একটি মূর্তিনির্মাণের সময় যা যা ঘটে

“উদভ্রান্ত সফেদ, দুলে ওঠো নীল তেপান্তর!”
আমি তার প্রান্তরেখায় তোমার মূর্তি বানাই,
ক্রমশ এগিয়ে আসা তারাদল; সেখানে
স্মিত হাসিমুখঃ নিয়ন-সুলভ- এঁকে রাত জেগে থাকে। আর
আমি হাতুড়ি বাটাল মেপে, নিখুঁত আঘাতে
প্রান্তরেখা ঝকঝকে ধারালো করি

যারা পর্যটক ছিলেন। আমাদের দেশে, মাটি ঘেঁষা সে’সকল
জটাচুলো পথিকেরা, এসে খুব মনোযোগী, দেখে
আমার কেরদানি। মূর্তির গায়ে দিগন্তভেদী আলো জমে থাকে,
আর আমার হাতের শিরায় জেগে ওঠে শীত পেরুনো গান!

একটু একটু রেখা ফুটে ওঠে
যেমন কালোস্তন, মেঘের বৃন্তেরা, আর সবুজ ঘামকণা,
প্রভৃতি লেগে থাকে অবহেলা-ভঙ্গিমায়।

আমি হাত সরিয়ে ফেলি।

পর্যটক-কাফেলায় মৃদু গুঞ্জন, ছলকে ওঠা
আর বিস্মিত দর্শকের চোখে সুখ, প্রকাশিত হওয়া
এমন বাস্তব ঘটনায় আমাদের প্রান্তরেখায়
সপ্তাশেষের হাট বসে। বিক্রীত হয়ে যায় চকিত অর্থমূল্যে
দৈনন্দিন ঘটনাবলী, সাধারন ক্রিয়াবাচকতা
এবং নেহায়েত মামুলি আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত,
স্বপ্নরহিত ভোর বা আশাবাদী বিকেলরঙ।

মূর্তিনির্মাণের সময়েই এইসব ঘটে যায় নিয়ম মেনে
তাই জড়ো হওয়া মানুষেরা রাগ করেন না
মন খারাপ করেন না
সুখী বা অসুখী হন না
এমনকি উদ্দীপিত/নির্বাপিতও হতে ভুলে যান
আমি হাত মুছে ফেলি আর একটু সরে এসে মূর্তির চোখে নিজেকে মরে যেতে দেখি
প্রান্তরেখায় জ্বলজ্বলে সত্যের মত, অনির্বাণ ধ্রুবতায় আমার মৃতদেহ ভাস্বর হতে থাকে।

***
১৫.২.৯

১,৯৫২ বার দেখা হয়েছে

৩৮ টি মন্তব্য : “একটি মূর্তিনির্মাণের সময় যা যা ঘটে”

  1. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    না বুঝার তো কিছু নাই । আলোচ্য কবিতায় কবি মূর্তি বানানোর জটিল প্রক্রিয়াটাকে আরো জটিলভাবে বর্নণা করেছেন ।
    অনটপিক: আন্দা (থ্যাংকু তাইফুর ভাই) তোর কবিতা মাথার উপর দিয়ে গেলেও এই কবিতাটা ভালা লাগসে । 😀

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ওই আন্দালিব, তুমি কই ছিলা এতদিন, খবর টবর নাই।

    কবিতা, কি আর কমু, তয় একটু একটু বুঝছি মনে হয়। ভাস্করের কষ্টের কথা কইছ। কত কষ্ট কইরা বানায়, এরপর বেইচা দেয়, মুর্তিটাও কষ্ট পায়, নির্মাতাও কষ্ট পায়।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  3. তাইফুর (৯২-৯৮)

    আন্দা, কবিতাটা পড়া শেষ করে মূর্তিটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম ...
    কোন এক নারী'র .........
    কবিতা অসাধারণ হইছে


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  4. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    আন্দালিব,
    কবিতা সরলীকরণের চেষ্টাটা যদি ইচ্ছাকৃত হয়ে থাকে, তাইলে বলতে হবে যে তুমি অনেক সফল... :boss:
    কিন্তু এর জন্য কি 'নান্দনিকতা'র সাথে ছাড় দিতে হচ্ছে? প্রশ্নটা করলাম, কারণ আমার মত সাধারণ পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে অপেক্ষাকৃত বোধগম্য কবিতা সুখপাঠ্য হলেও, বোদ্ধাদের মতামত জানাটাও হয়তো তোমার মত সিরিয়াস লেখকদের জন্য জরুরী...


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      সাকেব ভাই, আমি এই চেষ্টা করি সবসমসয় যাতে কোনমতেই কবিতার শিল্পগ্রাহী যে আঙ্গিক সেটা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কোন বিষয়ের কবিতার চাইতে আমি একটি উত্তীর্ণ কবিতা, বা নতুন কবিতা লিখতেই বেশি আগ্রহী! আবার এটাও ঠিক যে সেরকম কবিতা সাধারণ পাঠকের কাছেও ভালো লাগবে। আমি সেই জায়গাতে পৌঁছানোর চেষ্টাই করছি!

      জবাব দিন
  5. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    hello Andalib,
    I have just registered myself with this blogsite. Please excuse me for writing in English my as I am not very comfortable at writing in Bangla font; hopefully I shall manage to learn doing the same sometime later.

    It was indeed an wonderful experience reading your poetry. That was simply superb. I think you are dedicated to poetry writing.

    I also appreciate your sensibility towards the different types of responses you've got here.

    carry on man! I am out of the country for several years. I don't know what's happening there in terms of poetry writing. but, at least, your writing skill and maturity say a lot about it altogether. do you write anywhere? I mean the dailies or elsewhere?
    I would be happy if you could kindly provide me with some updates.

    with sincere regards,
    nupur

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আন্দালিব (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।