এই বর্ষণসন্ধ্যায় দুইখানা

[কুড়ানী পইড়া মনের মধ্যে হু হু কইরা উঠলো। আজকে ভারি বর্ষণে আমার শরীর ভিজাইছি। সাথে মনও কি সিক্ত হয় নাই? ঠাহর পাইলাম বাসায় ফির‌্যা, এই লেখাটা পইড়া। ফয়েজ ভাই, মাইনুল ভাই দুইজনকেই ধন্যবাদ। এখন নিজের কুলিখিত দুইখানা নিবেদন করতেছি। ]

বর্ষামাঠের ওপর মেঘের ঘর

১.
এই ঘরে মগ্নতায় আমার অনিদ্রাযাপন, ফ্রিজিয়াম-বিরহ
রাতের বয়স বাড়ছে, ক্রমেই কমেছে জীবনের আয়ু
আমি খুশি হই, অযাচিত আশাবাদে অনায়াস-তত্ত্ব
আবিষ্কার করি, যাবতীয় জীবন সেই তত্ত্বে বিশ্লিষ্ট

এই অবিশ্রাম গলন, ঘড়ির পাশেই রাখা হা-মুখ
শীতল বোতল, টানটান শরীর, (কোঁচকানো র‌্যাপার যদিও পুরাতন)
আর্দ্রতা জমেছে প্রচুর, অসংখ্য; আমার
বিনির্মাণ দ্যাখে ভারি অভিধান, খালি চায়ের কাপ।

২.
জাগে শরীর বড় অসময়ে। এ- জেগে ওঠা স্বতন্ত্র, বিবিক্ত। মূলজ এবং পৃথক। এ- জেগে ওঠা সন্ত্রস্ত; আমায় খুশি করে। মানবের যে সকল মিলিত উদ্যোগের কথা আজকের বাতাস বয়ে নিয়ে যাবে, সম্ভবত আগামিকালই ভুলে যাবে, সেসব আমার মনে পড়ে। মনে পড়ে বলে, দীর্ঘশ্বাস বিছিয়ে দেই রানওয়েতে। গতকালের ঘুম অবহেলায় পড়ে থাকে ঘরের মেঝেতে। ঘাসের ফলার গায়ে লিখে রাখি যাপিত রাতের বাখানি। বাতাসের স্বভাব; বহনের উল্লাসে কোন নিরুদ্দেশ ঘরে সে জমা করে সকল পুলক? যেভাবে পুলক বুনন সম্পন্ন হয় মাটিতে, ঘাম সৃষ্টি হয় জমিনে, সেভাবে অবলীলায় এই মাতাল বাতাস মাতলামি করে। আউড়ে ওঠে প্রাচীন স্তোত্র। জোরালো চিরে যাওয়া ডাকে আমাদের ক্লান্ত-শরীর ম্লান হয়। মাতাল বাতাসের মাতলামি আমাদের স্বভাবে ঢুকে পড়ে।

৩.
এক প্রগাঢ় বর্ষায় আমি ঘোলাপদ্মায় লাশ ভেসে যেতে দেখেছি।
উপুড় মাতৃকায় কালচে রক্তাভ শাড়ি দেখে আমি আমূল কেঁপে গেছি।
আত্মার গহনে সেই কাঁপন আজও ব্যাপিত দুঃখের স্রোত হয়ে মিশে আছে।
ঘোলাপদ্মা নদীর স্রোতের মত,
যে স্রোত বর্ষায় ফুলে ওঠে,
থরোথরো উথলায়,
দুধের হাড়ির মতো বলগ এসে গেলে উপচায়,
সেভাবে আমরাও উদ্বেল হই।
পাশে দুইকূলে বাড়ি ঘর পশু গাছ মাটি ভিজে চুপসে যায়।
সেই প্রকৃতিতে অমর কাব্য লেখা হয়।
প্রকৃতির কিছু যায় আসে না মানব-লাশের ভারবহনে।
সেই সব অক্ষরে আমাদের তাবৎ শিহরণ লিখিত। এবং উন্মুক্ত।
ব্যাখ্যাতীত সৌন্দর্যের পাশেই বিবৃতিপাঠ করে কদাকার বর্ষা, ঝরোজল।
শীতল সিক্ততার আনন্দে আমরা ঘুমিয়ে পড়তে পারি।
এবং গুটিবন্দী পোকার মতো স্বপ্ন দেখতে পারি আসক্ত আর্দ্রতায়।

৪.
এই দুরন্ত রাতের শেষেও আমি জেগেই রবো, বর্ষণাকুল এই রাতে ভিজে যাবে চড়ুইয়ের পালক, সানশেড, ধাতব জালির বাইরে একপোঁচ আঁধার। উদয়পথে মৃত্যু-লাল-রঙ মেখে সূর্য উঠবে এই প্রত্যাশায় আমি চোখ খুলে রাখবো। মেঘের শরীর বা দূরে বিষণ্ণ সবুজের পরিমাপ আমার জানা নেই।
****

আপেক্ষিক আপেক্ষিকতা

আপেক্ষিকতা ১
========
আমার ঘর হইতে দেখা যায়
তিনটা হাইরাইজ, সাদাটে হলুদ,
আর গুইনা গুইনা তেরোটা সবুজ গাছ।
সুবেশী খোঁপাওয়ালি, গাঢ়সুন্দর!
বাকিরা শীর্ণ, ধুলোবালিমাখা দিনমজুর।
চাইরটা থ্রি-ফেইজ ইলেকট্রিক পৌল
আড়াআড়ি চইলা গ্যাছে পাতার ভিতর দিয়া
দূর থেইকাই, মনে হয় মৃদু বাতাসে
পাতাদের দড়িলাফ, খিলখিলে রোদ্দুর।

ঝিকোনো বিকালে সেই খেলার পটভূমিতে
হাইরাইজত্রয়ের খোলামেলা চৌকো বারান্দায়
গৃহিনীসকলের হাসি ল্যাপ্টায় থাকে।
—–

আপেক্ষিকতা ২
========
মেয়েদের ইশকুল পেরোনোর সময়ে, রিকশাচালকের পরিবর্তন সাপেক্ষেও, প্রতিদিন শ্লথ হয়ে পড়ি।
চালকের ঘাড়ঘূর্ণনের সাথে আমি তাকাই না; কারণ শ্রেণিভেদের সংজ্ঞা আমার জানা
অহমে লাগে ঠুক ঠাকঃ “পিছন ফিরে সে দেখে ফেললে কী ভাববে”- সেটা ভাবি

তবে ভাবনা বদলের মতো, ইশকুলের পাশেই ‘রূপায়ন বিল্ডার্স’-এর শো-রুম দেখে
প্রকৃতির রসিক-মনের পরিচয়ে আমি আচমকা হেসে ফেলি।

****

১,১৮১ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “এই বর্ষণসন্ধ্যায় দুইখানা”

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।