বন্ধুত্বের ৩৪ বছর : জীবনের তিন চতুর্থাংশ

ফৌজদারহাটের ২১তম ব্যাচটা একটা জিনিষ! কলেজে যেমন ছিল তেমনি বাইরে এখনো সবগুলো দারুণ প্রাণবন্ত। সুযোগ পেলেই আড্ডাবাজি, খাওয়া-দাওয়া, বেড়ানো আর ছেলেমানুষি কান্ডকারখানায় প্রায় পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই এই বালকগুলোর জুড়ি মেলা কঠিন। বন্ধুদের মধ্যে সম্পর্কটা যেমন দূর্দান্ত, তেমনি সম্পর্ক তাদের স্ত্রীদের মধ্যেও। রবীন ও রায়হানের প্রদর্শিত ব্লগীয় ধারা বজায় রেখে ২১তম ব্যাচের একটি ফটোফিচার।

বন্ধুত্বের ছয় বছর : ১৯৭৪ সালের ১৭ আগস্ট ৫৬টা বালক ফৌজদারহাট উপকারাগারের ফটক দিয়ে ঢুকলেও ১৯৮০ সালে বের হয়েছিল ৫৫টা। একটা আগেভাগেই কেটে পরেছিল। ১৯৮০ সালে অ্যাকাডেমিক ব্লকের সামনে ইউনিফর্ম পড়া কিশোরদের এই ছবিটি যখন তোলা হয়, তখন এরা প্রত্যেকে নিজেকে বড়সর মানুষই মনে করতো। ‘সিনিয়র মোস্ট ক্যাডেটস’! হায়রে কত্তো সিনিয়র! জীবনের মাত্র আঠারোটা বছর পার করেছি আমরা তখন!!

বন্ধুত্বের ৩৪ বছর : বয়সটা মনে হয় এখনো আঠারোতেই আটকে আছে! সেই অ্যাকাডেমিক ব্লকের সামনে গত মে মাসে ১৫টা মধ্যবয়সী কিশোর! হারাধনের ৫৬টি বালকের দুটি হারিয়ে গেছে। বাকি আছে ৫৪টা। দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে গেছে সব। দেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম; বাইরে উত্তর আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যে ছিটিয়ে থাকলেও সবগুলোর মন এখনো সতেজ-সবুজ। সুযোগ পেলেই একসঙ্গে হলেই এরা শৈশবে ফিরে যায়।

বদলে যাওয়া জীবন : মধ্যবয়সী উচ্ছল একদল কিশোরদের সঙ্গে হাটছে পরবর্তী প্রজন্ম। ছোট্ট দু্ই বালক কল্পনাও করতে পারেনা তাদের বাবা-চাচারা কি দারুণ সময় পার করে এসেছে। মাত্র ছটি বছর এই ‘বুড়ো’দের কিভাবে বদলে দিয়েছে সারাজীবনের জন্য।

বয়সটা আটকে আছে কলেজেই : কলেজের বাস্কেটবল কাম লন টেনিস মাঠটিকে মূহুর্তের মধ্যে ক্রিকেট মাঠ বানিয়ে ফেলেছিল বন্ধুরা। ছয়টি বছর হাউসের কক্ষগুলো, ক্লাশ কক্ষ, প্যারেড গ্রাউন্ড এমনকি হাসপাতালকে কখনো ক্রিকেট, কখনো বাস্কেটবল, কখনো ফুটবল মাঠে পরিণত করে খেলায় মেতে উঠতো এরা।

মধুর বন্ধুত্ব : হা..হা..। পরকীয়া মনে হয় নাকি? অথবা বন্ধুপত্নীর সঙ্গে খুনসুটি? ক্যাডেট কলেজের বন্ধুদের মধ্যে সম্পর্কটা এমনই মধুর। ঘুরে ঘুরে বন্ধুদের বাসায় আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া চলেই। রাত ১০টা-১২টায় বাসায় গিয়ে হাজির হয়ে খাবারের টেবিলে বসে পরা, চাঁপাবাজি, খোঁচাখুচি- সম্পর্কের এমন মজাটা আর কোথায় আছে?

হাফ ক্যাডেটস : কাকে কিরকম অপ্রস্তুত অবস্থায় ক্যামেরায় আটকে ফেলেছে আরেক বুড়া বালক দেখাচ্ছে সেটা বন্ধুপত্নীকে। বন্ধুদের স্ত্রীরাও ক্যাডেটদের সঙ্গে থাকতে থাকতে হাফ ক্যাডেট হয়ে যায়!

বারবার ফিরে পাওয়া সময় : আহ্‌ খাদ্য! ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে কলেজের ডাইনিং টেবিলে ঝাঁপিয়ে পরা, মিল্ক বা টি টাইমে বিভিন্ন টেবিলের বিস্কিট আর কেকগুলো হাতিয়ে নেওয়ার স্মৃতি এখনো জীবন্ত। বয়স হয়েছে তাই কিছুটা ভদ্রতা দেখাতেই হয়। ছবিতে যেমন। তবে রিইউনিয়নে গেলে আর ডাইনিং হলে ঢুকলে বয়সটা মনে থাকে না। গত মে মাসেও নিজেরটা খেয়ে অন্যেরটা মেরে খেয়েছি। একবার যে ফটক পেরিয়ে উপকারাগারে ঢুকেছে সারা জীবনে তার অভ্যাস আর বদলায় না!!

[ এই পোস্টটা ভালোই ভুগিয়েছে আমাকে। বিশেষ করে ছবি পোস্ট করা যে এতো কঠিন কাজ সেটা জানতাম না। গতকাল পোস্ট দিয়ে রীতিমতো বোকা বনে গেছি। ছবি কিছুতেই আসনা। অবশেষে ছবি এলো তো ক্যাপশন দেয়া যায় না। আবার পোস্ট মুছতেও পারিনা। যতো কমান্ড দিই কোনো কাজ হয়না। রায়হান নানা পরামর্শ দিয়েছে, কাজ হয়নি। শেষে ফোন করে কামরুলকে পেয়ে রক্ষা। ছবিগুলো সেই সাজিয়ে দিয়েছে। কান ধরেছি, ছবি পোস্ট আর না। কামরুল বাইরে চলে গেলে আমার কি হবে?]

৭,৪৯৪ বার দেখা হয়েছে

১০৩ টি মন্তব্য : “বন্ধুত্বের ৩৪ বছর : জীবনের তিন চতুর্থাংশ”

  1. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    বেশি না মাত্র ২৪ ঘণ্টা লাগলো পোস্টটা ঠিকমতো পোস্ট করতে। আর ফটোফিচার!! জীবনে না!! এইবার না হয় কামরুল সামাল দিল আগামীতে দেবে কে? কামরুলকে :salute: আর নিজের জন্য :bash:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  2. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    লাবলু ভাই, বস্ ছবি আর কমেন্ট একেকটার চেয়ে একেকটা হইছে। আপনাদের সবাইকে :salute:

    আর, ইয়ে বস্, বলতে চাচ্ছিলামকি, ইয়ে মানে ফৌজদারহাটের ৩৯তম ব্যাচটাও একটা জিনিষ! ;))


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    ছবিগুলো দেখে কেমন জানি লাগল...ভাল লাগা, স্মৃতিকাতরতা...আবার ভয়ও কাজ করছে...২০/২৫ বছর পর আমরা কে কোথায় থাকব কে জানে!!! 🙁


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  4. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    সানাউল্লাহ ভাই,
    জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত (বানান টা ঠিক হলো কি?)এবং তার অনুভূতিগুলো ফুটিয়ে তোলা সাধারণ কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু আপনার হাতের যাদুস্পর্শে তা প্রাণ পেয়েছে। জীববিজ্ঞান বইতে ডারউইনের বিবর্তনের মতবাদের সেই ছবিটির মত আপনি আঠারো বছরের "সিনিয়রমোস্ট" বুড়ো থেকে শুরু করে "মধ্যবয়সী বুড়ো খোকা"দের যে চিত্র তুলে ধরেছেন তার তুলনা করার মত কোন উপমা আমার কাছে নেই।
    কি করে সাধারণ কিছু ছবিকে এত হৃদয়স্পর্শী লেখা দিয়ে অসাধারণ ছবিতে পরিণত করলএন তা আমার কাছে এক বিস্ময়।
    আপনার এই সৃষ্টি আমাকে প্রচন্ড আবেগতাড়িত করেছে। আপনাকে সশ্রদ্ধেয় কুর্ণিশ...।

    জবাব দিন
  5. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    এমন একটা সময়ে আপনারা কলেজ থেকে বের হয়েছেন যখন কেবল আমার জন্ম হয়েছে। এই ব্যাপারটা ভাবতেই কেমন শিরশিরে একটা অনুভূতি হচ্ছে।

    ছবিতে আপনি কোন জন 😛 ??

    হারাধনের হারিয়ে যাওয়া ছেলেদের জন্য প্রার্থনা, আল্লাহ তাদের ভালো রাখুন।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      সে কারণেই নিজেকে 'বুড়ো বালক' বলি। তোমরা কেউ তো মানতে চাও না। মাঝে মধ্যে যখন পেছন ফিরে তাকাই, অবাকই হই- এতোটা পথ হেটে ফেলেছি? জীবনের সড়কটা আর কতোটা লম্বা তা যদি আগেভাগেই জানতে পারতাম!!


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
  6. গাছ পাতা ফুল প্রকৃতি'র ছবি দেখে ফটোগ্রাফীর প্রশংসা করা যায় ঢের, কিন্তু একেবারে সত্যি কথা হচ্ছে ভাইয়া, ছবিযে স্মৃতি কাতর করে দেয়,বারবার ফিরিয়ে নিয়ে যায় ফেলে আসা সময়ে সেটা আপনার ছবিগুলি দেখে বুঝলাম। 🙂 🙂

    একই সঙ্গে মন ভালো ও খারাপ করে দেয়া ছবি। 😀 🙁 😀 🙁 এতো সুন্দর ক্যাপসন। আমি গতকাল দেখার পর থেকে এজন্যই আপনাকে জোড়াজোড়ি করছিলাম পোস্টটা তাড়াতাড়ি আপডেট করে দিতে। সবার সাথে একসঙ্গে দেখার লোভ সামলাতে পাড়ছিলাম না।

    দারুন। :clap: :clap:

    আর খবরদার আপনি যদি ভুলেও ছবি না পোস্ট করার কথা ভাবেন। জলদি পুরোনো এলবাম ঘেটে আরো ছবি বের করুন। এরকম দারুন :gulli: ক্যাপসন সহ।

    আর যখনি আমাকে লাগবে ফোন দিতে ভুলবেন না। আপনার ফোন পেয়ে আমার যে কি ভালো লাগছিলো বলে বুঝাতে পারবো না। :shy:

    আমি কোথাও যাবো না। যেখানেই থাকি সিসিবি আমার সাথেই থাকে। 😉

    জবাব দিন
  7. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    সানাউল্লাহ ভাই :salute: :salute: :salute:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  8. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    অসাধারণ ক্যাপশন।

    একবার যে ফটক পেরিয়ে উপকারাগারে ঢুকেছে সারা জীবনে তার অভ্যাস আর বদলায় না!!

    অসাধারণ লেখা
    অসাধারণ ছবি
    অসাধারণ সানাউল্লাহ ভাই


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  9. হাসনাইন (৯৯-০৫)
    এমন একটা সময়ে আপনারা কলেজ থেকে বের হয়েছেন যখন কেবল আমার জন্ম হয়েছে। এই ব্যাপারটা ভাবতেই কেমন শিরশিরে একটা অনুভূতি হচ্ছে।

    -আমার বাপ-মা তখন বিয়েই করে নাই। 😀

    বস ছবিগুলা সিরুম... সিরুম।
    ক্যাপসনগুলা সিরুমরুম... :gulli2: :gulli2:

    জবাব দিন
  10. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    হাসনাইন আমার আব্বু আর আম্মুরও বিয়ে হয়নি তখনও।

    সানাউল্লাহ ভাই ছবিগুলা দেখে শুধু মনে হচ্ছে ফির যাই সেই হারানো দিনগুলোতে। আবার মনে হচ্ছে বয়সের সাথে আনন্দতো কমে না তাহলে ফিরে গিয়ে কি হবে? ২১তম ব্যাচকে :salute: :salute:

    আমার নিজের বোধ হচ্ছে আমরা ক্যাডেট তাই আমরা যেখানে থাকবো তাকেই ক্যাডেট কলেজ বানিয়ে নেব।

    জবাব দিন
  11. তাইফুর (৯২-৯৮)
    'সবাই বলে বয়স বাড়ে
    আমি বলি কমে রে
    আমি বলি কমে'

    সানাউল্লাহ ভাই,
    ছবি আর ক্যাপশানের চমৎকারিত্বের জন্যই মনে হয়, জীবনে প্রথম খুব দ্রুত 'বুড়া বালক' হইতে মন চাইতেছে।


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  12. তানভীর (৯৪-০০)
    একবার যে ফটক পেরিয়ে উপকারাগারে ঢুকেছে সারা জীবনে তার অভ্যাস আর বদলায় না!

    একদম মনের কথা ভাইয়া।

    মনকে নাড়া দেয়া দারুণ সব ছবি আর ক্যাপশনের জন্য আপনাকে :salute: :salute: :salute:

    জবাব দিন
  13. সামি হক (৯০-৯৬)

    সানাউল্লাহ ভাই বুঝতেছিনা আমার কাজিন আপনার ব্যাচমেট কিনা? আমার কাজিন এর নাম সাইফুল উনি বুয়েট থেকে আরকিটেকচারে পাশ করে এখন টেক্সাস এ প্রফেসর। উনার ভাই ও প্রায় একি সময়ে আপনাদের কলেজে ছিল।

    জবাব দিন
  14. ছবিগুলা দেইখা আবার মনে পইড়া গেল সব কথা।
    "আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম"

    লাবলু ভাই, শাহাদাত ভাই :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff: আর আপনাদের ব্যাচের সবাইকে :salute: :salute: :salute: :salute:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।