একদিন ভোর দেখার রঙ আমাকে মেরে ফেলবে না

গ্রাফিতি-ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিলাম,
বিবিধকোণ ছকত্বকী ফুটপাত
সেখানে পদছাপেরা ক্ষণস্থায়ী এবং ধুলিকণার নিবিড় নিবাস;
আমি হাঁটছিলাম অথচ সেখানে আমার ছাপ পড়ছিল না।

প্রসারিত হাতের রেখাগুলো কুঁচকানো,
আমার দিকে তেড়ে আসে, “ভিক্ষা দে”!
চাপা ক্রোধ! “দিবি না কেন”!
আমি কররেখার মতোই কুঁকড়ে যাই। “দে!”
অলৈঙ্গিক শৈথিল্য কামড়ে ধরে তলপেটের চিনচিনে ব্যথায়, “দিবি না?”
ওই হাত অনেক জীবন সয়েছে, ইঁট-চাপা-মুখে ভ্রষ্টাচার গিলেছে,
এখনও হাত বাড়াচ্ছে আমার দিকে, “সুশীল ভণ্ড! ভিক্ষা দিয়ে যা!”
আমি রাস্তা পেরিয়ে জঙ্গল পেরিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে ডোবা নালা পেরিয়ে যাই
আইলের এপাশে কর্কশ চোখেরা জ্বলজ্বল শ্বাপদী-তীরে আমাকে বিঁধে ফেলে!

আঁধার পেরিয়ে বাতাসে উড়ি-
ওড়ার শব্দে রাস্তায় বিছানা পাতে নীল অপরাজিতা কিংবা বেগুনি কলমীফুল।
আমি উঁচু থেকে দেখি ফুটে আছে হলুদ আলোর রানওয়েতে উড্ডীন;
জাহাজে করে দমফাটা বেলুনদের বুকে নিয়ে উড়ে যাওয়া চোখহীন মানুষ।
পৃথিবীর অপরপ্রান্তেও চোখ বুঁজতে পারে না ক্ষুধা, ক্লেশ
সঙ্গমক্লান্ত শরীরেরা, প্রসবিত কোমল সনেটেরা।
\"War and Peace\"
আমার ফিরে আসাতে মেদ জমে থাকে
ভার হয়ে থাকে প্রলম্বিত ছায়া
শরীরে সময়ের ছাপ পড়ে যায়।
ফেরার পথে তীক্ষ্ণ পোঁচে কেটে যায় আদিগন্ত জলজ রাজপথ,
গলিত প্রিজমে আমি চোখ মেলে আতিপাতি-
বিচ্ছুরণ খুঁজি
লাশ খুঁজি
গুপ্তক্রোধ খুঁজি
বিপন্নতর রোমকূপ খুঁজি
যেখানে নিভৃত গ্লানি জন্ম নেয়।

আমি জানি এরকম কষ্টের কোন ব্যাখ্যা নেই, সূত্র নেই, প্রকরণ নেই, এত নেই নেই, তবু কষ্ট আছে।
কারণ ছায়ার গায়ে বিষাদ-রহিত ওম জমে থাকে না।
একাকীত্বের জন্যেও ডাক পড়ে পৃষ্ঠপোষকের।
যুদ্ধের জন্যে সীমানা-ভাঙার অপরাধের চেয়েও জরুরি তোমার চোখ জিব হাত চুল কেটে পুড়িয়ে দেয়ার জান্তবতা।

খুব সাধ হয়ত একদিন ভোর দেখার রঙ আমাকে মেরে ফেলবে না।

১,৯৫৬ বার দেখা হয়েছে

২৫ টি মন্তব্য : “একদিন ভোর দেখার রঙ আমাকে মেরে ফেলবে না”

  1. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    :clap:

    অদ্ভুত সুন্দর !

    ছবির আগে যে পথে বোধটুকু গেল
    ছবির পর ফিরে এসেছে তা নিজের কাছে।

    যুদ্ধের জন্যে সীমানা-ভাঙার অপরাধের চেয়েও জরুরি তোমার চোখ জিব হাত চুল কেটে পুড়িয়ে দেয়ার জান্তবতা।

    খুব ঠিক কথা।
    যান্ত্রিকতা - পাশবিকতা তিলে তিলে খুন করছে মানবতার।

    খুব সাধ হয়ত একদিন ভোর দেখার রঙ আমাকে মেরে ফেলবে না।

    কামনা করে মনে প্রাণে সাধ যেন পুরণ হয়।

    অনেক অনেক ভালো থেকো প্রিয়।
    🙂


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
  2. রহমান (৯২-৯৮)
    আইলের এপাশে কর্কশ চোখেরা জ্বলজ্বল শ্বাপদী-তীরে আমাকে বিঁধি ফেলে!

    আন্দালিবও কি শেষ পর্যন্ত পিরা ভাষায় আক্রান্ত :-B :-/

    ব্যাপক জটিল কবিতা :thumbup: । আমি মনে হয় পুরাডাই বুঝছি 😐 । দিন দিন সিসিবি সত্যিই সমৃদ্ধ হচ্ছে :dreamy:

    জবাব দিন
  3. আন্দালিব (৯৬-০২)

    তৌফিক আর আমিন, তোরা দুইটা দোস্ত আমার, আমাকে অনেক উৎসাহ দিস বলে লেখাগুলা দিতে ভালো লাগে। তোদের এই নিরন্তর ভাল লাগার অনুভূতি আমারে অনেক বেশি ঋণী করে দিতেছে...। ভালো থাকিস!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তৌফিক (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।