স্মৃতির ঝাঁপি : ইতিহাসের কালো অধ্যায়-১

প্রথম পর্ব ।। দ্বিতীয় পর্ব ।। তৃতীয় পর্ব ।। চতৃর্থ পর্ব ।। পঞ্চম পর্ব।। ষষ্ঠ পর্ব

১৯৭৫ সাল নিয়ে আমাদের জানার আগ্রহ ভীষণ। বাংলাদেশের ৩৮ বছরের ইতিহাসে ওই সময়টা ছিল প্রচণ্ড অস্থিরতা আর বিভ্রান্তির। রাজনীতি নিয়ে জাতি হিসাবে বাঙালির আগ্রহ সম্ভবত বিশ্বে বিরল। এতো দরিদ্র, এতো ছোট অথচ জনবহুল এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশের মানুষের এইরকম রাজনৈতিক সচেতনতা আমি জানি না আর কোথাও দেখা যায় কিনা!

কি ঘটেছিল ১৯৭৫ সালে? স্বাধীন এবং নবীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এই বছরটার কথা কি লজ্জার কালো কালিতে লেখা থাকবে? বলা হবে অন্ধকারের সময়? একের পর এক সব অকল্পনীয় সব ঘটনা। কোনটা ফেলে কোনটার কথা বলবো? সিসিবির পাঠকদের আগ্রহে এই ধারাবাহিকে আমাকে আবার পেছনে যেতে হচ্ছে। এর অনেক কিছুই হয়তো অনেকে জানে। তারপরও সবকিছুকে একটা সূতোয় গাঁথা এবং তার ওপর নিজের পর্যবেক্ষণ যুক্ত করা নিঃসন্দেহে উপভোগ্য বিষয়। আমার পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সবাই একমত হবে, এমন উদ্ভট আকাঙ্খা করি না, চাইও না। বরং ভিন্নমত আসলে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক জমে ওঠে। নিজের কোনো বিভ্রান্তি থাকলে সেটাও দূর করার সুযোগ তৈরি হয়।

বছরের শুরুতেই ২ জানুয়ারি দেশের মানুষ হতভম্ব হয়ে যায় আত্মগোপনে থাকা মাওবাদী সর্বহারা পার্টির নেতা সিরাজ শিকদারের মৃত্যুর খবর শুনে। ভারতের মাওবাদী নকশালপন্থী চারু মজুমদারের অন্ধ অনুসরণে সিরাজ শিকদার সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পথ বেছে নিয়েছিলেন স্বাধীনতার পরপর। নকশালবাড়ি বলে একটা জায়গা থেকে চারু মজুমদার ও তার দলের সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল বলে পরে নকশালপন্থী শব্দটা চরমপন্থী মাওবাদীদের বোঝাতে ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। থানা দখল, পুলিশের অস্ত্র লুট, ব্যাংক লুট, জোতদার (গ্রামের ভূস্বামী) ও আওয়ামী লীগের নেতা-সমর্থকদের হত্যা ছিল তার রাজনৈতিক কৌশল। তার রাজনীতি সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া ছিল সামান্যই। ঢাকা ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ওই রাজনীতিতে আকৃষ্ট হলেও পশ্চিমবঙ্গে নকশালবাড়ি আন্দোলন যতোটা তরুণ-যুবকদের টেনেছিল বাংলাদেশে সেটা হয়নি। পুলিশ বলেছিল, গ্রেপ্তার হওয়া সিরাজ শিকদার তাদের গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যেতে চাইলে গুলিতে তিনি নিহত হন। কিন্তু পুলিশের ওই বিবৃতি মানুষ তখনো বিশ্বাস করেনি, আজো করেনা। যেমন এখন ক্রসফায়ারে মৃত্যুর একটি গল্পও আমরা বিশ্বাস করিনা।

সিরাজ শিকদারের রাজনীতি, আদর্শ হঠকারিতা মনে হতে পারে, কারো কারো কাছে ভুল মনে হতে পারে- কিন্তু তাই বলে তাকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা!

স্বাধীনতার পরের বছরগুলোতে হাজার হাজার রাজনৈতিক হত্যা হয়েছে, গুপ্তহত্যা, পরিকল্পিত খুন সবই ঘটেছে। তেমনি একটা ঘটনা ছিল ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে ৭ খুনের ঘটনা। সারা দেশ চমকে উঠেছিল এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞে। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীন কোন্দলের পরিণতি ছিল এই হত্যাকাণ্ড। বর্তমান জাগপা নেতা শফিউল আলম প্রধান ছিল ওই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের হোতা।

তালুকদার মনিরুজ্জামানের বই থেকে উদ্ধুতি দিয়ে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ তার “বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড : ফ্যাক্টস অ্যান্ড ডকুমেন্টস” বইয়ে জানান, ১৯৭২ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৭৩ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ২,০৩৫ টি গুপ্তহত্যা, ৩৩৭টি অপহরণ, ১৯০টি ধর্ষন, ৪,৯০৭টি ডাকাতির ঘটনা ঘটে এবং ৪,০২৫ জন বিভিন্ন চরমপন্থী নানা দলের হাতে খুন হন। ১৯৭৪ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে জানালেন, জাসদের গণবাহিনী, চীনাপন্থী বিভিন্ন উপদল ও চরমপন্থী নানা সশস্ত্র শক্তির হাতে ১৫০টি ছোট-বড় হাটবাজার লুট, অর্ধশত ব্যাংক ডাকাতি, প্রায় দুই ডজন থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি লুট হয়েছে।

স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২ সালেই ছাত্রলীগ বিভক্ত হয়েছিল। ২১ জুলাই আওয়ামী লীগপন্থী নূরে আলম সিদ্দিকীর আহ্বানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগ দেন বঙ্গবন্ধু। আর একই সময় পল্টন ময়দানে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে ছাত্রলীগের আরেক সম্মেলন করেন আ স ম আব্দুর রব। ছাত্রলীগের মতো একে একে শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ বিভক্ত হয়। আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে রব, শাজাহান সিরাজ, হাসানুল হক ইনুরাই ওই বছরই জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ গঠন করে। কর্নেল আবু তাহের ১৯৭৪ সালে সামরিক বাহিনীর জেসিও-এনসিওদের মধ্যে গঠন করেন “বিপ্লবী গণবাহিনী”।

স্বাধীনতাত্তোর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বিরোধীতা যেমন শুরু থেকে দানা বাঁধছিল, তেমনি আওয়ামী লীগ নিজেও দলীয় কোন্দলে ডুবে গিয়েছিল। খন্দকার মোশতাক, মাহবুবুল আলম চাষী, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, শাহ মোয়াজ্জেম চক্র সক্রিয় ছিল কোনোভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে আবারো একটা সম্পর্কে জড়ানো যায় কিনা সেটা নিয়ে। কিন্তু জেলায় জেলায় অবস্থাটা কেমন ছিল। আওয়ামী লীগ নেতারা পরস্পরের বিরুদ্ধে চরম কোন্দলে জড়িয়েছিলেন। রক্ষী বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার, শ্রমিক লীগের নামে “লাল বাহিনী” গড়ে তোলা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার নামে চরম দলবাজি- এসব দেখে দেশের মানুষ দলটি এবং নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়েছে। আর এসবই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। দেখা গেছে, ষড়যন্ত্রকারীরা বরং বঙ্গবন্ধুর প্রশ্রয় পেয়েছে। ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু বেতার ভাষণে বললেন, “তিন হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে চারজন জাতীয় সংসদ সদস্যকে।” ডিসেম্বরের শেষে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।

তারপর ‘৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে ভীষণ সমালোচিত সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস হয়। সংসদে আওয়ামী লীগের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যগরিস্টতা থাকায় এটা করতে বঙ্গবন্ধুকে কোনো সমস্যায় পরতে হয়নি। তিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নিলেন। জাতীয় দল ঘোষণা হলো। সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার প্রচলন হলো। পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় দল হিসাবে “বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ- বাকশাল” গঠিত হয়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে ভীষণ উচ্ছাস দখো গেলেও সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন মানুষ পছন্দ করেনি।

বঙ্গবন্ধু নিজে সারা জীবন সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। আর তিনিই কিনা একদলীয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি বেছে নিলেন! তিনি বলেছিলেন, এটা সাময়িক ব্যবস্থা। দেশের অবস্থার উন্নতি হলেই আবার সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরে যাবেন। কিন্তু সেটা আদৌ হতো কিনা কে জানে? অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ছাড়া বহুদলীয় ব্যবস্থায় ফেরা সহজ হতো না। এ নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু কি হলে কি হতো, এমনসব হিসাব-নিকাশের উর্ধে চলে গেলেন বঙ্গবন্ধু। অনেকে তাকে “জাতির পিতা বা জাতির জনক” বললেও আমি উনাকে “বাংলাদেশের স্থপতি” বলাটা যথার্থ মনে করি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতিক হিসাবে যতোটা সফল ছিলেন, সরকার পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনায় তার দক্ষতা নিয়ে ততোটাই প্রশ্ন রেখে গেছেন। দলের লোকজন, আত্মীয়-স্বজনের ব্যাপারে তার ভালোবাসা বা প্রশ্রয় ছিল অন্ধের মতো। এমনকি রাজনৈতিক শত্রুকেও তিনি আগলে রেখেছেন। তাকে হত্যার আশংকা সেই ‘৭৪ সাল থেকে ভারতীয়, সোভিয়েত গোয়েন্দারা জানান দিয়েছিল। কিন্তু নিজের দেশের মানুষ তাকে হত্যা করতে পারে এমন বিশ্বাসই তার ছিল না। ‘মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ’- রবীন্দ্রনাথের এই দর্শন তার মতো করে কে আর অনুসরণ করেছিল?

[ধারাবাহিকের এই পর্বটা আসতে বেশ দেরিই হলো। মাঝখানে কাজের চাপ, ক্লান্তি-বিলাস ইত্যাদি ইত্যাদি নানা অজুহাত আমার কাছে আছে। তবে সেসব যাই হোক, ধারাবাহিক দ্রুত না এগোলে পাঠকের আকর্ষন-মনোযোগ হারায়। আশা করি আগামীতে আর এতোটা বিলম্ব হবে না।]

৬২ টি মন্তব্য : “স্মৃতির ঝাঁপি : ইতিহাসের কালো অধ্যায়-১”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতিক হিসাবে যতোটা সফল ছিলেন, সরকার পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনায় তার দক্ষতা নিয়ে ততোটাই প্রশ্ন রেখে গেছেন

    আমাদের দূর্ভাগ্য... 🙁

    সানা ভাই, পরের পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকলাম... :dreamy:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      ধন্যবাদ ফয়েজ। এটা সত্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের প্রতি আমার পক্ষপাত থাকতে পারে। কিন্তু ঘটনাবলী তো নিজেই সত্য। সেই সত্যকে তো আমি বিকৃত করতে পারি না। তাহলে মিথ্যাবাদী অথবা তথ্য বিকৃতকারী হিসাবে চিহ্নিত হবো। ইতিহাসে যার যা অবদান তার স্বীকৃতি দিতেই হবে। আমি নিজে কাউকে ফেরেশতা কিম্বা শয়তান বানাতে চাইলেও ইতিহাস একসময় সত্যটাই খুঁড়ে বের করে আনবে। চিন্তাভাবনা ও কাজে আমি সবসময় দলনিরপেক্ষতা এবং সততাকে মূল্য দিই।


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
    • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
      আপনার নজিরবিহীন নিরপেক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করেছে

      সানা ভাই, আমিও মুগ্ধ, খুবই। :boss: :boss: তবে নিরপেক্ষতা নয়, যে দিকটা মোটামুটি উপক্ষিত থেকে গেছে এতোদিন সেই দিকটা তুলে ধরায়।

      নিরপেক্ষ ইতিহাস অলীক, বাস্তবে সবই কোন না কোন পক্ষ; আমাদের সচেতনতায়, অবচেতনেও।


      There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

      জবাব দিন
  2. সেলিনা (১৯৮৮-১৯৯৪)

    অনেক দিন অপেক্ষা করে ছিলাম এটার জন্য। ধন্যবাদ ভাইয়া।

    তারপর ‘৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে ভীষণ সমালোচিত সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস হয়। ........................................................................... পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় দল হিসাবে “বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ- বাকশাল” গঠিত হয়।

    ভাইয়া এটা কি পরের বছরের ২৪শে ফেব্রুয়ারী?

    জবাব দিন
  3. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    বাকশাল গঠন এবং সে বিষয়ে বংগবন্ধুর চিন্তা ভাবনা নিয়ে আরো বিস্তারিত জানার আগ্রহ আছে আমার।

    বঙ্গবন্ধু নিজে সারা জীবন সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। আর তিনিই কিনা একদলীয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি বেছে নিলেন!

    ঠিক একারণেই এই ব্যাপারটা আমাকে ভাবায়। তখনকার রাজনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থা থেকে উত্তরনের অন্য কোন উপায় কি ছিল না?
    সত্যিই কি অনন্যোপায় হয়ে বংগবন্ধু এই ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন? অথবা বাকশাল নিয়ে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি ছিল?
    জানি এখন এইসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া খুব কঠিন, হয়তো অসম্ভব। তবু আমার জানার আগ্রহ সব সময় থাকবে।

    ও, আর একটা কথা, লাবলু ভাই....এই লেখাটার প্রথম প্যারা পড়েই প্রশ্নটা মনে এল... আমরা রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী, এটা আপনার সাথে ১০০ ভাগ সহমত। কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা কি রাজনীতি সচেতন? 'সচেতন' কথাটার সাথে আমার অমত নেই, বরং নিজের মনেই সন্দেহ এল, আমি কি সচেতন?


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      কামরুল : বাকশালকে বঙ্গবন্ধুর সমর্থকরা "মুজিববাদ" এবং "দ্বিতীয় বিপ্লব" বলে আখ্যা দিয়েছিল। আসলে ষাটের দশকে বিশ্বে বেশ কতগুলো দেশ উপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে সমাজতান্ত্রিক (আসলে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নীতি) পথ বেছে নিয়েছিল। আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ, লিবিয়া (গাদ্দাফির সবুজ বিপ্লব), কিউবা এবং আরো আরো দেশ; এমনকি ভারতও রাষ্ট্রায়ত্ত খাতকে প্রাধান্য দেওয়ার নীতি অনুসরন করছিল। ঠান্ডা যুদ্ধের কালে বিশ্বটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয়ের মধ্যে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। এমনকি যে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন গড়ে ওঠেছিল সেটাও ছিল সোভিয়েত প্রভাবিত।

      স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ না পুঁজিবাদি, না সমাজতান্ত্রিক- দুটোর মিশ্রণে এক ধরণের জগাখিচুড়ি অর্থনৈতিক নীতি অনুসরন শুরু করে। সংবিধানেও রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভের একটি ছিল সমাজতন্ত্র। যা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর "সামাজিক ন্যয়বিচার" হিসাবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

      মূলতঃ গণতান্ত্রিক পথে চলার পথটি স্বাধীনতার পর ক্রমেই দুর্গম হয়ে ওঠে। নিজেদের সীমাহীন ব্যর্থতার পাশাপাশি শত্রুপক্ষের শক্তির কাছে রাষ্ট্রযন্ত্রের দুর্বলতা প্রকাশ্য হয়ে উঠে। বাকশাল কতোটা পরিকল্পিত আর কতোটা পরিস্থিতির চাপে এ নিয়ে তেমন ভালো লেখা বা মূল্যায়ন আমার নজরে আসেনি। আর ওই সময়টা এতো ছোট ছিলাম যে এ নিয়ে বলাটা কঠিন। তবে এটা যে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো চেষ্টা ছিল না সেটা নিশ্চিত। সমাজের অধিকাংশ মানুষের অংশগ্রহন ছাড়া চাপিয়ে দিয়ে কোনো পদ্ধতিই সফল হতে পারে না। পূর্ব ইউরোপে যেমন হয়েছে। সোভিয়েত সৈন্য পাঠিয়ে কমিউনিস্ট বা সমাজতন্ত্রীদের ক্ষমতায় বসিয়ে, দীর্ঘ সময় ধরে দমন-পীড়ন চালিয়েও সেই ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা গেল না। সমাজতন্ত্রের নামে সেসব দেশে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করতে মদদ জুগিয়েছিল বিলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতারা।

      বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাকশাল সাময়িক ব্যবস্থা। সময় হলেই তিনি আবার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাবেন। কিন্তু রক্তপাত ছাড়া একদলীয় শাসন থেকে বেরুনো গেছে এমন নজির বিশ্বে পাওয়া যায় না। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা-বিবৃতিতে এক ধরণের কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা পাওয়া যায়। কিন্তু একদলীয় শাসনে চাটুকার পরিবৃত্ত হয়ে সেটা কতোটা সম্ভব হতো সে আশঙ্কা কিন্তু থেকেই যায়।

      তোমার শেষ প্রশ্নটার উত্তর সহজ ও জটিল। রাজনীতি সচেতন তো অবশ্যই। এতো অল্প সময়ে এতো ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে খুব কম জাতিই গেছে। '৪৭, '৫২, '৫৪, '৬২, '৬৬, '৭০, '৭১, '৭৫, '৮১, '৯০ এবং '০৭ বছরগুলোর কথা মনে করো। আবার দুই দলে আটকে থাকা, সব অন্যায়ের সঙ্গে মানিয়ে চলা- এসব দেখলে মনে হয় আসলে আমরা উল্টোটা। নিজেকে নিয়ে ভাবো, কতোটা সময় তুমি এ নিয়ে আলোচনা, তর্ক-বিতর্কে ব্যয় করো।


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
      • কামরুল হাসান (৯৪-০০)

        কিছুদিন আগে একটা বই পড়লাম। রহীম শাহ (এই ভদ্রলোককে আমি চিনি না, বইয়ে তার সম্পর্কে কিছু লেখা নেই) সম্পাদিত 'পচাত্তরের সেই দিন'। ৭৫ এবং তার সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে লেখা বেশ কিছু প্রবন্ধের সংকলন। সেখানে 'ফার ইস্টার্ন ইকোনোমিক রিভিউ'র সাংবাদিক হারভে স্টকউইনের একটি লেখা আছে। ৩০ জানুয়ারি ১৯৭৫, বৃহস্পতিবার, তারিখে তিনি বলেছেন.........

        'শেখ মুজিব শেষ পর্যন্ত কেন পূর্ব ইউরোপীয় ধরনের শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে সোভিয়েট-শিবিরের সাথে তার মৈত্রী আরো জোরদার করতে চান তা আমি জানি। আমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। প্রেসিডেন্ট মুজিবের ধারণা, তিনি আমেরিকাকে তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমেরিকার প্রশাসন তাকে উৎখাত করতে চায়। সেজন্যেই বাংলাদেশে বড় রকমের খাদ্যাভাবের মুখে প্রতিশ্রুত চাল পাঠাতে ঢিলেমি করে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির চেষ্টা তারা করেছে। সুতরাং তিনি চরম পদক্ষেপ নিয়েছেন। অন্যদিকে আমেরিকান প্রশাসনও বুঝেছে, মুজিব চাপে বা ভয়ে ধীরে ধীরে তাদের দিকে ফিরবে সেই আশা আর নেই। তারাও এবার চরম আঘাত হানতে চাইবে। আর এ কাজ সফল করার জন্যে এগিয়ে যেতে হাতের পাঁচ পাকিন্তান তো প্রস্তুত হয়েই আছে...........'


        ---------------------------------------------------------------------------
        বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
        ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

        জবাব দিন
  4. রহমান (৯২-৯৮)

    অত্যন্ত মূল্যবান পোষ্ট :boss:

    সানা ভাই,
    আপনার কাছ থেকে রক্ষীবাহিনী গঠন এবং তাদের কার্যাবলী সমন্ধে বিস্তারিত জানতে চাই। কবে জানাবেন?

    (আগের কমেন্টটা সম্পূর্ণ আসেনি। মডারেটরদের অনুরোধ করব আগেরটা মুছে দেয়ার জন্য)

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      মন্তব্য মুছার দরকার কি? মাঝে-মধ্যে ধরা খাওয়া অবস্থার প্রমাণ রাখতে হয়!! :grr:

      রহমান, এবার তোমার মূল প্রসঙ্গ। রক্ষীবাহিনী সম্পর্কে তেমন একটা জানি না ভাইয়া। তবু যতোটা তথ্য পেয়েছি সেটা বলি।

      রক্ষীবাহিনীকে একটা আধা-সামরিক বাহিনী হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছিল। বিশ্বের অনেক দেশেই অভ্যন্তরীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি আধা-সামরিক বাহিনী রাখা হয়। বাংলাদেশে যেমন আমরা প্রায়ই এখন এ কাজে বিডিআরকে ব্যবহার করি। রক্ষীবাহিনী মূলতঃ স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মসংস্থানের একটা উদ্যোগ ছিল বলেই মনে হয়। তবে এই বাহিনী সেসময়ের সরকারি দলের পেটোয়া হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ- জাসদ, মাওবাদীদের শায়েস্তা করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতনসহ নানা অপকর্মে এই বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে। আবার মজুতদার, অসাধূ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কাজ সকরতে গিয়ে রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ির অভিযোগ উঠেছিল।

      সেসময় রক্ষীবাহিনী নিয়ে অপপ্রচারও কম ছিল না। সেনাবাহিনীর পাল্টা প্রতিষ্ঠান হিসাবে একে গড়ে তোলা হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধবাদীদের প্রচারণা ছিল। বলা হচ্ছিল, সেনাবাহিনীকে দুর্বল রেখে রক্ষীবাহিনী গড়ে তোলা হচ্ছে। একটা হিসাব পেলাম : '৭৫ সালে সেনাবাহিনীর মোট জনবল ছিল ৫৫ হাজার। আর রক্ষীবাহিনীর ছিল ২০ হাজার। '৭৫-এর পরে যখন রক্ষীবাহিনীকে সেনাবাহিনীতে একীভূত করা হয় তখনকার সেনা কর্তারা নাকি বিষ্মিতই হয়েছিলেন। কারণ সেনাবাহিনীর তুলনায় রক্ষীবাহিনীর না ছিল পর্যাপ্ত অস্ত্র, না যানবাহন বা অন্য সুবিধা। সম্ভবত এ কারণেই বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর শুনেও রক্ষীবাহিনী পর্যন্ত তাকে রক্ষায় কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি।


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
  5. মরতুজা (৯১-৯৭)

    ইতিহাস আমি ভাল জানি না।

    কর্নেল আবু তাহের ১৯৭৪ সালে সামরিক বাহিনীর জেসিও-এনসিওদের মধ্যে গঠন করেন “বিপ্লবী গণবাহিনী”

    কর্নেল তাহের সম্পর্কে ভাল কথাই শুনে এসেছি। কিন্তু তিনি কি জন্য সামরিক বাহিনীতে থেকে নতুন বাহিনী করলেন বললে ভাল হত বা এটা সমর্থন যোগ্য ছিল কিনা।

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      মরতুজা : প্রথাগতভাবে বা বিদ্যমান ব্যবস্থায় দেখলে এটা সামরিক আইনের বিরুদ্ধে। বেআইনি বলতেও পারো। এজন্য তার শাস্তিও হতে পারতো, কোটর্ মার্শাল এমনকি মৃত্যুদণ্ড হতে পারতো। এসব "বিপ্লবী" কাজের জন্যই তাকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর দিয়ে দেওয়া হয়। কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে তিনি এই তৎপরতা শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেটা করেননি। কিন্তু জিয়া এই সুযোগটা নিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর ভেতরে বেআইনি সংগঠন গড়ে তোলা এবং অভ্যূত্থান চেষ্টার অভিযোগে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন।

      আবার একজন বিপ্লবীর দৃষ্টিতে দেখলে কোনো অন্যায় নয়। এই "গণবাহিনী" দিয়ে তিনি বিপ্লব করতে চেয়েছিলেন। বিপ্লবের জন্য ষড়যন্ত্র করাও জায়েজ। হত্যা-খুন তো সামান্য ঘটনা। যেহেতু দেশে তখন শ্রমিক ছিল সামান্য। কৃষকও সংঘটিত নয়, করাটা কঠিনও ছিল। তাই হয়তো তার মনে হয়েছিল একটা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত এবং সংঘবদ্ধ সেনা সদস্যদের দিয়ে বিপ্লব করে সমাজের উন্নয়ন সম্ভব। এটাও এক ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তবে তা ব্যর্থ হয়েছে। আর তাকে জীবন দিয়ে এর মূল্য দিতে হয়েছে।


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
  6. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    ভাইয়া এই পর্বটা অনেক ভাল লেগেছে । আর কোন ধরনের পক্ষপাত ছাড়া লেখাটা কে েকটা ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে । আমার ভাবতে খুব ইচ্ছা করছে পুরা সিরিজ নিয়ে সানা ভাই একটা বই কোন এক বইমেলায় বের করবেন । আর আল্লাহ ভাগ্যে রাখলে সানা ভাইয়ের অটোগ্রাফ সহ আমি সেই বইটা বইমেলা থেকে কিনব ।

    জবাব দিন
  7. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    এই সিরিজটা মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। আমাদের ইতিহাসের এই দিকটা বরাবরই কেমন যেনো আড়ালে থেকে গেছে।

    সানা ভাইকে অসংখ্য স্যাল্যুট।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  8. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    পড়ছি...
    আমি বরাবরই ইতিহাসের আগ্রহী পাঠক। নিরপেক্ষ ইতিহাস আসলেই অলীক ধারণা। এর বদলে নিরপেক্ষতার স্কেল করা যেতে পারে। সবচেয়ে নিরপেক্ষ হলে ১০ আর একেবারে পক্ষপাতী হলে ০। এই স্কেলে আপনার এই লেখাটা বোধহয় ১০ এর কাছাকাছিই থাকবে।
    আরেকটা বিষয় হল, অনেক সময় লেখক না চাইলেও তথ্যগত একমুখীনতার কারণে বিশ্লেষণটা পক্ষপাতমূলক হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ লেখকের পক্ষপাতী হওয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না। আপনার লেখা পড়ে মনে হয়েছে, পক্ষপাতী হওয়ার কোন ইচ্ছাই আপনার ছিল না, ইন্টেনশন ক্লিয়ার। কিন্তু বিশ্লেষণটা পুরোপুরি নিরপেক্ষ হয়েছে কি-না, তথ্যগত একমুখীনতা এসেছে কি-না সেটা ঠিক বলতে পারবো না। কারণ সেটা ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের ব্যাপার।

    পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

    জবাব দিন
  9. এহসান (৮৯-৯৫)

    পড়ছি… পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
    সানাভাই, তখনকার মাওপন্থীদের কথা কিছুটা জানলাম কিন্তু সোভিয়েতপন্থী কমিউনিষ্টদের ভূমিকা কেমন ছিলো। মনি সিং এর তখনকার কার্যক্রম সম্বন্ধে বেশী জানি না। (উনার একটা জীবনী আছে... নিরপেক্ষতার স্কেল জানিনা আর হাতের কাছেও নেই) উনি মনে হয় বেশ বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু উনার সাথে তখন কারা ছিলো। কাজী জাফর, মান্নান ভুইয়া, সাদেক হোসেন খোকা কিংবা নুরুল ইসলাম নাহিদ উনারা কি তখন বলার মত কেউ ছিলেন? জানি না... কোথায় পড়তে পারবো। মানে আপনার মত নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করে লেখা কি কোথাও আছে?

    জবাব দিন
    • এহসান (৮৯-৯৫)

      মনি সিংহ গুগল করে সচলের হাসান মোর্শেদের একটা লেখা পেলাম। যদিও লেখাটা সরাসরি মনি সিংহকে নিয়ে না। বহু পন্ডিতের পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি পড়লাম আর বিভ্রান্ত হলাম। তবে একটা কথা ভালো লাগলো

      ইতিহাস বিশ্লেষন একটা গতিশীল প্রক্রিয়া। একই ঘটনার ইন্টারপ্রিটেশান ১০ বছর পর বদলাইতে পারে।
      জবাব দিন
  10. হাসনাইন (৯৯-০৫)

    লাবলু ভাই এই পর্বটাও বরাবরের মত তথ্য সমৃদ্ধ, ভাল লাগসে। 🙂

    রক্ষী বাহিনী গঠনের প্রেক্ষাপট আর কার্যকারিতা সম্পর্কে একটু ধারণা দিলে ভাল লাগবে। রক্ষী বাহিনীকে কি বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে ধবংস করারা জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছিলো? কারণ অনেক জায়গায় দেখলাম একে ভারতের সিআরপি আর হিটলারের গেস্টাপো-র সাথে তুলনা করা হয়েছে।

    জবাব দিন
  11. জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

    🙂 ভালো লাগলো। রক্ষীবাহিনী নিয়ে একটা লেখা পাবো আশা করছি। এবং আরও একটা ব্যাপার সম্পর্কে আমি আগ্রহী, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিবর রহমানের জনপ্রিয়তা। আপনারা এই ঘটনা দেখেছেন যেহেতু, একটি প্রত্যক্ষদর্শী পার্সপেক্টিভে আলোচনা আশা করছি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়- কেননা আমাদের দেশে তথ্যের স্বাধীনতা নেই। যেমন, বিডিআর হত্যাকান্ড নিয়ে কেউ যদি ইতিহাস লিখতে চায় তাকে অনেক কিছুই অবজেক্টিভ ভাবে না বলে সাবজেক্টিভ ভাবে বলতে হবে, কেননা এই বিষয়ের সাথে জড়িত তথ্যে তার কোন অ্যাক্সেস নাই যদিও পাবলিক তথ্য জানতে পারাটা নাগরিকদের একটি অধিকার। যা জানছি তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশই সাবজেক্টিভ এই ব্যাপারটা আমাকে সবসময়ই বিকর্ষণ করে এসেছে আধুনিক বাংলাদেশের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে। আমার মনে হয়, এই চেতনা আমাদের জাগ্রত করা উচিত যে, পাবলিক তথ্য জানাটা আমাদের একটি অধিকার যাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের মতো বঞ্চিত না হয় নিজের দেশের অ্যাকাডেমিক গ্রহনযোগ্যতা সম্পন্ন ইতিহাস জানার অধিকার থেকে।

    জবাব দিন
  12. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    অনেক মনযোগ দিয়া পড়লাম পুরাটা। ইতিহাস বিজয়ীদের কথা বলে আর ১৯৭১ এর পর বিজয়ীরা বদলেছে নির্দিষ্ট সময় পর পর এর ফল হয়েছে ইতিহাসের বদল। অতএব সত্যগুলো আমাদের সামনে থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। সানা ভাই অবশ্য নিজস্ব ভিউকে লেখা থেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন সেটা বুঝলাম কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপার ব্যাখ্যার দাবি রাখে। বঙ্গবন্ধু ঠিক কী কারণে সংবিধানের পরিবর্টন ঘটিয়েছিলেন তা নিঃসন্দেহে ভাবনার খোরাক যোগায়। আর রক্ষীবাহিনীর ব্যাপারটা যতটুকু ধারনা করা যায় সেটা হলো, তৎকালীন আর্মিতে যারা ছিলেন তারা সবাই পাকিস্তান আর্মির সদস্য। তাই আদের মাঝে পাকিস্তানপন্থী (যেমন এরশাদ ) অফিসারের সংখ্যাটাও একদম ছোট নয় সেটা অনুমান করা যায়। আবার পাকিস্তান পন্থী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীও ছিলেন। অতএব শেখ মুজিব এক ধরণের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন সেই প্রেক্ষাপট থেকেই রক্ষী বাহিনীর আগমন। কিন্তু নিজেদের কাজের দ্বারা রক্ষীবাহিনী নিন্দিত হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা হ্রাসে বিরাট অবদান রেখেছে। রক্ষী বাহিনীর কোন পরীক্ষা দিতে হতো না সমমনা পরিচয় আর গায়ে গতরে তাগড়া হলেই হতো।
    দুর্ভিক্ষ শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা আরো কমিয়ে দিয়েছিল। এর মূলে ছিলো আওয়ামী লীগের মাঝেকার সুবিধাভোগী বিভিন্ন স্তরের নেতারা। খুব সম্ভবত দেশের প্রকৃত অবস্থা জানা থেকে অনেক দূরে ছিলেন শএখ সাহেব । তাঁর আশে পাশের চাটুকাররাও নিশ্চয় এখনকার মত দেশ উন্নয়ের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে বলে তাকে ভুলিয়ে রেখেছিল। এ সব ঘটনার নিষ্ঠুর স্বীকার হতে হয়েছে দেশের স্বাধীনতার স্থপতিকে।
    সংবাদপত্র সীমাবদ্ধ করণ আর বাকশাল গঠনের প্রেক্ষাপট টা আমার কাছে পরিষ্কার হয় না। এটার সাথে তৎকালীন চীন রাশিয়া ভারত জুড়ে সমাজতন্ত্রী দের দ্বন্দ্ব থেকেই কি?
    দেশ চালনায় বঙ্গবন্ধু ব্যর্থ হয়েছিলেন আর সেটাই আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে বড় অভিশাপ হয়ে গেছে। খুব সম্ভবত বঙ্গবন্ধু যদি ক্ষমতা গ্রহন না করে গান্ধীজীর মত জাতির জনকের স্থানটি নিয়ে আওয়ামী লিগকে দুইভাগে ভাগ করে নির্বাচন দিতেন সেটা অনেক বেশি মঙ্গল বয়ে আনতো।
    উপরের কথাগুলো তৎকালীন সময়ের ভিন্ন মতাদর্শের দুজনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তার উপর আমার ভাবনা।
    কোন জায়গায় ভুল থাকলে কিংবা আলোচনার অবকাশ থাকলে জানালে বাধিত হবো।

    জবাব দিন
  13. শহীদ (১৯৯৪-২০০০)
    অনেকে তাকে “জাতির পিতা বা জাতির জনক” বললেও আমি উনাকে “বাংলাদেশের স্থপতি” বলাটা যথার্থ মনে করি।

    পুরো লেখাটাই অসাধারণ এবং আকর্ষণীয় হলেও এই লাইন টার সাথে আমি সব থেকে বেশি একমত। আমি আন্থনি মাস্কারেনহাস এর " A Legacy of Blood" পড়ে এই ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পেরেছি যা হয়ত অন্য কোথাও থেকে জানা সহজ নয়। একজন বিদেশী লেখক হিসেবে এবং বই টাতে লেখকের বাচনভংগী আর তথ্যসূত্র থেকে লেখকের নিরপেক্ষতা আর তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া যায়। এই বিষয়ে যারা জানতে বা পড়তে চান তাদের জন্য বইটা নিঃসন্দেহে খুবই উপকারী হবে বলে আমার বিশ্বাস।

    জবাব দিন
  14. প্রিয় দাদা, আপনার উক্ত লেখাটি চট্টগ্রাম থেকে অনলাইন ও কাগজে প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিন "দ্রোহ" তে প্রকাশ করার অনুমতি চাইছি । আশা রাখি অনুমতি প্রাপ্ত হবো ।
    আমরা তরুণরা তথ্যগুলো এই প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে চাই ।

    দ্রোহ এর অনলাইন ঠিকানা>> http://www.droho.net

    জবাব দিন
  15. সামির (৯৯-০৫)

    http://www.choturmatrik.com/blogs/%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%83%E0%A6%B8%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A6%BF/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6-%E0%A7%A7%E0%A7%AF%E0%A7%AD%E0%A7%AA-%E0%A7%A7%E0%A7%AF%E0%A7%AD%E0%A7%AB-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%AC-%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%83%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A8

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কামরুল হাসান (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।