মিস্টি আসলে কতো মিস্টি!!

এক. ‘চিনি’ দারুণ মিস্টি শব্দ। বুঝের বয়স থেকেই চিনি বা মিস্টি খেতে পছন্দ করেছি। মা গল্প করেন, ভালোবাসতাম বলে শিশু বয়সে বাবা প্রায়ই অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে আমার জন্য মিস্টি নিয়ে আসতেন। আমি নাকি ছোট ভাইবোনদের তুলনায় একটু বেশি ‘সুযোগ-সুবিধা’ পেয়েছিলাম! স্মৃতিতে ভাসে গুড়ো দুধের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে কতো খেয়েছি। এই কদিন আগেও ফ্রিজ খুলে প্যাকেট থেকে তুলে নিয়ে মুখে চালান করেছি কতো মিস্টি।

দুই. স্বাধীনতার পর সব কিছুর অভাব দেশে। তরল দুধ, গুড়ো দুধ, চিনি আরো কতো কিছুর আকাল। চুয়াত্তরে তো ভাতের আকাল এলো। যুদ্ধোত্তর দেশে কতো ত্রাণ এলো নানা দেশ থেকে। সে সময় কোনো দেশ থেকে মিস্টি ‘ছাতু’ (চাল-গম-ডালের গুড়ো) পাঠিয়েছিল। সরকার বাহাদুর সেই ছাতু পাঠিয়ে দিলেন স্কুলে স্কুলে। আমাদের মেপে মেপে সেই ছাতু দেওয়া হতো। কি আনন্দেই না তা খেতাম।

তিন. সেই মিস্টির আরেক নাম ‘ডেজার্ট’। রসগোল্লা, পানতোয়া, রসমালাই, দই, কেক, পুডিং, পাই, আইসক্রিম- সবই নাকি ডেজার্ট। মনের আনন্দে খাই। সাংবাদিকতা পেশা, তাই প্রায়ই পাঁচতারা হোটেলে দাওয়াত আসে। সেখানে থাকে ডেজার্টের নানান পদ। এই জীবনে কতো মিস্টিই তো খেলাম। কিন্তু হাতে বানানো চিড়া, মুড়ির মোয়া, নারকেল, তিলের নাড়ুর তুলনা হয় না। লক্ষ্মী পুজার পর সহকর্মীরা নিয়ে আসে। অসাধারণ। আর চকলেট? নিজে যতোনা খেয়েছি, তার চেয়ে ছেলেকে বেশি খাইয়েছি। সেই কবে বেলজিয়াম গিয়েছিলাম, মনে আছে তৃপ্তি মিটিয়ে চকলেট কিনে এনেছিলাম ছেলের জন্য। আবার ছেলের সঙ্গে কাড়াকাড়ি করে সেসব চকলেট নিজেও গিলেছি। এখনো দেশের বাইরে গেলে প্রচুর চকলেট কিনি। বাসা এবং অফিসের সবাইকে এতেই তুষ্ট করা যায়!

কত্তো মিস্টি!!

চার. ভাবা যায়, সেই আমি গত একমাস ধরে কোনো মিস্টি খাইনি? হ্যা, ঠিক ধরে ফেলেছে সবাই। ধরা খেয়েছি অবশেষে। ফাস্টিং সুগার ১১.২ আর আফটার ব্রেকফাস্ট ১৩.৫!! আর তা দেখে সঙ্গে সঙ্গে মিস্টি খাওয়া একেবারে বন্ধ! আমার ওপর এখন মায়ের নজরদারি, ছেলের নজরদারি!! খেতে বসলে ছেলে বলে ওঠে, বাবা তুমি ভাত বেশি খাচ্ছ। অথচ অনেকদিন আমার এই সুগার লেভেলটা ৫ থেকে ৬ এর মধ্যে আটকে ছিল।

পাঁচ. নিজেকে নিয়ে অবাক হয়ে যাচ্ছি! এতো সহজেই মিস্টি ছেড়ে দিলাম? বিয়ের দাওয়াতে যাচ্ছি, পাঁচতারা হোটেলেও। কিন্তু ডেজার্ট-মিস্টি, আর না।

ছয়. অথচ, সেই ক্লাস নাইন থেকে সিগেরেট টানছি। ক্যালকুলেটর নিয়ে বসা যেতে পারে, কতো লাখ লাখ টাকা স্রেফ টেনে উড়িয়ে দিয়েছি। টানতে মোটেও মিস্টির মতো লোভনীয় নয়। বাবা টের পেয়েছিলেন। সরাসরি নিষেধ করেননি, তবে নিজে সিগেরেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। মা, বউ, ছেলে, ভাই-বোন সবার কতো আপত্তি। সিগেরেটের গায়ে লেখা থাকে নানা সতর্ক বাণী। জানি কতো খারাপ ‘বস্তু’টি এতোবছর ধরে টেনে যাচ্ছি। কিন্তু এতো সহজে তো সিগেরেটটা ছাড়তে পারছি না। তাহলে কি এর জন্যও একটা ‘ধাক্কা’ খেতে হবে??

২,৩১৩ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “মিস্টি আসলে কতো মিস্টি!!”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    লাবলু ভাইয়ের পোস্ট, যাই আগে একটা মিষ্টি খেয়ে আসি 😀


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ছোটবেলায় প্রচুর মিষ্টি খেতাম। মিরপুর ১১ তে রাজধানী মিষ্টান্ন ভান্ডার বলে একটা দোকান ছিল (খুব সম্ভবত এখনো আছে) ঐ দোকানের একদম সাধারন সাদা মিষ্টি,আলাদা কোনও নাম ও নেই মনে হয়, খুব পছন্দ ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কবে থেকে যে জিহবার স্বাদ বদলে গেল জানা নেই, মিষ্টি আর ভালই লাগে না। এমনকি কোন ডেজার্ট এ মিষ্টির পরিমান বেশি হলেই খেতে পারি না। এখন ভাল লেগে ঝাল খেতে।

    আপনার অফিস আর বাসায় সিগারেটকে আইপি সহ ব্যান করেন... সুস্থ থাকেন 😛


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    আপনার ছেলেও আপনাকে সিগারেট খেতে মানা করে - ধন্য ছেলে। এক কাজ করে দেখতে পারেন দিনে যতটা সিগা্রেট খাবেন, সেইদিন সিসিবিতে ঠিক ততটা পোস্ট দিবেন। একটা সিগারেট = একটা পোস্ট --- শুরু করে দেন।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  4. আহ্সান (৮৮-৯৪)
    সেই ক্লাস নাইন থেকে সিগেরেট টানছি। ক্যালকুলেটর নিয়ে বসা যেতে পারে, কতো লাখ লাখ টাকা স্রেফ টেনে উড়িয়ে দিয়েছি। টানতে মোটেও মিস্টির মতো লোভনীয় নয়। বাবা টের পেয়েছিলেন। সরাসরি নিষেধ করেননি, তবে নিজে সিগেরেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। মা, বউ, ছেলে, ভাই-বোন সবার কতো আপত্তি। সিগেরেটের গায়ে লেখা থাকে নানা সতর্ক বাণী। জানি কতো খারাপ ‘বস্তু’টি এতোবছর ধরে টেনে যাচ্ছি। কিন্তু এতো সহজে তো সিগেরেটটা ছাড়তে পারছি না। তাহলে কি এর জন্যও একটা ‘ধাক্কা’ খেতে হবে??

    কেন ধাক্কা খেতে হবে সানাউল্লাহ ভাই? ছেড়ে দিলে এমন কি ক্ষতি হয়? আমরা কখনোই চাইনা আমাদের প্রিন্সিপ্যাল স্যার কোথাও কোনভাবে ধাক্কা খাক।
    ভালো থাকুন, এবং সিগারেট বিহীন সুস্থ্য থাকুন...

    জবাব দিন
      • 😛

        যখন বদের বদ আছিলাম তখনো বিড়ি খাই নাই ভাইয়া। কারন বিড়ি খাওয়ার মাঝে কোন বীরত্ব নাই। পকেটে দুই-চাইর পয়সা থাকলে যে কেউ খাইতে পারে।

        বরং বিড়ি না খাওয়ার মাঝেই বীরত্ব, সবাই খায়, আমি খাই না, আমার আসক্তি নাই। 😀

        এইসব ছোট-খাট জিনিসের কাছে আমি ধরা দেই না :grr:

        জবাব দিন
        • আহসান আকাশ (৯৬-০২)
          বরং বিড়ি না খাওয়ার মাঝেই বীরত্ব, সবাই খায়, আমি খাই না, আমার আসক্তি নাই।

          আমিও এই তত্ত্বে বিশ্বাসী... কলেজে যখন সবাই বিড়ি খাওয়া শুরু করলো তখন আমরা কয়েকজন এই ডায়লগ দিয়া পার্ট নিতাম 😀


          আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
          আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

          জবাব দিন
  5. মাহবুব (১৯৯৪-২০০০)

    আমি যে হারে আইসক্রিম খাচ্ছি আজকাল! আপনার লেখা পড়ে যদি একটু সতর্ক হই।

    শিরোনাম দেখেই মনে পড়ল সিকদার স্যারের সেই বিখ্যাত জোক। তুমি মিষ্টি খাবে না মিষ্টি তোমাকে খাবে। হা হা হা হা হা হা।

    ছোটবেলায় তো আর এর অর্থ বুঝতাম না।

    জবাব দিন
  6. শেখ আলীমুজ্জামান (১৯৭০-৭৬)
    কিন্তু এতো সহজে তো সিগেরেটটা ছাড়তে পারছি না। তাহলে কি এর জন্যও একটা ‘ধাক্কা’ খেতে হবে??

    ডিয়ার সানা, যত তাড়াতাড়ি পারো ছেড়ে দাও। মিঠে-কড়ায় তোমার, গলা খাকারি শুনলে মনে হয়- নির্ঘাত সিগারেট! আর ধাক্কাটা অনেক সময় বুকে লাগে। তাই ছেড়ে দেওয়াটাই শুভ।

    জবাব দিন
  7. রাব্বী (৯২-৯৮)

    লাবলু ভাই, কারো কথা শুনেন না। যা ভাল লাগে, তাই চালিয়ে যান। ফলো ইয়োর হার্ট :-B

    অ.ট. আমিও ক্লাস নাইন থেকে। কিন্তু এবার সিগারেটটা এক প্রকার ছেড়েই দিলাম বলা যায়। ব্যাপারটা চাইলেই পারা যায়। শুধু দুষ্টু ছেলেদের আসরে ইহকাল-পরকাল নিয়ে জমে উঠলে তখন ধার করে দুই-একটা টানা হয় :shy:


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  8. আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

    লাভলু,
    একমাত্র আমি তোমাকে শুনাতে পারি সেই নির্ভয় বানী ঃ
    ১। ঠিক তোমারই মত, আমার ফাস্টইং সুগার 7/8 এবং two hrs aftr Breakfast 10+ পাওয়া গিয়েছিল ছয় মাস আগে।চট্টগ্রামে এক এমেরিকান ডাক্তার কোন ঔষধ ছাড়া শুধু বিকালে ৩০/৪৫ মিনিট হাঁটা/ টেনিস খেলা , রাতে রুটি আর জারুরী ভাবে চা/কফিতে চিনির পরিবর্তে Zero Calories ব্যবহার করতে বলায়, আল্লাহ্‌র রহমতে বর্তমানে আমার যথাক্রমে 5.2 ও 7.6 হয়েছি।এখন আমি আবার দেদার মিষ্টি খেতে পারছি।
    মিষ্টিতো তুমি খাও, আর আমি? I live on Mishti!
    ২।ক্লাশ এইট থেকেই বদ অভ্যাসটা রফ্ত করে ছিলাম।একসময় ভাবতাম 'সিগারেটের' চেয়ে বউ ছেড়ে দেয়া অনেক সহজ, কালক্রমে এমন বিসস্থ বন্ধুকে ও পরিত্যক্ত ঘোশনা করি ২০০০ সালে । আজ আমার ১১টি ধূমপান মুক্ত বছর!!!
    ৩। কি অনুপ্রেরণা পাওয়া গেল?
    কেন ও কিভাবে ছাড়তে স্খক্ষম হোলাম আরেকদিন না হয় আবার বলা যাবে!
    So COOL DOWN my friend!


    Smile n live, help let others do!

    জবাব দিন
  9. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    লাবলু ভাই,

    লেখাটা পড়ে বিষন্ন হলো মন। আর তাই এখানে আমার ভাবনাটুকু জুড়ে দিচ্ছি।

    ১। আমার মা'র সুগার লেভেল ১০ এর ওপরে। ইন্সুলিন নিচ্ছেন। অনেক দিন হলো। মজার ব্যাপার হলো, মা কিন্তু আগে মিষ্টি ছুঁয়েও দেখতেন না। ডায়বেটিক্স দরা পড়ার পর থেকে আগ্রহ বেড়েছে এ দিকে। আর, আমার বাবা মাত্রাতিরিক্ত মিষ্টি খান। বিশেষনটা ওনার বয়স বাড়ার কারণে জুড়ে দিলাম। নয়তো বেয়াদবি হবে। ওনার ডায়বেটিক্স নাই আলহামদুলিল্লাহ। মিষ্টি যেমন খান - সমান তালে প্লেটে লবনও খান। হার্টে সমস্যা। বারণ করলে মুচকি হাসেন। কখনো রাগ করেন। শেষে বলেন - 'আর কতদিন আর খাবো। বাকি দিন গুলো স্বাদ নিয়ে খেতে দে'।
    যাইহোক, ডায়বেটিক্স এ আসলে রোগীর সাথে সাথে পরিবারের সবার একটা দায়বদ্ধতা চলে আসে। আমি সব সময় বাসায় থাকিনা। মা'কে ফোনেই বলি হাঁটছো কি না। উনি হাঁটেন মাঝে সাঝে। শিক্ষকতা করেন বলে সময় পাননা অজুহাত দেখান। আমরা সন্তানেরা অনুনয় বিনয় করি। জীবনটাকে শেষ বয়সে আর বেশী নিয়মে জড়াতে চান না যেন !
    ফয়েজ ভাই আগে আমার এক লেখায় বলেছিলেন - 'সময় থাকতে আরো মনোযোগী হতে'। পারি না - পারছি না। আমরা সব্বাই চেষ্ঠা করছি।

    আর তাই ভাইয়া এইবার কিন্তু আমি আপনার ছেলে'র দলে। 'চাচ্চু, তোর আব্বু্র আরো বেশী বেশী খেয়াল রাখিস'।

    ২। সিগারেট আমাকে ছেড়েছে ৫ বছর।। কাব্য করে এখানে বলেছি - হুমম অবশেষে

    অনেক ভাল থাকুন।
    ::salute:: (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
  10. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    লানলু ভাই, ওয়াবায়দুল্লাহ ভাইয়ের মতো আমারও মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
    আমার বাবা হার্টের রোগী। তার উপর ধরা পড়েছেন তিনি। আর সাথে একটা তথ্য সেটা হলো আমাদের দেশের বাড়ি বিক্রমপুর। মিষ্টির ব্যাপারে সবারই সুনাম। অথচ আব্বার এই বয়সে তার দুঃখেই আমি সমব্যথী।
    বড় ভাইদের কথার মাঝে সিগারেট নিয়া কথা বলতে বেয়াদবি বেয়াদবি লাগে। সিগারেট যতবার মনে মনে ছেড়ে দিতে চাই আমার বউ গোল বাধায়। সে জোর গলার সিগারেট ছাড়ার গুণগান শুরু করে। ব্যাস আমার মাথায় উল্টা লজিকে আবার আগ্রহ তৈরি হয়।

    যা হোক তামাকমুক্ত সুন্দর বিশ্ব চাই।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।