেন না। ক্ষুদ্রঋণের কোনো সুফল না থাকলে তিনি নিশ্চিতভাবেই তোমার মতো কঠোর ভাষায় একে নাকচ করতেন।

          তার ওই লেখা থেকে একটা উদ্ধৃতি দিই। "সমালোচক/বিশ্লেষকদের কেউই গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা কিংবা বাস্তবিক করপোরেট স্ট্যাটাস নিশ্চিত হওয়ার সামান্যতম চেষ্টাও করেননি। সেই চেষ্টা করলে দেখতে পেতেন, বাদবাকি বেশির ভাগ এমএফআইয়ের বিপরীতে গ্রামীণ ব্যাংক কোনো এনজিও নয় বরং একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক, যার মালিক নিম্ন আয়ের ঋণগ্রহীতা লাখ লাখ মানুষ। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংক তার অস্তিত্ব ও বিকাশের জন্য বিদেশি সহায়তার ওপর আর নির্ভরশীল নয়।

          বাণিজ্যিকভাবে টিকে থাকতে গ্রামীণ ব্যাংককে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে সুদ হিসেবে পাওয়া রাজস্ব থেকে মুনাফা অর্জন এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যয় কমাতেই হতো। গ্রামীণ ব্যাংকের আয় ইউনূসের পকেটে কিংবা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার হাতে যায় না, বরং ব্যাংকটির নিম্ন আয়ের মালিকদের কাছে লভ্যাংশ আকারে ফিরে যায় কিংবা ব্যাংকের ঋণদান কার্যক্রমের বিস্তার ঘটাতে তা রিসাইকেল করা হয়।"

          প্রথম আলোর লেখায় তিনি স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তারও কিছু সমালোচনার জায়গা আছে। আর এখন যে এর কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক চলছে তার সমাধানের একটা পথও তিনি বাতলিয়েছেন। রেহমান সোবহান বলেছেন, "যদিও গ্রামীণ ব্যাংক বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র, তবে তাতেই এটি সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে যায় না। এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান ত্রুটিমুক্ত নয়। দ্বিতীয় ধাপের বহু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, সেসবের দিকে এখনই দৃষ্টি দেওয়া দরকার। গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম নিয়ে যেখানে বাংলাদেশ সরকারের নিজেরই উদ্বেগ আছে, সেখানে সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে, যদি আমাদের জ্যেষ্ঠ নীতিনির্ধারকদের ও অধ্যাপক ইউনূসের মধ্যে সংলাপের সূচনা করা যায়। সেই সংলাপে তাঁরা এসব বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন এবং এসব উদ্বেগ কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে ব্যাপারে বোঝাপড়ায় উপনীত হতে পারেন। গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র্য বিমোচনের মূল কাজটি আরও কার্যকরভাবে কীভাবে করতে পারে, সেই পথ খোঁজার গঠনমূলক আলোচনা এখানে হতে পারে।"

          রেহমান সোবহানরা রাজনীতিবিদদের নোংরামির বিরুদ্ধে বলেছেন। সময়ের কারণে ওই ধরণের লেখার প্রয়োজন ছিল। পাশাপাশি এ নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণও তুলে ধরেছেন। সমস্যা সমাধানের পথ দিয়েছেন।

          তুমি তাদের সমালোচনা করতে পারবে না বা করবে না- এমন কথা কি আমি লেখার কোথাও বলেছি? এই বিশ্বে আমরা কেউ সমালোচনার উর্ধ্বে নই।


          "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

          জবাব দিন
  4. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ভাইয়া, আপনার লেখাটা ভীষন ভাবে আবেগ তাড়িত।

    অন্য অনেকের কথা জানিনা, মাইক্রো-ক্রেডিট পলিসি নিয়ে আমি কিন্তু কখনই আপত্তি করিনি। আমি বলেছি এটা একটা নতুন পদ্ধতি, গরীবদের ব্যাংকিং খাতের আওতায় আনার, এভাবে এর আগে কেউ ভাবেনি, ডঃ ইউনূস ভেবেছেন এবং প্রয়োগ করেছেন। আমি সবসময় আপত্তি জানিয়েছি তাঁর এপ্রোচে, তিনি সবার কাছে এই পলিসিকে যেভাবে রিপ্রেজেন্ট করছেন তা মুদ্রার একপিঠ মাত্র, অন্যপিঠের অবস্থা তিনি তিনি নিজেও ভালো করেই জানেন এবং সচেতন ভাবে এড়িয়ে চলেন।
    একজন সমাজ সংস্কারক এভাবে কাজ করেন না, এভাবে কাজ করেন একজন ব্যবসায়ী। আর একজন ব্যবসায়ী কিন্তু শুধু মুনাফার জন্য লালায়িত নাও থাকতে পারেন, খ্যাতিও একটা মাপকাঠি হতে পারে এখানে।

    এর আগে আপনি আমার এক পোস্টে বলেছেন গনতন্ত্রের বিকল্প হল আরও গনতন্ত্র। আর তা আসবে সমালোচনার মাধ্যমেই। মাইক্রো-ক্রেডিটের ব্যাপারেও একই রকম ভাবতে আমার সমস্যা নেই। এর খারাপ দিকগুলো তুলে দিয়ে নতুন ভাবে একটা সিস্টেম চালু করাই যায়।

    সালমান রহমান মিলিয়ে এতকিছু কেন বললেন বুঝলাম না। ডঃ ইউনূসের সমালোচনা করা মানে তো এই নয়, সালমান সাহেবের কাজে স্বীকৃতি দিয়ে দেয়া।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      ফয়েজ, আসলে কোনো ব্যবস্থাই পূর্ণাঙ্গ সফল না। গণতন্ত্র থেকে আমরা আরো গণতন্ত্র চাই। ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র বিমোচনের একমাত্র পথ বা পদ্ধতি নয়। অন্য আরো অনেক পদ্ধতির মধ্যে একটি। ক্ষুদ্রঋণ সব সমাজে সব সময় ছিল। ড. ইউনূসের কৃতিত্ব তিনি একে প্রাতিষ্ঠানিক একটা রূপ দিয়েছেন। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যারা ঋণ পায়না, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ দেওয়ার তত্ত্ব ও প্রয়োগ দুটোই করেছেন। আর সব পথ বা পদ্ধতির মতো এটাও "ট্রায়াল অ্যান্ড এরর"- এর মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে এবং হবে। কিন্তু একে নাকচ করে নয়।

      ইউনূস ব্যবসায়ী না সমাজ সংস্কারক জানিনা। তার নেতিবাচক কিছু দৃস্টিভঙ্গীর সঙ্গে আমি পরিচিত। তবে তিনি এক্টিভিস্ট। সেটা খ্যাতির লোভেও হয়তোবা। আমার তাতে আপত্তি নেই। আমরা কেউই ধোয়া তুলশি পাতা নই। অর্থ-বিত্ত বা খ্যাতি বা দুটোরই লোভ কমবেশি সব মানুষের আছে। কিন্তু কোনো মানুষ শুধু নিজের সম্পদ বাড়াতেই জীবনপাত করছেন কিনা সে প্রশ্নটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

      ক্ষুদ্রঋণের খারাপ দিকগুলোর একটা তালিকা করো না? ঢালাও বললে তো কাজ এগোয় না। সুনির্দিষ্ট করো। তারপর চলো দেখি সেগুলো সংশোধনের পথ কি? কিভাবে একে আরো কার্যকরভাবে কাজে লাগানো যায় সেটা তখন বেরিয়ে আসবে। কিভাবে এর আরো মানবিক প্রয়োগ সম্ভব তা অবশ্যই আমাদের খুঁজে পেতে হবে।

      সালমান নিয়ে বলার উদ্দেশ্য আসলে একটাই, বাংলাদেশে ব্যাংক ঋণ খেলাপি সংস্কৃতির একজন ধারক-বাহক, প্রতীক তিনি। ইউনূস নিয়ে শেখ হাসিনা ও সরকারের উস্কানিতে ক্ষতি হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের। এর ঋণগ্রহীতারা অনেকেই সুযোগটা নিতে চাইতে পারো। মানে সালমানের মতো ইচ্ছাকৃত খেলাপি হয়ে উঠার আশংকা দেখা দিয়েছে। মানে গরীবের বড়লোকী রোগ আর কি!


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
      • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

        ভাইয়া আপনার কথা যৌক্তিক, কিন্তু এই কাজ প্রফেসর ইউনূসের তরফ থেকে হওয়াটাই বাঞ্জনীয়, নোবেল লরিয়েট হিসেবে এটা তাঁর একটা দায়িত্বও বটে। নতুন কোন তত্ত্ব না এনে পুরানাটাই ঘসে মেজে প্লেস করুন না কেন তিনি। প্রকাশ করে ফেলুন তাঁর সম্পূর্ন তথ্য ব্যাংক, যেখানে তাঁর প্রতিটি গ্রহীতার পূঙ্খানুপুঙ্খ বিবরন থাকবে। অন্যরা এই কাজ করলে জল কি আরও বেশী ঘোলা হবে না।

        বানিজ্যিক ব্যাংকের সংগে আমি মিলাতে চাচ্ছি না। কোন বানিজ্যিক ব্যাংক আজ পর্যন্ত এই দাবী করেনি, তাঁর কাছ থেকে ঋন নেয়া সমস্ত কোম্পানী সফলতার মুখ দেখেছে। সব বাদ দিলাম, একটিও করেছে এই দাবীও কেউ করে না মনে হয়। বরং তারা সবসময় যৌক্তিক ভাবেই এন্টারপ্রেইনার শিপ ক্যাপাবিলিটির কথা তুলে ধরে। গ্রামীন তা করছে কই? তাঁরা তো শুধু দারিদ্র্য দারিদ্র্য করে। এটা কি সহজে চাদা পাবার জন্য?


        পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

        জবাব দিন
        • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

          আরে বাবা, গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষুদ্রঋণ দেয় দরিদ্রদের, শুধুই দরিদ্রদের। তারা দরিদ্র নিয়ে চিল্লাচিল্লি করবে না তো কে করবে? ইউনূসের কাজই তো এই শ্রেনীকে নিয়ে। আজ থেকে দেড় দশক আগে গ্রামীণ ব্যাংক বিদেশী অর্থ নেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। পাইপলাইনে থাকা শেষ বিদেশী টাকা ওরা পেয়েছে ১৯৯৮ সালে। এর আগে পাওয়া দান-খয়রাতের বিদেশী টাকাকে তারা মূলধনে পরিণত করেছে। এখন আর দশটা বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো আমানত, ঋণ, সুদ, লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে চলছে। লাভের টাকা সদস্যদের দেয় এবং আবার বিনিয়োগ করে। এই তো হিসাব।

          আর ক্ষুদ্রঋণের যেসব সমস্যা আছে তা তো তাদেরই সংশোধন করতে হবে নাকি। বাইরের বিশেষজ্ঞদের মতও নিতে পারে। অবশ্যই ব্যাংকটির ৯৫ শতাংশের মালিক এর ঋণগ্রহীতাদের মতও নিতে হবে। আর সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান গ্রামীণ করার চেয়ে আমি বরং গ্রহণযোগ্য কোনো বিশেষজ্ঞদের দিয়ে করানোর পক্ষে। তাহলেই ওই পর্যবেক্ষণ আশা করি সবাই মেনে নেবে। @ ফয়েজ


          "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

          জবাব দিন
      • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

        ক্ষুদ্রঋণের খারাপ দিক একেবারে চাক্ষুষভাবে মাঠে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি-অর্থনীতির ক্লাসে এর গুণগান শুনতে শুনতে মুগ্ধ হয়ে ওঠা আমার পক্ষে ওই ধাক্কাটা একেবারে সহজ ছিলোনা।শুক্রবারে বিস্তারিত লিখব বলে আশা রাখি(আগের একটা পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম বোধহয়...সেটি পেলে পোস্ট করব)

        জবাব দিন
  5. নঈম (৮৭-৯৩)

    সানা ভাই,
    সত্যিই খুব তাড়াহুড়া করে লেখা, প্রত্যাশা ছিল আরোও কিছু বেশী। আলোচনাটা বেশী প্রত্যাশিত ছিল ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে, হয়ে গেল ব্যাক্তি ইউনুসকে নিয়ে। ড. ইউনুস অনেক চেষ্টা করেছেন সত্যি, নোবেল পুরুষ্কারের মাধ্যমে দেশের জন্য সম্মানও বয়ে এনেছেন, একথাও সত্যি। কিন্তু তাতে করে ক্ষুদ্র ঋণের সমস্যা দূর হয়ে যায় না। আবার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দরিদ্রদের জন্য কিছু করাও জটিল (মাহমুদের ব্লগে মন্তব্য করেছিলাম)।

    তবে ড. ইউনুসের সমালোচনার সবচেয়ে বড় কারণ বা বিষয় এটাই যে, ক্ষুদ্র ঋণের প্রচারণাই তার ব্যাক্তিগত ক্যারিশমার মূলধন। অথচ এটি আসছে অনেক দরিদ্র শোষণের মাধ্যমে। দেশের আপামর জনসাধারণের দারিদ্র দূরীকরণে আপনার স্বীকৃতিও পরিষ্কার, সকল ক্রেডিটই ক্ষুদ্র ঋণের নয়, বরং বৈদেশিক মুদ্রার একটি ভাল প্রভাব আছে।

    মাহমুদকে কোট করছি:

    আমাদের রাজনীতিকরা দূর্নীতিগ্রস্ত, স্বার্থপর, বাটপার- এসবই সত্য। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণের আলোচনায় এদের টেনে আনা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক।

    ভাল কথা, আমরা বর্তমান ড. ইউনুসকে কি বলবো, অর্থনীতিবিদ (উনি তো অর্থনীতিতে নোবল পুরুষ্কার পান নি!) নাকি রাজনীতিবিদ?

    জবাব দিন
  6. আহমদ (৮৮-৯৪)

    লেখাটা পড়লাম। মন্তব্যগুলোও পড়ছি। আশাকরি পরবর্তি মন্তব্য এবং সানা ভাইয়ের জবাব -- সব মিলিয়ে বিভিন্ন মতামতে এখানে আমার মত পাঠকেরা উপকৃ্ত হবে।


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন
  7. শেখ আলীমুজ্জামান (১৯৭০-৭৬)

    ডিয়ার সানা,
    অভিনন্দন।
    গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাপক ইউনুসের কৃতিত্ব যা তাঁর জন্য এবং দেশের জন্য এনে দিয়েছে বিপুল সম্মান। তবে তোমার অবগতির জন্য জানাচ্ছি, গ্রামীণ ফোনের কৃতিত্ব কিন্তু আমাদের ইকবাল জাহিদুল কাদিরের (ঝকক-৭/৩৪২), যা অনেকেরই অজানা। শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে, তাকে আমেরিকায় ফিরে যেতে হয়েছিল।

    জবাব দিন
  8. মরতুজা (৯১-৯৭)

    আমার মনে হয় না নোবেল পাওয়া বা গ্রামীন ব্যাঙ্কের জন্যই আজ ইউনুস সাহেবের পিছনে এত ঝামেলা।

    গত তত্ত্বাবধায়কের সময় তিনি সামরিক শক্তির সহায়তায় যেভাবে ফাকা মাঠে গোল দিতে চেয়েছিলেন তার রাগই হাসিনা এখন ঝাড়ছেন। খালেদা এলেও রেহাই পাবেন কিনা সন্দেহ

    জবাব দিন
  9. রাব্বী (৯২-৯৮)

    আমার দুই আনা - লাবলু ভাই, আপনার লেখার স্পিরিট আমার ভাল লাগে, এটাও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বাতচিত/সমালোচনা হওয়া ভাল, প্রয়োজন আছে। কিন্তু বর্তমান ক্ষুদ্রঋণবিরোধী রাজনৈতিক ক্যাম্পেইনটা যে উদ্দেশ্য এবং প্রক্রিয়ায় শুরু এবং প্রবাহিত হয়েছে সেটি ভাল লাগেনি। তাই যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন তা আমার কাছে প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক দিক দিয়ে দেখলে ক্ষুদ্রঋণের বেশকিছু ফাঁকফোকড় আছে বলেই মনে হয়। এটাও আবার ঠিক, এখন পর্যন্ত এমন কোন উন্নয়ন কৌশল নেই (আমার যে সামান্য জানা তারমধ্যে আরকি) যেটি ত্রুটিমুক্ত এবং সমালোচনার উদ্ধে। ক্ষুদ্রঋণটাকে সমালোচকের চোখেই দেখি, কিন্তু কনক্লুসিভ না। এই রিপোর্টটি দেখতে পারেন সময় থাকলে।


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  10. হোসেন (৯৯-০৫)

    আমি ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে খুব বেশী একাডেমিক জ্ঞাণ রাখি না। তবে সাধারন জ্ঞাণ হতে আমি কিছু কথা বলতে চাই। যেহেতু এই বিষয়ে আমার অথরিটি শুন্য সুতরাং আমার কথার সপক্ষে তেমন কোন গবেষণামূলক তথ্য উপাত্তও দিতে পারব না।

    প্রথমত ক্ষুদ্র ঋণকে আমার কখনই মূলধারার অর্থনৈতিক মডেল মনে হয় নি। এর পেছনে প্রধান কারন হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে সরকারের পাবলিক সার্ভিসের আওতা সংকুচিত করা হয় যেটা দারিদ্রর সাথে যুদ্ধ করার প্রথম প্রথম বাধাস্বরুপ। কারন জামানতহীন ঋণ যদি দেয়া হয় সেটা উচিত হবে শুধুমাত্র সরকারের তত্বাবধানে যার মোটিভ সুনির্দিষ্ট ভাবে পাবলিক সার্ভিস, প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশন নয়। বেসরকারী ভাবে জামানত বিহীন ঋণের প্রচলন শুধুমাত্র দারিদ্র বিমোচনএর লক্ষ্য থেকে দুরে চলে যায় তা নয়, একি সাথে নিম্নআয়ের মানুষদের একটি বিপদজনক পুজির আওতায় নিয়ে আসে। যে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ঋণের ব্যাবসা করবে তাদেরকে প্রতিটি ঋণের জন্যে বিপুল পরিমান ঝুকি নিতে হয় যে ঝুকি কমপেনসেট করার জন্যে তাদেরকে অবধারিতভাবে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে যার ফলাফল শেষ পর্যন্ত আর দারিদ্র বিমোচনের উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক হতে বাধ্য। দারিদ্র বিমোচনকে প্রাথমিক উদ্দেশ্য ধরলে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই ক্ষতি সাসটেইন করার মত ক্ষমতা থাকতে হবে যা সরকার ছাড়া আর কারো নেই। তাছাড়া বেসরকারী ক্ষুদ্র ঋণ সরকারের দায় কাগজে কলমে কমায় যা অনুন্নত দেশের ক্ষেত্রে বিপদজনক। একটি কল্যানকামী রাষ্ট্রের সেজন্যে ক্ষুদ্র ঋণ , মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ইত্যাদি এর মত অন্তস্বার শুন্য অর্থনৈতিক মডেল কে এড়িয়ে চলা উচিত।
    আর যে বাজারে ঝুকি বেশি সেই বাজার সবসময়ই আনস্টেবল, তাই সমাজের সবচেয়ে কম আয়ের মানুষগুলোকে সবচেয়ে বেশি ঝুকির পুজির আওতায় না আনাই ভালো।

    ড. ইউনুস শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন । শান্তিতে নোবেলের কুখ্যাতি আছে বৃহত শক্তিগুলোর আজ্ঞাবহদের পুরস্কারের মাধ্যম হিসেবে। পৃথিবীর দরিদ্রতম অধিকাংশ মানুষ গুলোকে বাজার সঙ্কট , অতিউতপাদন, রিজার্ভে অব্যাবহৃত পরে থাকা শীতল পুজির নতুন বাজারের মাঝে আনার নিষ্ঠুর পদ্ধতিকে জাস্টিফিকেশনের জন্যে তাকে এই পুরস্কার দেয়াই যেতে পারে। তবে তিনি এই ভাওতাবাজির আবিস্কর্তা ছিলেন না বলে হয়ত অর্থনীতির নোবেল টা পান নি, কিন্তু সবচেয়ে দরিদ্র মানুষগুলোর মাঝে সবচেয়ে ভালো ব্যাবসাটা ঠিকি করে নিয়েছেন।
    আমার কথা গুলো বাম ঘেষা মনে হতে পারে, কিন্তু আমি মনে করি সত্য কেয়ার করে না সে কোন কোর্টে পরল।


    ------------------------------------------------------------------
    কামলা খেটে যাই

    জবাব দিন
  11. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    সানা ভাই একথা ঠিক যে আমরা প্রবাসী বাংগালিদের ভারতীয়, চায়নীজরা ডঃ মুহাম্মাদ ইউনুসের কথা উল্লেখ করে বাহবা দিতো। নরওয়ের ডকুমেন্টারীটার পর সবার কথা ছিল এখন কী হবে?
    আপনার লেখাটার টোনটা আমার কাছে এরকম মনে হয়েছে যে আমাদের স্বভাবে ডাইভার্সিফাই ব্যাপারটা নেই। সব ডিম এক পাত্রে রাখার মতো হাই প্রোফাইল এই ঘটনাকে সমালোচনা করতে নিজেদের সব শক্তি খরচ করে ফেললাম - ওদিকে দরজার পেছনে আরো যে কতকিছু ঘটে যাচ্ছে তা নিয়ে বিন্দু মাত্র মাথা ব্যাথা নেই। অন্ততঃ নিজের ব্যক্তিগত ্লাভের জন্য এসব কিছু করছেন না বলে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুছ আরেকটি সুযোগ পাবার অপেক্ষা রাখে।
    ্বুশের আমলে আমেরিকায় লোকজনদের ভুলিয়ে ভুলিয়ে লোন দিয়ে বাড়ি কিনিয়ে পুরো অর্থনীতি টলিয়ে দিয়েছে এখানকার ব্যাংকিং ব্যবস্থার রাঘব-বোয়ালরা। প্রান্তিক জনগন ভূগছে, কিন্তু রাঘব-বোয়ালরা (কিছু বাদে) এখনও আরামেই আছে। দারিদ্র একটা চক্র। কোনভাবে এর মধ্যে পড়ে গেলে সহজে বেরুবার উপায় নেই। তা সে বাংলাদেশেই হোক আর ামেরিকাতেই হোক।
    তবে এটাও ঠিক ক্ষুদ্রঋণ এমন একটা প্রতিষ্ঠিত ইনিস্টিটিশন হয়ে গিয়েছিলো যে যদু মধু এনজিওরাও এই ব্রয়ান্ডিংএর সুবিধা নিয়ে মানুষের মাথায় কাঁঠাল ভাংগছে।

    আমাদের প্রবাসীদের কাছে একটা জ্বলন্ত প্রশ্ন ঢাকায় থাকার খরচ এতো বেড়ে গেছে যে মানুষ কিভাবে তা সামাল দিচ্ছে? খাদ্যদ্রব্যের মূল্য তো আমেরিকা থেকেও বেশি।

    অঃ টঃ নিজের নাম দেখে যথারীতি খুবি আহ্লাদিত।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহমদ (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।