টেবিলিক

ভাঁজ করা কাগজের ভেতরে একটা বিয়ের নেমন্তন্ন লুকিয়ে আছে, চারভাঁজি কাগজে ভাঁজে ভাঁজে বর, কনে, ও তাদের পিতামাতাগণ গা মিশিয়ে শুয়ে আছেন চিড়েচ্যাপ্টা। তাদের পাশেই, কাগজের গায়ে জমছে ধুলো, গত বছরের নেমন্তন্নের চিঠিটা ফেলা হয়নি! একটু দূরে রঙহীন তরল বিষ নিয়ে অ্যারোসলের ধাতবে ঢুকে যাচ্ছি আমি। বিন্দু বিন্দু বিষ, বাতাসে! ঝুম ঝুম ঝুমকার মত ঝুলছে, বাজছে। মুখোমুখি পড়ে আছে রুপালি ঘড়ির শরীর, জড়াজড়ি করছে তার সাথে আমার চাবির গোছা। গোছায় চারটা চাবি- পুরনো হতে হতে কালচে কালচে রঙ তাদের… একটা তোমার চাবি, তোমার ভেতরের গলিঘুপচিতে যাতে না হারাই সেই সংকেত লেখা আছে মোহন রূপেই। আরেকটা চাবিতে খোলে কালোগহ্বর যতো, আমাদের শরীরের মাঝে।

দূরে দেখি মোলায়েম মানিব্যাগখানা পেটমোটা হয়েছে অনেক! পেটের ভেতরে তোমাদের খসখসে ঠিকানাসকল। খাজাঞ্চিখানার নোটগুলোও চকচকে আজকাল, ইদানিং আমি শক্ত একটা কার্ড ঢুকিয়ে দেই তার পেটের ভেতরে আর কড়কড়ে নোটগুলো বেরিয়ে আসে। আজব যন্ত্র এক- শরীরে ধারণ করছে অর্থবিষ, শুনেছি মুদ্রাও তরলিত ক্রমশ!…

আরো আছে মুখ উঁচিয়ে থাকা গোলমুখো ওয়েবক্যাম-জালচোখ! গোলাপি মন্থর আলো জ্বেলে আমাকে দেখছে নিনির্মেখ। আমিও তাকে দেখি, রূপসী গোল চোখের মাঝে তার কোনো তাড়না নেই। ঘোর আছে, নিস্পৃহ ক্লান্তিহীন ঘোরে ফেলা চোখ তার তোমার চোখের চেয়ে অল্প একটু অসুন্দর…

ঝনঝনিয়ে বাজছে সেলফোন, কোষে কোষে তীব্র শিহরণ উঠে গেছে দুদ্দাড় তোড়ে জেগে উঠছে চরাচর। আমি ভাঙছি বাতাস ও নিদ্রার জোট। আলো! ওহ! আহ! চুরমার!

১,১৫৫ বার দেখা হয়েছে

২৬ টি মন্তব্য : “টেবিলিক”

  1. সাব্বির (৯৫-০১)

    পুরাটা একবার পড়ে, দ্বিতীয় বারের মত শুরু করছিলাম ১ম প্যারা পড়ার পর আর সাহস হল না 🙁 🙁
    আন্দা ভাই তুমি এর পর থেকে ট্যাগে " এন্টিনা " কথা টা রাইখ,
    তাহলে আমার মত খাটো এন্টিনা পার্টি অযথা ট্রাই করবেনা :shy:

    জবাব দিন
  2. পাভেল (১৯৯৩-৯৯)

    চাবির ব্যাপারটা বুঝি নাই। কিন্তু ভাল লাগল পড়তে, হয়তবা বলা উচিৎ দেখতে। কারণ লিখাটা অনেকটা পেইন্টিংর মতো, মনের মধ্যে একটা ইমেজ ক্রিয়েট করে 🙂
    অট: চাবি-চুবি ফালায় রাইখা বিয়ার কার্ড পাঠায় মাইয়া, এইটা কেমন কথা x-(

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)
      লিখাটা অনেকটা পেইন্টিংর মতো, মনের মধ্যে একটা ইমেজ ক্রিয়েট করে

      আমি এই প্রয়াসটা চালু রাখতে চাই। কবিতায় শব্দ আর কথাগুলো একইভাবে লেখার কোনো মানে নাই এখন। আমাদের আগের কবিদের লেখাগুলো দেখেন, মানবমনের সব অলিগলি তাঁরা হেঁটে ফেলেছেন, ঘেঁটে ফেলেছেন। এখন সেই একই অনুভূতি একটু ভিন্নভাবে বলা যেতে পারে। আমার বরং ভালো লাগে অনুভূতির রঙ আর রূপ নিয়ে চিন্তা করতে। 🙂

      পড়ার জন্যে আর মন্তব্যটার জন্যে অনেক ধন্যবাদ পাভেল ভাই।

      চাবিটা এলিমেন্ট হিসেবে দেখলে সাধারণ উপাদান কেবল। আবার যদি ভাবেন এটাও একটা রূপক, চার সংখ্যাটা কিছু ধারণ করে। চাবির বর্ণনায় কিছু ইঙ্গিত আছে, তবে সেটাও ভাবতে পারেন। এটুকু আপনার মনের কাছে ছেড়ে দিলাম!

      অফটপিকে, রাগটা ভাল্লাগছে খুব। বিয়ের দাওয়াত পাওয়া গেলে যদি চাবি মনের মাঝে ঝনঝন করে ওঠে-- তো কেমন লাগে বলেন?! (আবার এমনও হতে পারে যে চাবিগুলোর সাথে দাওয়াতের সম্পর্কই নাই। 😉 )

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কুচ্ছিত হাঁসের ছানা (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।