৩৪ বছরের পাপমোচন হলো আজ

ক্ষমার অযোগ্য একটি পাপের আজ বিচার হলো। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ৫ আসামির আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বেঞ্চ আজ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আসামিদের আপিলের এই চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন। এই রায় ঘোষণার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া ১২ আসামির ফাঁসির আদেশ বহাল থাকলো।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামি হলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহারিয়ার রশিদ খান, খন্দকার আবদুর রশিদ, বজলুল হুদা, শরিফুল হক ডালিম, এ এম রাশেদ চৌধুরী, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ , এস এইচ বি এম নূর চৌধুরী, মৃত আজিজ পাশা, আর্টিলারি মুহিউদ্দিন আহমেদ, মোসলেমউদ্দিন ও আবদুল মাজেদ।

এ মামলায় আপিল করেছিলেন লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, আর্টিলারি লে. কর্নেল মুহিউদ্দিন আহমেদ ও লে. কর্নেল সুলতান শাহারিয়ার রশিদ খান। তাঁরা বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছেন। ৬ জন আসামি পলাতক আছেন এবং একজন আজিজ পাশা বিদেশে মারা গেছেন।

আপিল বিভাগের বেঞ্চটি দুপুর পৌণে বারটায় এই রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চটির অপর বিচারপতিরা হলেন- মো. আবদুল আজিজ, বি কে দাস, মো. মোজাম্মেল হোসেন ও সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

এ রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৩৪ বছর আগের বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার-প্রক্রিয়া শেষ হলো।

বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট। হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে দায়ের করা হয় হত্যা মামলা। সেই মামলার চূড়ান্ত পরিণতি পেতে সময় লেগেছে ১৩ বছর।

Bangabondhu 1

বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অবিসংবাদিত এই নেতাকে হত্যা করেছিল সে সময় সেনাবাহিনীর একটি চক্রান্তকারী চক্র। তাকে হত্যার পর ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন ওই সময়কার আওয়ামী লীগ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ। তিনি খুনিদের রক্ষায় জারি করেন দায়মুক্তি অধ্যাদেশ। আর সেই অধ্যাদেশ বাতিল করতে বাঙালি সময় নেয় ২১ বছর। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলেওই বছরই নভেম্বর মাসে বাতিল করা হয় কুখ্যাত এই অধ্যাদেশটি। আর একই বছরের অক্টোবরের ২ তারিখে বঙ্গবন্ধুর আবাসিক ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মুহিতুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৪ আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন। চার আসামি মারা যাওয়ায় ২০ জনের বিরুদ্ধে ওই মামলার বিচার কাজ শুরু হয় ১৯৯৭ সালের ১২ই মার্চ, ঢাকার দায়রা জজ আদালতে।

দেড়শ’ কার্য দিবস শুনানির পর ১৯৯৮ সালে দায়রা জজ গোলাম রসুল ২০ আসামির মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ওই রায়ের পর কারাবন্দি চার আসামি অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ ও বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান হাইকোর্টে আপিল করে।

হাইকোর্টের কয়েকজন বিচারপতি মৃত্যু নিশ্চিত করার এই আপিল শুনতে বিব্রতবোধ করেন। অবশেষে ২০০০ সালের জুনে বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ও বিচারপতি মো. এবিএম খায়রুল হকের বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। ৬৩ কার্যদিবস শুনানি শেষে হাইকোর্ট ১৪ ডিসেম্বর ২০০০ সাল তারিখে এ মামলায় বিভক্ত রায় দেয়। বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। অপর বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ১৫ আসামির ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন।

২০০১ সালে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয় তৃতীয় বিচারপতি মো. ফজলুল করিমের আদালতে। তিনি ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ১২ আসামির মধ্যে পরে ওই বছরই কারাবন্দি চার আসামি আপিল শুনানি শুরুর আবেদন বা লিভ টু আপিল দায়ের করে। ৬ বছর পর ২০০৭ সালে শুরু হয় ওই লিভ টু আপিল শুনানি। ২৫ কার্যদিবস শুনানির পর আসামিদের আপিল শুনানি শুরুর অনুমতি দেন সর্বোচ্চ আদালত।

এরপর প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতির অভাবে শুনানি শুরু হতে পেরিয়ে যায় আরো ২ বছর। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে এই সমস্যার জট খুলে যায়। জুলাইয়ে আপিল বিভাগে ৪ জন বিচারপতিকে নিয়োগ দেওয়া হলে ৫ অক্টোবর আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চে শুরু হয় বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল শুনানি।

খুনিরা কে কোথায়
সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, আর্টিলারি কোরের লে. কর্নেল মহিউদ্দিন ও বরখাস্ত হওয়া সেনা কর্মকর্তা কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাসিঁর দন্ডপাওয়া আসামিদের কারাপ্রকোষ্ট- কনডেম সেলে বন্দি। এদের সবাইকে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়েরের সময় গ্রেপ্তার করা হয়। মৃত্যদণ্ড পাওয়া অপর আসামি অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর বজলুল হুদাকে ১৯৯৮ সালে থাইল্যান্ড থেকে ফেরত আনা হয়। একই দণ্ড পাওয়া আরেক পলাতক আসামি সেনাবাহিনীর ল্যান্সার ইউনিটের লে.কর্নেল একেএম মহিউদ্দিনকে ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। অবৈধভাবে বসবাস করার অভিযোগে হোমল্যান্ড সিকিউরিটিস আইনে তাকে আটক করে ওই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা। একই বছরের জুনে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয় ল্যান্সার মহিউদ্দিনকে। ওইদিন থেকেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন তিনি।

পলাতক ৭ আসামির মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে অবস্থান করার সময় মারা গেছেন। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ পাকিস্তানে, লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম কানাডায়, লে. কর্নেল নূর চৌধুরী যুক্তরাষ্টে ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিন থাইল্যান্ডে অবস্থান করছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এম এ রাশেদ চৌধুরী দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ কেনিয়ায় অবস্থান করছে ।

যেভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে ঘটে জঘন্যতম এক হত্যাকাণ্ড। বরখাস্ত হওয়া একদল সেনা সদস্যের সাথে হাত মিলিয়ে চাকরিরত কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য হত্যা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেই কালোরাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে খুনিরা মেতে উঠেছিল হত্যার উল্লাসে। বঙ্গবন্ধু, তার স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধু, ভাই, কাজের লোক সবমিলিয়ে ২১জনকে হত্যা করা হয় সেই রাতে।

সেইদিন গুলির শব্দে ফজরের আযানের আগেই ঘুম ভাঙ্গে বঙ্গবন্ধুর। যে বিষয়টি কখনো কল্পনা করেননি সেটিই চরম বাস্তব হয়ে সেই রাতে ধরা দেয় তার চোখে। গোলাগুলির শব্দে দোতলা বাড়ির উপর তলা থেকে ঘুমঘুম চোখে নিচে নেমে আসেন বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল। মুহুর্তেই স্টেনগানের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান তিনি। এরপর এলোপাথারি গুলি চলে কিছুক্ষণ।

কালো পোশাকধারী কয়েকজন দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে আনে দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে। বঙ্গবন্ধু সিঁড়ির শেষ ধাপে আসতে না আসতেই গর্জে ওঠে নূর-বজলুল হুদার অস্ত্র। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে এভাবেই বর্ননা করা হয়েছে ওই হত্যাকাণ্ডকে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর খুনিচক্র মেতে ওঠে রক্তের হোলি খেলায়। দোতলায় তারা হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলতুন্নেছা মুজিব, শেখ জামাল, বঙ্গবন্ধুর দুই পুত্রবধু আর তার ভাই শেখ নাসেরকে।

পরিবারের সবচেয়ে ছোট ছেলে শেখ রাসেলের বয়স ছিল নয়। বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষীদের সাথে তাকে আগেই বন্দি করে খুনিরা। উপরে গুলির শব্দ শুনে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য আকুতি করে ছোট্ট অবুঝ ছেলেটি। তাকেও বাঁচতে দেয়নি খুনিরা।

সেদিন বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা আর শেখ রেহেনা ছিলেন বিদেশে। আর সে কারনেই বেঁচে গেছেন তারা।

১৫ আগস্ট কালোরাতে বাঙালি হারিয়েছিল তার প্রিয়নেতাকে, জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের নায়ককে। ষড়যন্ত্র, মিথ্যা আর অপপ্রচারে তাঁর আর বাঙালি জাতির সব অর্জনকে চাপা দেওয়ার সব চেষ্টাই গত ৩৪ বছর ধরে চলেছে। চেষ্টা হয়েছে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারকে চাপা দেওয়ার। জাতি হিসাবে আমরা এতোদিন হত্যার বিচার না করে পাপের বোঝা বহন করে চলেছিলাম। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে আজ আমাদের পাপমোচন হলো।

৩৭ টি মন্তব্য : “৩৪ বছরের পাপমোচন হলো আজ”

  1. রায়হান রশিদ (৮৬ - ৯০)

    ধন্যবাদ সানা ভাই। সারা রাত জেগে ছিলাম এই খবরটার জন্য। নওরীন (আমার স্ত্রী) একটু আগে ঘুমিয়ে পড়েছে অপেক্ষা করতে করতে। ওকে জাগিয়ে খবরটা দিচ্ছি এখনই।

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ভাইয়া দায়রা আদালত যে পাচজনকে বেকসুর দিয়েছে এবং পরবর্তীতে হাইকোর্ট আরও যে তিনজনকে বেকসুর দিয়েছে তাদের পরিচয়টা যদি যোগ করে দিতেন


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় বিচারিক আদালত ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ গোলাম রসুল ১৯৯৮ সালের ৮ই নভেম্বর বরখাস্ত লে.কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানসহ ১৫ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

      মৃত্যৃদণ্ড পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারী), পলাতক লে. কর্নেল আবদুর রশিদ, পলাতক মেজর বজলুল হুদা (বর্তমানে বন্দি), পলাতক বরখাস্ত লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর শরিফুল হোসেন ওরফে শরফুল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার/ বর্তমানে বন্দি), অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল আবদুল আজিজ পাশা (প্রয়াত), ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হাশেম, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসার, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ, রিসালদার মোসলেমউদ্দিন ওরফে মোসলেহউদ্দিন

      রায়ে আসামি তাহের উদ্দিন ঠাকুর, অনারারি ক্যাপ্টেন আবদুল ওহাব জোয়ারদার, দফাদার মারফত আলী ও এল ডি আবুল হাশেম মৃধার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় নি বলে তাদের অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়

      তবে ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হাসেম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আহমেদ শরিফুল হোসেন ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসারের ফাঁসির আদেশ বাতিল করে হাইকোর্ট


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
  3. সামীউর (৯৭-০৩)

    বয়সের ভারে ন্যুজ্ব কয়েক`জনের হয়তো প্রাকৃতিক নিয়মের আগেই ফাঁসির রজ্জুতে মৃত্যু কার্যকর হবে, কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের চক্রান্তকারীরা থেকে যাবে অন্তরালে, ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুর দিকে রায় কার্যকর হবে বলে আশা করছেন আইন্মন্ত্রী।আর চারনেতা হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত আসামীদের ৫ জনই বংবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ প্রাপ্ত হয়েছে সুতরাং যৌক্তিকভাবে এদের নিয়ে আলাদা আপিল করার দরকার নেই।তবে যেহেতু এটি জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলা তাই সরকারপক্ষ এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে ঠিক করেছেন(তথ্যসূত্রঃদেশ টিভি দুপুরের সংবাদ)

      জবাব দিন
  4. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    সবার জন্য কিছু কথা।

    এক. তোমরা তো ইতিহাস জানতে চাও। আজকের প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের বিশেষ সংখ্যাগুলো পড়ো। ওখানে অনেক তথ্য পাবে। প্রথম আলোর ব্যাপারে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, কোনো তথ্যই ওখানে ভালোভাবে 'ক্রস চেক' না করে ছাপা হয় না।

    দুই. রায় কার্যকর করা ব্যাপারে আইনজীবীদের বক্তব্য থেকে বোঝা গেল, পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে বন্দি ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে এক থেকে দুই মাস সময় লাগবে। পলাতকরা আপাততঃ নিরাপদ। তাই সাব্বির বা অন্য যারা হতাশ, তারা আপাততঃ বুকে আরো দুই মাস পাথর চাপা দাও।

    তিন. চক্রান্তকারীরা সব সময় ধরা পড়ে না রশিদ, সামীউর। তবে ইতিহাস অনুসন্ধানে দেখা ও জানা গেছে, '৭৫-এর অন্ততঃ এক বছর আগে থেকেই ফারুক-রশিদ চক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও ক্ষমতা দখল করে "ইসলামিক বাংলাদেশ" করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। এরাই বিভিন্ন দূতাবাসে যোগাযোগ করে। এক্ষেত্রে চরম ডান ও বামরা একই লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছিল। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এই ইতিহাসের একজন সিরিয়াস পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক। এবিসি রেডিওতে আজ বিকেল ৩টার খবরে তার একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রচার হয়। আমি অডিও ক্লিপ হিসাবে সেটা আপলোড করে দেবো। শুনে দেখো। '৮৯, '৯১-এ উনার কিছু লেখা পড়ছিলাম। লিবিয়া, পাকিস্তান, সৌদি আরব এই চক্রকে সব সময় অর্থ সহায়তা দিয়েছে। আর দেশের ভেতরে জিয়া, এরশাদ ও প্রথম মেয়াদে খালেদা জিয়া খুনি চক্রকে রক্ষা ও সহায়তা দিয়েছে। সিআইএ'র সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করেছেন লরেন্স লিফৎশুলজ- 'দ্য আনফিনিশড রেভ্যুলিউশন' গ্রন্থের লেখক।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • সামীউর (৯৭-০৩)

      লাবলু ভাই, গত কাল ও আজকে একুশে টিভিতে মেজর ফারুক ও কর্নেল রশীদ এর সাক্ষাতকারের ক্লিও দেখলাম, যেখানে তারা জিয়া ও খন্দকার মোশতাকের সাথে আঁতাতের কথা স্বীকার করে। এই সাক্ষাতকার কোথায় , কোন প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া, প্লিজ একটু কি জানাতে পারবেন?

      জবাব দিন
    • সামীউর (৯৭-০৩)

      যারা পরে খুনিদের পৃষ্ঠপোষোকতা করেছে, দেশের বাইরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকুরি দিয়ে পাঠিয়েছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী বানিয়েছে তাদের কি হবে।? অলিভার ক্রম ওয়েলকে যদি তার কৃতকর্মের জন্য মরোনত্তর শিরোচ্ছেদ , ও ফাঁসি দেওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশেরও খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমানকে মরোনোত্তর ফাঁসি দেওয়া উচিত।

      জবাব দিন
        • ফয়েজ (৮৭-৯৩)
          খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমানকে মরোনোত্তর ফাঁসি দেওয়া উচিত

          🙂
          এরশাদ কে বাদ দিলে কেন? এরশাদ এর সংগে সাম্প্রতিক আতঁতের জন্য হাসিনাই বা বাদ যায় কি জন্য?


          পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

          জবাব দিন
          • সামীউর (৯৭-০৩)

            কারণ আমি উপরে অন্য একটি মন্তব্যে যে সাক্ষাতকারের কথা বলেছি, সেখানে দু আত্মস্বীকৃত খুনি খন্দকার মোশতাক ও জিয়া এর সাথে তাদের আঁতাত এর কথা স্বীকার করেছে!

            জবাব দিন
            • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

              আমি নিশ্চিত নই, ষড়যন্ত্রের কথা জানা, এবং আতাঁত এক অর্থ কিনা? বঙ্গবন্ধু নিজেও জানতেন তাকে হত্যার চেস্টা করা হবে, তার মানে এই নয় তিনি নিজেই আতাঁত করেছেন।

              আমি তোমার কথা বুঝতে ভুল করেছি বোধহয়, কারন তুমি "পৃষ্টপোষক" এবং "আতাঁত" দুটো শব্দ ব্যবহার করেছো।

              শুধু তুমি নয়, আমি প্রথম আলোর মতিউর রহমান সাহেবের রিপোর্টেও বিভ্রান্ত। তিনি সব সরকারই কিভাবে খুনীদের পৃষ্টপোষকতা করেছে তার ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া। এদের বাদ দেয়ার কারন বুঝিনি।

              ৭৫ এর পরবর্তীতে মোস্তাক সরকার এর সংগে হাত মিলানো সব নেতা নেত্রীকে কি আওয়ামী লীগ বাদ দিয়ে দিয়েছে তাদের দল থেকে পুরোপুরি? আমার কাছে পুরো তথ্য নেই, তোমার কাছে থাকলে জানাবে প্লিজ।


              পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

              জবাব দিন
              • কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
                আমি নিশ্চিত নই, ষড়যন্ত্রের কথা জানা, এবং আতাঁত এক অর্থ কিনা? বঙ্গবন্ধু নিজেও জানতেন তাকে হত্যার চেস্টা করা হবে, তার মানে এই নয় তিনি নিজেই আতাঁত করেছেন।

                ফয়েজ ভাই,
                বঙ্গবন্ধুর নিজে জানা তাকে হত্যার চেষ্টা হবে আর তার মন্ত্রীসভার একজন এবং সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ কর্তার হত্যাকারীদের প্ল্যান প্রোগ্রাম পুরা জানাটাকি বস্‌ এক হলো? 'আপনাকে যখন আমি বলে যাবো যে বস্‌ আমরা এই জিনিস করতে যাচ্ছি, আর আপনি সেটা শুনে বলবেন সিনিয়র হিসেবেতো আমি পারবোনা, তোমরা জুনিয়ররা আছো, গো এহ্যাড!' এটাকে সবাই আতাত, ষড়যন্ত্র পৃষ্ঠপোষকতা যা ইচ্ছা ট্যাগিং করুক, হত্যাকারীদের সমতুল্য ঘৃণ্য এবং একই শাস্তির দাবীদার আরেকজন মানুষকেই সামনে নিয়ে আসে।
                ভুল হলে ধরিয়ে দিয়েন বস্‌।


                সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

                জবাব দিন
                • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

                  না দুটো এক নয়। এটা মানছি।

                  আমি আসলে আংগুল তুলেছি অন্য কারনে। জিয়াউর রহমান একটা বড় পার্টির প্রতিস্টাতা, আওয়ামী বিরোধীরা বি এন পির কাছে আশ্রয় নিবে এটাই সহজাত, এবং বি এন পিও তাদের ব্যবহার করবে, কারন তার মূল প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। যেহেতু মূল শত্রু একই, নিজেদের শত্রুতা তারা ভুলে যাবে। তাই এটা আমার কাছে বড় স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি এগুলো পছন্দ করি কি করি না তা পরের ব্যাপার।

                  আমার প্রশ্ন ঘর নিয়ে। আমি জানতে চাইছি আওয়ামী এর ঘরের কথা।

                  আমাকে বুঝাও, ৭৫ এর মোস্তাক সরকারের লোকজন কেন এখনো আওয়ামী লীগে? মোস্তাক সরকার কে সমর্থন করা জেনারেল কিভাবে আসে, কিভাবে আসে নেতা সচিব, আমলারা?

                  তুমি নিজের ঘরে দূর্বৃত্ত পুষে আরেকজনকে সন্ত্রাসী বলবা, তুমি এটা করতে পার, তোমার অধিকার, মানা না মানা আমার ইচ্ছা।


                  পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

                  জবাব দিন
      • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

        সর্বান্তকরণে সহমত সামীউরের সাথে। খুনিরা খুন করে জেলে যায় আর আমাদের দেশে পায় সিভিল (মতান্তরে সব ধরণের সরকারী চাকুরির) সার্ভিসের সবচাইতে লোভনীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের চাকুরি।১২ টা খুনীর বিভিন্ন দেশের থার্ড সেক্রেটারি,সেকেন্ড সেক্রেটারি,ফার্স্ট সেক্রেটারি,চার্জ দা এফেয়ার্স এইসব পদে নিয়োগ দেখে এর জন্যে দায়ী সেই শুয়োরের বাচ্চার মুখে প্রশ্রাব করে দিতে ইচ্ছে করছিল।আমার ক্ষমতা থাকলে একে জীবিত করে আবার মারতাম।

        জবাব দিন
  5. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    আমি এখনও বুঝিনা খুনীরা কি পেতে চেয়েছিল এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে । তারা কি একবার ও ভাবেনি ইতিহাস কিভাবে তাদের বিচার করবে ?তাদের পরিবার পরিজনকে সারা জীবন এমন খুনীর ট্যাগ লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে ?
    বাংলার মাটিতে সকল দেশবিরোধীদের বিচার চাই।

    লেখার জন্য লাবলুভাই কে ধন্যবাদ। আপনার কাছে ইতিহাসের এসব কথা গুলো জানতে খুব ভালো লাগে। নিজে খুব বেশি পড়াশোনা করার সময় পাই না এসব নিয়ে। জানার জন্য এই ব্লগগুলো ই ভরসা। তাই এই সিসিবির কাছে আরো বেশি বেশি আশা করি ।

    জবাব দিন
    • কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

      মোস্তফা ভাই ইম্পর্টেন্ট পয়েন্ট আনসেন। এই সরকারের কমিটমেন্ট আসলেই বুঝা যাবে চারনেতার হত্যাকান্ডের বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় কত তাড়াতাড়ি তুলবে সেটা দেখে।
      দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অবশ্য এরাও কিছু করবেনা। তার প্রমাণ অলরেডি দেয়া শুরু করে দিছেন উনারা 😀 তার উপর দশের বাইরে যাওয়ার আই ওয়াশ পাবলিকরে দেখানোর সুযোগতো আছেই।


      সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

      জবাব দিন
  6. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    আরো কঠোর কোন শাস্তি থাকলে আমি সেটা দেয়ার দাবি জানাতাম।
    শুধু একবার ফাঁসি এ পাপের শাস্তি নয়।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  7. খালেদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    আমি বিরুদ্ধমত পছন্দ করি, তাই ফয়েজ ভাইএর কথাটা মনে ধরছে।

    সানা ভাইকে ধন্যবাদ দেয়া না দেয়া একই কথা। যার ব্লগের কারনে এত ইতিহাস জানতে পারি আর অন্যদের সাথে কথা বলতে পারি, তার সাথে সম্পর্কটা এত কাছের হয়ে যায় যে ধন্যবাদ দিতে কেমন জানি অস্বস্তি লাগে। নিজের বাপ-মারে কে সামনা সামনি ধন্যবাদ দিসে তারে মানুষ বানানোর জন্য?

    জবাব দিন
  8. রকিব (০১-০৭)

    অবশেষে ফাঁসি কার্যকর হলো পাঁচজনের।
    মৃত্যু বোধহয় এদের জন্য খুব নগণ্য শাস্তি হয়ে যায়।
    বাকিদের ফাঁসির জন্য অপেক্ষায় রইলাম।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আঁধার

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।