আষাঢ়েঃ একটি দৃশ্যভিত্তিক গল্প

আষাঢ় মাস চলে গেলে নাকি আষাঢ়ে গল্প জমে ভালো। আমিও তাই বলি, দিনক্ষণ মেনে গল্প বলতে বসলে কি চলে? আমরা কতো ব্যস্ত মানুষ, সেলিব্রেটি, এটা দেখতে হবে না! আমাদের সারাদিন কতো কাজ থাকে, আমরা ঘুরি ফিরি খাই দাই, দুপুরে ঘুমাই ভাতঘুম থেকে উঠে সন্ধ্যার খবর দেখি আর সন্ধ্যাতারা খুঁজে চোখ ট্যারা করি (ঢাকা শহরে তারা দেখা যায় না, এমন ধোঁয়া আর ধুলা!)। সেই ট্যারা চোখে কি জানি আবোল তাবোল দেখি আর ভাবি যা দেখতেছি সবই ঠিক, সবই সত্যি। পরে রাতে ঘুমায় পড়লে চোখ বন্ধ হয় আর ধরতে পারি যে এগুলা ঠিক দেখি নাই।

তা ঘটনা হইলো, ঐ ঘুমের মধ্যেই এক বিড়াট কাহিনী ঘটে গেলো। একে একে বলি। শিবরাম খুড়ো বলেছেন আস্তে আস্তে ভাঙতে!

স্বপ্ন শুরু হইলো সাদাকালো দিয়ে, আশির দশকের টিভি, ব্ল্যাক্যান্ডহোয়াইট। দেখি দালি সা’বে দুই মোচে দুই ফুল গুঁজে ঠারে ঠারে তাকাচ্ছেন। যাকে বলে কটাক্ষ, হীন ক্ষমাহীন!

আমি কইলাম, ভচ, আমার দিকে এইরাম করে না তাকায়ে সুন্দর মুন্দর একটা মেয়ের দিকে তাকান। ভাল্লাগবে। ওমা! দালি চোখের কটাক্ষ কটমট করে ফেললো! তারপরে জামা খুলতে শুরু করছে। আমি বলি, আরে! করেন কি করেন কি! বলতে বলতেই দেখি শার্ট খুলে দেখাচ্ছে যে পিঠে এক কালো গাছ গজিয়ে গেছে।

আমি বললাম, স্যরি ভচ, আমি ডাক্তার না, বোটানিস্টও না। গাছের নিয়ম কানুন জানি না। 😕
উনি বললেন, ঠিকাছে পাশে একটা ক্যামেরা আছে, তুলে নিয়ে ছবি ফোটাও। সেই ছবিটা সফদর ডাক্তারকে দিবা।

আমি হেসে বললাম, উনি তো ভালো ডাক্তার না, উল্টাপাল্টা চিকিচ্ছে করবে। দালি ক্ষেপে বললো, তা তোমাদের ভালু ভালু ডাক্তারেরা কি চিচিংগে উচ্ছে চিকিচ্ছে করে? সব জানা আছে হুঁ হুঁ! লাগবে না তিন মাইল লম্বা নামোলা ডাক্তার, আমার সফদারই ভালো! x-(

আমি ভাবলাম থাক ইনি ক্ষেপে গেলে বিপদ। স্যরি ট্যরি বলে বের হয়ে এসে দেখি হবিটদের বাড়ি।

এইরে! এখন যদি ফ্রোডো-স্যাম চলে আসে? বা সারুমান? মহা ঝঞ্ঝাটে পড়ে যাবো যে! তাই তাড়াতাড়ি পা চালালাম। সামনে এগিয়ে দেখি একটা বিড়াল আর কুকুর অনেক কিউট কিউট করে তাকিয়ে আছে। মহা মুস্কিল।

এদের দেখলেই আদর করতে ইচ্ছা করে যে! আবার বেশি মায়া পড়ে গেলেও বিপদ, বাড়ি নিয়ে যেতে ইচ্ছা করবে।

বাড়িতে পশুপাখি ঢুকানো নিষেধ। আমার মা দেখতেই পারে না! তাই দালির দেয়া ক্যামেরা দিয়ে ফটাফট ছবি তুললাম। নিয়ে যেতে না পারি, ছবি করে নিতে দোষ নাই! 🙂

তা, আমি তো মন দিয়ে ছবি তুলতেছি, হঠাৎ করে দেখি হুটোপাটি। দৌড়ে গিয়েই পড়বি তো পড় ব্যাটম্যানের ঘাড়ে। উনি আবার রসিক মানুষ, সন্ধ্যা হয় হয় আর নিয়ন বাত্তি জ্বালাই দিছেন।

একটু দূরে ব্যাটম্যানের ভয়ে ছাগু আর ভেড়া সেজে বসে আছে তিনভূজ, স্যরি, তিনকোনা, স্যরি, দুই জামাতি। এদের দেখি আবার চোখ বন্ধ। বুঝলাম ওনারা ধ্যান করতেছেন। পীরের মত ভড়ঙ ধরে থাকতেছেন এখন তো আবার বিচার শুরু হয় হয়, ভড়ঙ ধরে যদি পার পাওয়া যায় আর কি! মনে মনে বলি, ছাগু-ভেড়া তোমরা পার পাবে না। ছবি তুলে নিলাম যাতে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যায়!

ছবি ক্লিক করতেই ছাগু চোখ খুললো। তারপরে ম্যা ম্যা ম্যাৎকার। কপিরাইট, প্রাইভেসি, পেটেন্ট এরকম ভারি ভারি শব্দ বলতে শুরু করলো। আমি বুঝলাম এটা পিছলা ছাগু, তায় আবার বুদ্ধিজীবী। নিঘ্যাত বরবাদ মগবাজারের শিষ্য। ;;;

আমি তাড়াতাড়ি চোখ ঢেকে দৌড় দিলাম। বাঁচাও বাঁচাও। ম্যাৎকারে ম্যাৎকারে প্রাণ যায়।

অনেক দৌড়ে শেষে দিন শেষ হয় হয় , ঘুমও ভাঙে ভাঙে। এই সময়ে দেখলাম ‘আপ’ ছবির বুড়োবুড়ি মেঘের ওপর থেকে আমাকে ডাক দিলো। “কিরে বাচ্চু, খবর কী?” আমি বললাম, নানা ভালো আছি। নানা একটু হাসলো, নানীর কানে কানে কি জানি বললো, তারপরে মেঘটা হুট করে কেটে পড়লো। তো, আমি আগেই বুঝছিলাম যে কেটে পড়বে, তাই একফাঁকে খুট করে ছবি তুললাম!

যাক। দিনটা, মানে, স্বপ্নটা একেবারে খারাপ কাটলো নাহ! 😀

২,৫৬৯ বার দেখা হয়েছে

২৩ টি মন্তব্য : “আষাঢ়েঃ একটি দৃশ্যভিত্তিক গল্প”

  1. রকিব (০১-০৭)

    দৃশ্য-কাব্য ব্যাপারটা কিন্তু মন্দ নয়। মাঝখানে আমরা কয়েক বন্ধু মিলে কোথাও ঘুরতে গেলে যখন ক্যামেরাবাজি চলতো, তখন টুকিটাকি কিছু ছবি তুলতাম একটা গল্পে রূপ দেবার জন্য। হঠাৎ সেটা মনে পড়ে গেলো লেখাটা দেখে।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      হ্যাঁ, ওটাকে বলে স্টোরিলাইন বা স্টোরিবুক এরকম কিছু একটা। অনেক ভালো ভালো ফটোগ্রাফারের এরকম সেটপিস দেখেছি। বেশ কয়েকটা ছবি নিয়ে একটা স্টোরি। খুব বেশি বর্ণনা নাই, অথবা হয়তো শুরুতে পটভূমির বর্ণনা। ছবিগুলোও এমনভাবে তোলা হয় যে বর্ণনা ছাড়াই গল্পটা আন্দাজ করা যায়, নিজের মতো ভাবনা চলে আসে।

      এইটা অবশ্য ফাঁকিবাজি, কপি পেস্ট। এমনকি ছবিগুলোও আপলোড করি নি, সাইট থেকে এনে দিয়েছি। বড়ো ব্যস্ত দিন যাইতেছে গত কিছু দিন! 🙁

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আন্দালিব (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।