মুখোশের মুখ্য বৈশিষ্ট্য

তার ভেতরে অচেনা কেউ একজন বসবাস করে
মাঝে মাঝে আয়নায় তার মুখ দেখে সে, তার মুখ ফুঁড়ে
আবার হঠাৎই হারিয়ে যায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই।

থেকে থেকে মনে পড়ে ফকির লালন এরকম
কিছু একটা বলেছিল, তোমার ঘরে বাস করে কারা
ও মন জানো না। সে জানে না অজানা কেউ তার
ঘরে কীভাবে এলো তাকে চেনে না সে, বাড়ছে
এখন সদাভয় সদাসন্ত্রস্ততা ও তটস্থ সংশয়!

তারপর সকালে ঘুম ভেঙে গেলে সে টের পেল
আরেকজন কথা বলছে কণ্ঠ চুরি হয়ে গেছে
পথে দেখা হলো কারো কারো সাথে, তারা
হাত মেলালো, হাসিমুখে কিঞ্চিৎ বাতচিত
করা শেষে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপহীন চলে গেল।

বাসে ঝুলে অফিসে যাচ্ছে সে, আচমকা ব্রেক
কারো গায়ে হুমড়ি খেলে স্যরি বললো আরেকজন,
লোকটা তার দিকে কিড়মিড় করে তাকালো,
সে বাস থেকে তড়িঘড়ি নেমে ফুটপাতে উঠে দেখে
আরেকজন হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে তার দেহটা নিয়ে।

সারাদিন আরেকজন তার হয়ে কথা বলে, তার হয়ে
খ্যাক খ্যাক করে হাসে কলিগের অশ্লীল রসিকতায়
ভরাট রিসেপশনিস্টের দিকে আড়চোখে তাকায়
লাঞ্চে কামড়ে কামড়ে খায় চিকেন তন্দুরি, আর
তার হয়ে মোড় থেকে চা সিগারেট খায়।

লিফটের আয়নায় সে দেখে আরেকজনের চেহারা
সেই ভাঁজে ভাঁজে সে নিজেকে আর দেখতে পায় না,
কাজের ফাঁকে বাথরুম পেলে ইউরিন্যালে আরেকজন
নিচে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে, দৃষ্টি সরাতে গেলে
সে টের পায় আরেকজন তার চোখের দখল নিয়ে নিলো।

বাসায় ফেরে সে আরেকজনের মতো, দুঃস্বপ্ন মনে হয়
তার কাছে। দেখে দরজায় ক্লিপে সাঁটা ভাড়ার নোটিস
আরেকজন ভেতরে ফিক ফিক করে হাসে, টের পায়,
স্বয়ংক্রিয়ের মতো আরেকজন ভাত খায়, খাবারের স্বাদ
নিয়ে নেয় আরেকজন, সে ভাবে সে খড় চিবাচ্ছে।

শোবার আগে দাঁত মাজতে গিয়ে সে একইসাথে শোনার
ও ছোঁয়ার অনুভূতি হারিয়ে ফেলে, অথচ এবার যেন
ভাবান্তরহীন আরেকজন তার বিছানায় শুয়ে পড়ে।
এর পরে সে শুধু মনে করতে পারে চোখ বোঁজার আগে
প্রাণপণে ছাদের ফাটল দিয়ে অজস্র মাকড়শা নেমে আসছিল।

*****
জুলাই ২৬, ‘১৫

[এই লেখাটি নূপুর ভাইকে উৎসর্গ করলাম।]

১,৬২৯ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “মুখোশের মুখ্য বৈশিষ্ট্য”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    :clap: :clap: :clap: :clap:

    প্রথমেই বলি, নূপুরকে যে তুমি কবিতা উৎসগর্ করেছো সেটি দেখে আমি দারুণ মুগ্ধ!

    গুণীজনের প্রতি গুণমুগ্ধ মানুষের ভালবাসার প্রকাশ তো এমনি হওয়া উচিত! কাল রাতেই ঘুমোতে যাবার আগে পড়েছিলাম তোমার লেখাটি। অপেক্ষায় ছিলাম ব্লগের কবিরা কি বলেন শুনে প্লেজারাইজ করে টরে কিছু একটা বলবো। কবিরা আজ ব্যস্ত বুঝি তাই নকলনবিসি (ভুল বানান নয়তো?) করে লেখা হলোনা কিছুই। নিজের কথাই বলি।

    জন লেননের নোহোয়ার ম্যান মনে পড়ে গেল তোমার লেখা পড়তে পড়তে।
    He's a real nowhere man
    Sitting in his nowhere land
    Making all his nowhere plans for nobody

    Doesn't have a point of view
    Knows not where he's going to
    Isn't he a bit like you and me?

    বিটলসের জন্য গানখানি লিখেছিলেন তিনি। লেনন বলেছিলেন তার এই নোহোয়ার ম্যানটি নো ওয়ান বাট হিম!

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      প্লেজারাইজ করেন নাই ভাল করেছেন, আপু। ইদানিং বিভিন্ন বড় বড় লেখকদের বইকে দলিল-প্রমাণ ছাড়াই নকল লেখা দাবি করছে লোকজন। এই নিয়ে বাংলা-ফেসবুক গরম। 😛

      লেননের গানটা আমার খুব ভাল লাগে। বিটলসের সব গানই ভাল লাগে। আমার প্রিয় ব্যান্ডদের একটা। হয়তো এটা কাকতালীয় যে লেননই সবার আগে বিটলস ভেঙে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, হি ওয়াজ এ নোহোয়্যার ম্যান ইনডিড!

      কবিতা পড়ে পাঠকের প্রতিক্রিয়া আমার কাছে সর্বদাই ইন্টারেস্টিং লাগে, আমি নিজেও পাঠক হিসেবে এটা উপভোগ করি, যখন কোন কবিতা আমার ভেতর অন্য কোন পুরনো কবিতা/গল্প/গান/সিনেমার কথা মনে করিয়ে দেয়।

      জবাব দিন
      • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

        🙂 🙂 🙂 🙂

        সিসিবিতে চমৎকার সব পাঠ প্রতিক্রিয়া পড়ে পড়ে আমি নিজেকে এডুকেট করতে চেষ্টা করি, জানো! তাতে খুব যে সফল হয়েছি তা কিন্তু মোটেত্ত নয়, তাই কবিতার প্রসংগে না গিয়ে কূটকৌশল করে আমি অন্য গল্প বলি। কবি তার মনের মাধুরী দিয়ে লিখবেন, আর পাঠক তার কল্পনার রঙের মিশেলে পড়বেন এইতো! আমি কবিতার সুরভিটুকু নিয়ে তাকে রিলেট করতে সচেষ্ট হই জীবনের প্রাত্যহিকতার সাথে! আমার চাতুরি অথবা ডিপ্লোম্যাসি এটুকুনই!

        বয়েসে তরুণতর সিসিবিয়ানরা কবিতাবিমুখ বলে মনেহয় মাঝেমধ্যে (আমার মাথাটিও তুমি তরুণতর কবিদের সাথে যোগ করো)! এই প্রসংগে একজন বিদগ্ধ কবির সাথে আলোচনায় বসলে তিনি বলেন, 'তুমি লেখা শুরু কর আপা, দেখবা সিসিবিয়ানরাও দলবদ্ধভাবে কবিতা পড়বে!' অর্বাচীন কবির সীমাহীন পক্ষপাতদুষ্ট মতামতের জন্য তার পতন চাই। আমি তো সিসিবির এতো বড় সর্বনাশ করতে পারিনা, ভাইয়া! তবে একটা কবিতা উৎসব করলে কেমন হয় বলো? কবি, অকবি, পাঠক সবাই মিলে কবিতা লিখবেন তখন!

        জবাব দিন
  2. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    প্রথমে
    আসে
    উচ্ছ্বাস,
    আন্দালিব!
    তোমার
    পদ্যের
    উদগ্রীব
    পাঠক
    পায়পায়
    নেমে এসে
    শেষে
    দ্যাখে
    স্বনাম!
    মুখোশে
    নয়,
    সত্যি-ফেসে
    হেসে খেলে
    হাসি ফোটে

    কবি,
    তোমাকে সেলাম!

    জবাব দিন
  3. সাইদুল (৭৬-৮২)

    কোন মিল নেই। তাও মনে পড়ে যাচ্ছেঃ

    খাচ্ছি দাচ্ছি চকচকে ব্লেডে দাড়ি কামাচ্ছি.........
    ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশে যাচ্ছি

    ভালো লাগলো, অনেক ভালো


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  4. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    কেউ একজন খুব আয়েশ করে কবিতাটা পড়ছে
    লাইনগুলো আমার ইচ্ছে-অনিচ্ছার ধারে কাছে নেই
    অথচ দিব্যি সরে সরে যাচ্ছে শেষের দিকে যাচ্ছে ।
    আমি পড়ছি, কেউ একজন তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে ।
    আমি পড়ছি কেউও একজন আন্দোলিত হচ্ছে ।
    আমি পড়ছি কেউ একজন মন্তব্য করছে ...
    আমি লিখছি কেউ একজন অক্ষরগুলো
    ক্রমাগত এখানে সাজাচ্ছে ... সাজাচ্ছে ...
    মন্তব্য ক্রমশ তার অবয়ব নিয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠছে
    আর ঠিক তখন থেকেই আমার ভাবনাগুলো থেমে কাঠ হয়ে আছে ...

    অনেক ভালো লাগলো কথাটা বলার আগেই সব
    অক্ষর আর শব্দেরা হি হি করে আমাকে দেখে হেসে উঠলো ...

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আন্দালিব (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।