গল্পঃ দ্বিধা

ন্ধ্যা নেমে এসেছে বলেই মনে হয় এই হলুদ আলোয় ডিভাইডারে বসে রোমেলা দু’হাত মুঠো করে বেশ চিন্তায় মগ্ন হয়ে থাকে। একমুঠোয় সবুজ পাতা ঘিরে থাকা কতগুলো দোলনচাপা। বাদামি ময়লা ফ্রক-পরা রোমেলা তার হতবিহ্বল ভাব কাটাতে রুক্ষ্ণ তেলহীন চুল সরায় মুখের উপর থেকে। একটু আগে একটা গাড়ি-মহিলার কাছে সে পাঁচটা ফুল বিক্রি করেছে। তারপর থেকে ডিভাইডারেই বসে আছে থম্‌ মেরে। কী করবে বুঝতে পারছে না। সামনে দিয়ে হুশহাশ করে গাড়িগুলো বেরিয়ে যাচ্ছে বা সিগন্যালে পড়ে বুড়োটেগুলোর মতো বসে থাকছে রোমেলাকে না ছুঁয়েই। সকালে মা অল্প একটু পান্তা দিয়েছিলো, সেই থেকে কড়া রোদটুকু সয়ে রোমেলা সারাদিন ফুল বেচেছে। গত তিনমাস। প্রথমে গোলাপে শুরু, কিন্তু কাঁটার মতই খ্যানখ্যানে শরুফা একদিন অনেক থাপ্পর-চড়ে রোমেলাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলো যে সে একাই এখানে গোলাপ বেচবে। সাদা দোলনচাঁপা নিয়ে তার পরদিন থেকে রোমেলা এখানে ছুটে বেড়ানো শুরু করলো আগের মতই, শুধু গালের একপাশে দু’সপ্তা নখের ছড়ে যাওয়া দাগ ছিল। হেসে হেসে এগিয়ে গেলে ফুল বিক্রি হতে পারে এটা শিখে গেছে বলেই সারাক্ষণ মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখতে হয়। মাঝে মাঝে ধবধবে হাতির মতো মোটা কিছু গাড়ি-মহিলার হাঁসফাঁস দেখে ওর এমনিতেই হাসি পায়। তবে রাতে ঘরে ফিরে যাবার সময় রোমেলার মনে হয় এই ছাইভস্ম-মাখা শহরে কেউ হাসে না, সবাই তার মতোই ঝুলিয়ে রাখে। হাতের অবশিষ্ট ফুলগুলোও সারাদিন রোদ-কালি মেখে ছাইমুখ নিয়ে পড়া-না-পারা বালিকার মতো অধোবদন হয়ে থাকে।

আজকে একটু আগেই পাঁচটা ফুল বেচেছে রোমেলা, পাঁচকাঠির দাম বিশটাকা। গলি থেকে গাড়িটা বেরিয়ে সিগন্যালে পড়ার সময়ই ওটার গায়ে বাদামি ঝরনার মতো আছড়ে পড়েছিলো সে। কাচ নামিয়ে গাড়ি-মহিলা পাঁচটা ফুল নিয়ে টাকাটা দেবার আগেই কারেন্ট চলে গেল। অন্ধকারে টাকা দিয়েই ছুটে বেরিয়ে গেছে গাড়ি আর গাড়ি-মহিলা। সবুজ জ্বলজ্বলে আলোর নিচে ডিভাইডারে বসে রোমেলা দেখে ওর মুঠির ভিতর একটা চকচকে একশ’ টাকা!

—-

২,৮৩৮ বার দেখা হয়েছে

৪২ টি মন্তব্য : “গল্পঃ দ্বিধা”

  1. রকিব (০১-০৭)

    রবী ঠাকুরের একটা ছোট গল্পের সংগা ছিল ছড়ার আদলে... গল্পটা যেন তারই প্রতিফলন...
    অসাধারণ লিখেছেন আন্দালিব ভাই... :salute: :salute: :salute:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. ছন্নছাড়ার পেন্সিল ভাই, অনুগল্প মানেই জোস। আর আপনার এই লেখাটা পুরাই গুল্লি। ফিনিশিং গুলা অসাধারণ হয় বলেই হয়তো অনুগল্প গুলা এত ভাল হয়, আর আপনি সেইটারে আরো বাড়ায়া দিছেন। hats off for you. :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:

    জবাব দিন
  3. তাইফুর (৯২-৯৮)

    তুমিতো মিয়া ভাল লিখবাই ...
    এই ব্লগে'র অতি উচ্চ মানের লেখকদের মধ্যে তুমি যে অন্যতম একজন ...
    মোবারক মিয়া'র এইবারের ঈদ ভালই যাইতেছে ... তাই 'ঈদ মোবারক'


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফৌজিয়ান

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।