বনলতা সেন : ফলোআপ

ক্যাডেট কলেজ থেকেই কবিতার প্রেমে আমি পড়েছিলাম। ছাত্রজীবন পর্যন্ত সেই প্রেম অটুট ছিল। সাংবাদিকতা পেশায় ঢুকে তথ্য-পরিসংখ্যান আর খবরের একটা কাটখোট্টা জগতে আটকে পড়েছিলাম। জীবনানন্দকে নিয়ে এসে আমার পুরনো প্রেমটাকে একটু নাড়া দিয়ে গেল আন্দালিব। আবদুল মান্নান সৈয়দের সংকলন ও সম্পাদনায় জীবনানন্দ দাশের প্রকাশিত-অপ্রকাশিত কবিতাসমগ্র ঘাটতে ঘাটতে পেয়ে গেলাম বনলতা সেনের ফলোআপ কবিতাটি। চলো সবাই পড়ে ফেলি।

শেষ হ’ল জীবনের সব লেনদেন
জীবনানন্দ দাশ

শেষ হ’ল জীবনের সব লেনদেন,
বনলতা সেন।

কোথায় গিয়েছ তুমি আজ এই বেলা
মাছরাঙা ভোলেনি তো দুপুরের খেলা
শালিখ করে না তার নীড় অবহেলা
উচ্ছ্বাসে নদীর ঢেউ হয়েছে সফেন,
তুমি নাই বনলতা সেন।

তোমার মতন কেউ ছিল কি কোথাও?
কেন যে সবের আগে তুমি চলে যাও।
কেন যে সবের আগে তুমি
পৃথিবীকে করে গেলে শূন্য মরুভূমি
(কেন যে সবের আগে তুমি)
ছিঁড়ে গেলে কুহকের ঝিলমিল টানা ও পোড়েন,
কবেকার বনলতা সেন।

কত যে আসবে সন্ধ্যা প্রান্তরে আকাশে,
কত যে ঘুমিয়ে রবো বস্তির পাশে,
কত যে চমকে জেগে উঠব বাতাসে
হিজল জামের বনে থেমেছে স্টেশনে বুঝি রাত্রির ট্রেন,
নিশুথির বনলতা সেন।

৩৭ টি মন্তব্য : “বনলতা সেন : ফলোআপ”

  1. আরিফ (১৯৯৪-২০০০)

    কোন এক টক শো তে একজন সাবেক উপদেষ্টা (নাম ভুলে গেছি)... সে বিশাল ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন যে আসলে বনলতা সেন ছিলেন বারবনিতা... 😡 😡 । বহুত কষ্ট পাইছি... 🙁

    জবাব দিন
  2. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    আমার প্রিয়তম কবি।
    শুধু জীবনানন্দ পড়ে একজীবন কাটিয়ে দেয়া যায়।
    বারবার পড়ি, বারবার পড়ি। অনেক কবিতা মুখস্ত।

    জীবনানন্দ দাশের কবিতা সমগ্র আছে আমার কাছে, কিন্তু সেখানে অপ্রকাশিত সব কবিতা নেই, গুটিকয়েক আছে। তাই এই কবিতাটা আগে পড়া হয়নি। খুঁজে দেয়ার জন্যে অসম্ভব কৃতজ্ঞ।

    'বনলতা সেন' কবিতাটা এডগার এলান পো'র 'টু-হেলেন' কবিতা থেকে অনুপ্রানিত।

    অনেক অনেক প্রিয় কবিতা জীবনানন্দের। এই মুহূর্তে সবাইকে শোনাতে ইচ্ছে করছে এই কবিতাটি।

    এই সব ভালো লাগে

    (এই সব ভালো লাগে) : জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের সোনালি রোদ এসে
    আমারে ঘুমাতে দেখে বিছানায়, — আমার কাতর চোখ, আমার বিমর্ষ ম্লান চুল –
    এই নিয়ে খেলা করে: জানে সে যে বহুদিন আগে আমি করেছি কি ভুল
    পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমাহীন গাঢ় এক রূপসীর মুখ ভালোবেসে,
    পউষের শেষ রাতে আজো আমি দেখি চেয়ে আবার সে আমাদের দেশে
    ফিরে এল; রং তার কেমন তা জানে অই টসটসে ভিজে জামরুল,
    নরম জামের মতো চুল তার, ঘুঘুর বুকের মতো অস্ফুট আঙুল; –
    পউষের শেষ রাতে নিমপেঁচাটির সাথে আসে সে যে ভেসে

    কবেকার মৃত কাক: পৃথিবীর পথে আজ নাই সে তো আর;
    তবুও সে ম্লান জানালার পাশে উড়ে আসে নীরব সোহাগে
    মলিন পাখনা তার খড়ের চালের হিম শিশিরে মাখায়;
    তখন এ পৃথিবীতে কোনো পাখি জেগে এসে বসেনি শাখায়;
    পৃথিবীও নাই আর; দাঁড়কাক একা — একা সারারাত জাগে;
    কি বা হায়, আসে যায়, তারে যদি কোনোদিন না পাই আবার।
    নিমপেঁচা তবু হাঁকে : ‘পাবে নাকো কোনোদিন, পাবে নাকো
    কোনোদিন, পাবে নাকো কোনোদিন আর।’


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  3. কত যে আসবে সন্ধ্যা প্রান্তরে আকাশে,
    কত যে ঘুমিয়ে রবো বস্তির পাশে,
    কত যে চমকে জেগে উঠব বাতাসে
    হিজল জামের বনে থেমেছে স্টেশনে বুঝি রাত্রির ট্রেন,
    নিশুথির বনলতা সেন।
    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।