শৈশব-ইন্দ্রিয়ের গান

ঘুড়ির লেজে করে উড়ে গেছে দুরন্ত আটপৌরে রোদ। শরীরে ঘুমপ্রিয় ক্লাশরুমেরা একা একা অযথাই ফাঁকা হয়ে বসে থাকে। ক্লাশের মেয়েরা বেণীর পেছনে মেঘের দরজা খুলে নেমে আসে, ওড়নাপ্রান্তে বেঁধে নিয়ে নিজ নিজ হোমওয়ার্ক। হাত বাড়িয়ে মেঘপ্রান্তের ঢেউ ছুঁয়ে দেখেছি, সেখানে শুভ্র রাতের ওপারে কুসুম কমলা ভোর আঁকা। পানিতে ঢেউ কেটে কেটে একবালিকার অবসন্ন রাত থরথরিয়ে ওঠে, দ্রুত নেমে যায় নিঠুর কাঁপন! যেমন ভেবেছি: কাটাকুটি খেলার গোপন টিফিন-আওয়ার, টয়লেটের দেয়ালে দ্বিমাত্রিক স্তন আর সুগোল উরু ঝাঁজালো অ্যামোনিয়ার সাথে নাসা অন্দরে, চোখের ভেতরে, খুলির নিবিড়ে, গোপনে ঢুকে পড়ে আর প্রসারিত বস্তির উল্লাস মাপে। কাদা-মাখা ন্যাংটো শৈশব হি হি করে হেসে দেয়, জানে উস্থূর নগ্নতায় মিশে যাবে সকল কোলাহল, অবিমিশ্র হাসি আর গান। আহা, বিষণ্ণ দুপুর-ভাঙা হলুদ ফিতে, ছাদে নেড়ে দেয়া ভিজে সালোয়ারের কুঁচি শুকোনোর পরেও সিক্ত মনে হয় আর সেখানে চিলেকোঠার পুরোনো বালিশ গোলাপী দাগের মত সারাদিন তাকিয়ে থাকে।

***
১৬.৩.৯

[নূপুর ভাইয়ের সৌজন্যে। এই মানুষটা আমার লেখা অনেক পড়তে চাইছেন, তাঁকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা!]

৩,৬৭৩ বার দেখা হয়েছে

৬৬ টি মন্তব্য : “শৈশব-ইন্দ্রিয়ের গান”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    নাম শুনিয়াই কেমন জানি সন্দেহ লাগতাছে... যাই এবার ফাইট দিয়া আসি...


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. রবিন (৯৪-০০/ককক)
    আহা, বিষণ্ণ দুপুর-ভাঙা হলুদ ফিতে, ছাদে নেড়ে দেয়া ভিজে সালোয়ারের কুঁচি শুকোনোর পরেও সিক্ত মনে হয় আর সেখানে চিলেকোঠার পুরোনো বালিশ গোলাপী দাগের মত সারাদিন তাকিয়ে থাকে।

    :boss:

    জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    আন্দালিবের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। :thumbup: শৈশব-ইন্দ্রিয় বেশ ভালো গান গায়। ;)) এতো চমৎকার গানের গলা অনেকদিন শুনিনি। খুব তাড়াতাড়ি সি-সিরিজ (সিসিবির অডিও উইং) থেকে শৈশব-ইন্দ্রিয়ের একটা গানের অ্যালবাম আশা করছি :-B


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    বাংলাদেশের পাটশিল্প নিয়ে তোমার ভাবনা আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে... :thumbup:
    এখন আমাদের নীতিনির্ধারকরা এসব বুঝলে হয়... :dreamy:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  5. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)
    কাটাকুটি খেলার গোপন টিফিন-আওয়ার, টয়লেটের দেয়ালে দ্বিমাত্রিক স্তন আর সুগোল উরু ঝাঁজালো অ্যামোনিয়ার সাথে নাসা অন্দরে, চোখের ভেতরে, খুলির নিবিড়ে, গোপনে ঢুকে পড়ে আর প্রসারিত বস্তির উল্লাস মাপে

    :shy: :shy: :shy:

    জবাব দিন
  6. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    শৈশব নিয়ে ভাবনায় যে কদাকার চিন্তার কথা বলেছিলাম তা হলো কোন ঘুম ভাঙা দুপুর অবিরাম ছোটাছুটি রত কিশোর দলের খানিক বিরতিতে জলবিয়োগে প্লাবিত বৃক্ষ গোড়ায় ফেনিল জল রাশির ঝাঝালো গন্ধ আর তার ফেনার কদর্য সৌন্দর্য। মন্তব্যটা বেশি কটু লাগলে মুছে দিস। সামুতে লেখার সাহস পাচ্ছিলাম না। অনেক কষ্টে সাহস করে বললাম , জানি না কে কেমনে নেয়??

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      না, দোস্ত ঠিক আছে। আসলে ইন্দ্রিয়গুলো তো পাশবিক, সেন্স হিসেবে ওগুলো ডেভেলপ হয় না। মানুষের মস্তিষ্ক ডেভেলপ করে ওগুলোর খামতি ঢেকে দেয়। তাই মনে হয় এরকম যে চিন্তা, তাকে আমরা সামাজিকভাবে অশ্লীল ভাবলেও আমি এইগুলোকে স্থান দিতে চাই। ভাল-খারাপ তো আপেক্ষিক। ইন্দ্রিয়ের কাজ কারবার না-হয় একটু নৈর্ব্যক্তিক অবস্থান থেকেই বিচার করি।

      শেয়ার করলি বলে তোরে ধইন্যাপাতা! 😀 :thumbup: :thumbup:

      জবাব দিন
  7. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    কিছুটা বুঝছি ভাইবাই পরে বুইঝা গেলাম আসলে আমি আন্দালিব যা বুঝাইতে চাইছে তা আমি বুঝিনাই কারণ তাইফুর ভাই নোট লেখার আগেই বুঝার মানে হইল আমি যা বুঝছি তা ভুল বুঝছি।

    মাথা আউলাইছে।

    জবাব দিন
  8. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    খুব ভালো লাগল।

    তয় আন্দালিব, একটা সমস্যায় পড়লাম। কি যে করি? ~x(

    আমার মনে হলো এইবার আমি ঠিকই ধরছি যে, এইটা একটা কবিতা। কিন্তু তুমি কইছো, এইটা একটা গান। কমেন্টগুলাই ছিল আমার ভরষা, যদি কেউ কবিতা কয়া দেয় তাইলে কনফিডেন্ট হইতে পারি। তাও দেখলাম না কাউরে। :((

    তুমি কয়া দেউ ত এইটা আসলেই কি? কবিতা, না গান, না অনুগল্প?

    অফটপিকঃ খালি শৈশব-ইন্দ্রিয়ের গানই শোনাইবা? ষ্টকে যৌবন-ইন্দ্রিয়ের গানটান কিছু নাই? ;;; (শওকত ভাই যেমনে কয়া যান মাঝে মইধ্যে :)) )।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      মাহমুদ ভাই, আসলে আমি কবিতা আর গানকে সমার্থক চিন্তা করি। এটার শুরু করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ওঁর প্রচুর গানই আসলে কবিতা। তারপরে জীবনানন্দের প্রথম বইয়ের একটি কবিতাটির নাম, অবসরের গান। এই থেকে আমার ধারণা হয়ে গেছে যে কবিতাতেও গান লেখা যেতে পারে! :shy:
      শৈশবের সময়টাকে আমার খুবই মোহনীয় মনে হয়। পৃথিবীর বিচিত্র রূপ, সুর, সৌন্দর্য ধীরে ধীরে ইন্দ্রিয়ে ধরা পড়ছে। এই সময়টাকে তাই আটকে ফেলার চেষ্টা!

      অ.ট.: আসিতেছে! আসিতেছে!! ;;;
      (তবে আগে থেকে বলে মিজা নষ্ট করার জন্যে আপনার ব্যাঞ্চাই! :bash: )

      জবাব দিন
  9. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    ক্লাশের মেয়েরা বেণীর পেছনে মেঘের দরজা খুলে নেমে আসে, ওড়নাপ্রান্তে বেঁধে নিয়ে নিজ নিজ হোমওয়ার্ক।

    তুমি কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াও নাকি? ভাবে ত সিরামই লাগতাছে। 😀


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  10. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    ওয়াও!
    পড়তে পড়তে পরতে পরতে
    যখন ঝনঝন করে বাজছে
    গোটা একটা শৈশব
    ফেলে আসা, না দেখা কিশোর-কিশোরী কাল
    ফাঁকা ক্লাসঘর আর পালানো সকাল,
    ঠিক তখন --
    জানছি
    এই লেখাটি আমারি সৌজন্যে,
    আন্দালিব, কি বলি,
    তোমার শব্দগুলো
    আমায় ঘিরে গাইছে,
    "আজ মন খারাপ কি জন্যে?"

    জবাব দিন
  11. তানভীর (৯৪-০০)
    ঘুড়ির লেজে করে উড়ে গেছে দুরন্ত আটপৌরে রোদ।

    এই লাইনটা পড়ার পর-পরই কেন জানি ফেলে আসা শৈশবের জন্য একটা হাহাকার তৈরী হয়ে গেল।

    শরীরে ঘুমপ্রিয় ক্লাশরুমেরা একা একা অযথাই ফাঁকা হয়ে বসে থাকে।

    এই লাইনটা এই কবিতার আমার সবচেয়ে প্রিয় লাইন।

    আহা, বিষণ্ণ দুপুর-ভাঙা হলুদ ফিতে, ছাদে নেড়ে দেয়া ভিজে সালোয়ারের কুঁচি শুকোনোর পরেও সিক্ত মনে হয় আর সেখানে চিলেকোঠার পুরোনো বালিশ গোলাপী দাগের মত সারাদিন তাকিয়ে থাকে।

    কেমন যেন স্মৃতিভারাক্রান্ত অথবা বিষন্ন হয়ে যাই।

    আমি আবারও মুগ্ধ! :thumbup: :thumbup:

    জবাব দিন
  12. পাভেল (১৯৯৩-৯৯)

    সবচাইতে প্রিয় লাইন

    কাদা-মাখা ন্যাংটো শৈশব হি হি করে হেসে দেয়, জানে উস্থূর নগ্নতায় মিশে যাবে সকল কোলাহল, অবিমিশ্র হাসি আর গান

    :thumbup:

    অফটপিক: টয়লেটের দেয়ালের চিত্রকর্ম বাংলা সাহিত্যে তার যথার্থ স্থান করে নিচ্ছে দেখে ভাল লাগল 😀

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পাভেল (১৯৯৩-৯৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।