ভাঁজবিহীন সময়ের গল্প

আমরা কিছু সময়কে পুরনো কাঁপড়ের ভাঁজে লুকিয়ে রাখি। সেসব সময়ের রং চাররঙা খবরের কাগজের মত জ্বলজ্বলে ছিলো হয়তো একসময়। অনেকদিন কাপড়ের ভাঁজে থাকতে থাকতে সেসব সময়ের গায়ে সেলাইয়ের দাগগুলো স্পষ্ট হয়। সুতোর গন্ধ তীব্র হয়। রংসমূহ ধীরে ধীরে খয়েরি ও বাদামি হয়ে উঠতে থাকে। মনের ভুলে কেউ এসে ড্রয়ার থেকে কাপড়টা বের করে নেয়, আর তখনই তার ভেতর থেকে ভাঁজবিহীন সময়ের পাতাটা ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ে যায়। মেঝেতে, কিছুটা শীতল পরিবেশ ঝরে যাওয়া সময় আমাদের মুখের দিকে চেয়ে থাকে। মুখের রেখার সাথে সন্ধিচুক্তি করে।

কোন্‌ অতীতকালে, নব্বুইয়ের স্বৈরাচার পতনের ডামাডোলের ফাঁকে তখন নিরন্তর হরতাল মিছিলের উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সে উত্তাপ গালে মেখে দুরন্ত ফেব্রুয়ারিতে এক কিশোরের পথচলা দেখতে পাই। আমরা উৎসুক চোখে দেখি ফুটপাত জুড়ে বেলী কেড্‌সের জুতো মশমশিয়ে চলে যাচ্ছে লঘু পায়ে। ফুটপাত আর রাস্তার উল্টোদিকেই একটু নিচুমাটির মাঠ। মাঠের কিনারে ছয়ফুট দেয়াল। দেয়ালের গায়ে মোচওয়ালা এরশাদের ছেঁড়া পোস্টার। কালকে রাতে কারা ছিঁড়ে রেখে গেছে আর কালো কয়লার চকে লিখেছে, “স্বৈরাচারী নিপাত যাক!” কিশোরের চোখ কালো এবড়ো খেবড়ো অক্ষরগুলোর ওপর দিয়ে পিছলে যায়, আবার পুরোপুরি পিছলে যেতে যেতে “স্বৈরাচারী”তে আটকে থাকে। ‘স্বৈরাচারী মানে কী? অত্যাচারীর মত নাকি?’ এই অতিসরল চিন্তা নিয়ে দুই কি এক মিনিট সে দড়িলাফ খেলে। হাঁপ ধরে যাবার আগেই পরাবৃত্তের মত বাঁকান দড়িটা মাটিতে ফেলে সে হাঁটতে থাকে। ‘হোক্‌গে কেউ স্বৈরাচারী’! ফুটপাতের মুখটা যেখানে নিচু হয়ে রাস্তার বাঁকে মিলে গেছে, সেখানে সে নেমে পড়ে। নিচুমাঠের ধারে দেয়ালটাও বেঁকে ভেতরে ঢুকে গেছে রাস্তার সাথে। কিশোরের লঘু পায়ের ছাপ এই পিচের রাস্তায় পড়ে না, উল্টোদিকের দোকানে ঝুলিয়ে রাখা হলুদ চিপ্‌সের দিকেই তার চোখ চলে যায়। খানিক জুলজুলে দৃষ্টি ঝানু দোকানি চিনতে পেরে বেশ অমায়িক হাসি দেয়, কিন্তু কিশোরের হাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারে না। লোহার কালো গরাদের মত গেইটটা ঠেলে খুব কষ্ট করে কিশোর ছেলেটি একটা বিল্ডিঙের পেটে সেঁধিয়ে যায়।

বাইরের দুপুরের ছায়া একটু একটু করে প্রলম্বিত হচ্ছে, ঝিমে ধরা কালবৈশাখীর বুনো ঘাম বুকে নিয়ে। এপ্রিলের এই জ্বলে ওঠা গ্রীষ্মে শহরের নালী-উপনালীতে আগুন। দাউ দাউ করে গণতন্ত্র জ্বলছে। জাতীয়তাবাদে ঝলসে যাচ্ছে কিশোরের পিঠের ব্যাগ, হাতের ওয়াটার বট্‌ল। দুটোকে টেনে টেনে সে দুপুরের রোদের সকল রাগ নিয়ে ফুঁসতে থাকে। গত দুইমাসে পথের ধারে এই বিল্ডিঙে তার জিরোবার জায়গা হয়েছে। ইশকুলের সময় বেড়েছে ফাইভে ওঠার পর থেকে। ঘন্টাখানেক বেশি সময়ে সকালের নিখুঁত আঁচড়ে দেয়া চুল এলোমেলো হয়। বাতাসের হুটোপুটি শোনা যায় দোতলার ক্লাশরুমে। বুড়ো স্যারের মন নেই পড়ানোতে আজও, তাই তারা সকলে আজকে গল্প বলেছে। কিশোর চেষ্টা করছিল আবৃত্তি করার, “থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে দেখবো এবার জগৎটাকে…”। সেই ক্লান্তির শেষে আজকে রাস্তায় প্রচুর ধুলো। বিল্ডিঙয়ের তিনতলায় উঠে কলিঙবেল টিপতে যা দেরি, দরজা খুলে দিলে সে ধপাস করেই ব্যাগ-বট্‌ল ফেলে দেয়। এক দৌড়ে টেবিলের জগ থেকে পানি ঢকঢক করে গিলতে থাকে। যে মেয়েটা দরজা খুলে দিলো তার চোখে মুখে বিস্ময়। দরজা ফের লাগিয়ে দিয়ে সে টেবিলের কোনায় এসে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে। আর দেখে যে কিশোরের কষ বেয়ে গ্লাসের পানি উপচে গড়িয়ে পড়ছে, আর পিস্টনের মত ওঠানামা করছে গলার উঁচু হাড়!

‘তুই এত ঘামছিস কেন?’

‘ধুর গরম বাইরে। ধুলা!’

কিশোরীর সাথে এমন অযথাই কথা হয় কিশোরের। ফেব্রুয়ারিতে এই বিল্ডিঙে এসে উঠেছে ওরা, আর গলির শেষমাথায় কিশোরের বাসা। এর আগে অনেকটা পথ হাঁটতে হতো ওকে রোজ (রিকশা নেয়া যায়, কিন্তু একবার পড়ে গিয়ে হাঁটু আর কনুই ছিলে গিয়েছিল বলে এখন মা টাকা দেয় না)। এই বাসায় ওরা উঠে আসার পরে কিশোরের মাঝপথে থামার একটা জায়গা হয়েছে। দুপুরের এই ঝিমধরা বাতাস মেখে ও তাই তিনতলায় উঠে আসে রোজ। তারপরে কিশোরীর সাথে অযথা গল্পের সময়, বারান্দার গ্রীলের মধ্যে দিয়ে সারি সারি টিনের বস্তি দেখতে দেখতে ওরা গল্প করে। তিনতলা থেকে এই গরমের আঁচে পুড়তে থাকা বস্তির মানুষগুলোকে দেখে ওরা কী ছেলেমানুষি খেলা খেলে! মাঝে মাঝে স্কুলের ঘটনাও চলে আসে, এই যেমন সেদিন মারামারি হচ্ছিলো বস্তিতে। সেটা দেখে কিশোর তার ক্লাশের দুই গুণ্ডার মারামারির গল্প বলেঃ পেন্সিল নিয়ে কাড়াকাড়ির সময়ে মুশতাক কেমন করে একটা পেন্সিল তীরের মত ছুঁড়ে দিয়েছিল আবীরের দিকে। আবীরের পায়ে লেগে সেটা মাটিতে পড়ে গেলেও সেখানে কেটে গিয়েছিল কিছুটা। মুশতাকের আব্বু পুলিশে চাকরি করে। এইসব হাবিজাবি। কিশোরী চোখ গোল গোল করে শুনে শেষপর্যন্ত তাচ্ছিল্যে মুখ বাঁকায়। ‘যতসব ফালতু পোলাপাইন’! এভাবে বললে কয়েকটা গ্রীল জুড়ে জমে থাকা মরিচা শুকিয়ে যায়। ‘তুই এদের সাথে মিশিস কেন?’ নিরুত্তর কিশোরের মুখে কথা সরে না অনেকক্ষণ। তারপরে বস্তির মারামারি শেষ হলে, সবাই যার যার টিনের চালের নিচে ঢুকে পড়লে তারা বারান্দা ছেড়ে ঘরের ভেতরে আসে।

বিকেলের পরে, কিশোরের বাবা ঘরে ফেরার পথে তাকে এখান থেকে উঠিয়ে নেন। বসার ঘরে কিছুক্ষণ বসেন, চা নাস্তা খান। কিশোরীর মায়ের সাথে কথা বলেন টুকটাক। এসময়টা তারা দু’জনে ভিতরের শোবার ঘরে গিয়ে বসে থাকে। তারপরে বাইরে থেকে ডাক দিলে, কিশোর ব্যাগ-বট্‌ল তুলে নিয়ে ফিরে যায়। পরের দিন দুপুরে আবারও তাদেরকে ঐ বারান্দায় দেখা যায়। শুধু আজকে একটু বদল ঘটলো। বাসায় ঢুকেই কিশোরের ঢক ঢক করে পানি খাওয়া দেখে কিশোরী চমকে গেল একটু। তারপরে তারা খুব বেশি কথা বলেনি, সাদা-কালো টিভি খুলে বসে ছিল। ঝিরঝিরে অ্যান্টেনা নাড়ালে দূরদর্শন আসে, কিশোর কায়দা করে সেটা ঠিক করে খুব বাহাদুরের হাসি ছুঁড়ে দেয়, কিশোরী আবারও চমকে যায়। আজ সব ঘুণে ধরার দিন। কুরকুর করে ঘুন কাটছে ভিতরে ভিতরে। তারপর আজকে আরো বদলে যায় দিনটা, কারণ বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা এলেও কিশোরের বাবা ফেরেন না।

সন্ধ্যা নেমে আসলে বস্তির ভেতরে ভেতরে টিমটিমে আলোগুলো জ্বলে ওঠে। হলুদ আলোকে দূর থেকে কমলা রঙের লাগে, আর গ্রীলের গা ঘেঁষে বসে থাকতে থাকতে কিশোর শুনতে পায় বসার ঘরে তার মা কাঁদছে বোনের গলা জড়িয়ে। এপ্রিলের ঝাঁজালো আলো নিভে গেলেও তাপের অনুষদ ঘুরঘুর করছিলো টিনের চালের ওপর দিয়ে। তিনতলার বারান্দায় অল্প আঁচে পুড়তে থাকে কিশোর। মেয়েটি তখন বসার ঘরের পর্দা আঁকড়ে বিস্ফারিত চোখে দু’জন পূর্ণবয়স্কার কান্না দেখছিলো। আজকে সব হতবাকের দিন, এলোমেলো দিন। সে’রাতে কিশোর বাড়ি ফেরে না। মায়ের সাথে ঘুমানোর জন্যে বসার ঘরে তাদেরকে তোষক বিছিয়ে দেন গৃহকর্ত্রী। মশারির মাথাগুলো নতুন পেরেকের উচ্চতায় মিশ খায়নি বলে বাঁকা পালের মত অস্থির দুলছে। সেখানে অপরিচিত বালিশে শুয়ে কিশোরের নদীভ্রমণের ভ্রম হয়। তার মনে হয় মা আর সে একটা দিকহীন, পালের নৌকায় করে ভেসে যাচ্ছে। তোষকের বাইরেই পানির স্বাদ, মাছের ঘ্রাণে তার নিঃশ্বাস আটকে আসতে থাকে। মায়ের কান্নার দমক ততক্ষণে থেমেছে, এমনকি মা’কেও তার অপরিচিত লাগে খুব।

পরের দিন তাকে স্কুলে যেতে হয় না, এমনকি তার পরের দিনও। কিছুদিন পরে সে বুঝে যায় বাবা আর কখনও আসবে না। ধীরে ধীরে রাস্তার শেষের বাসাটা সে ভুলে যায়। জাতীয়তাবাদের পোস্টারের দেয়াল ধরে হেঁটে হেঁটে সে এই বাসাতেই এখন ফিরে আসে, বসার ঘরে তার মা তার জন্য অপেক্ষা করে।

২.

তারপরে ঘনবর্ষণের আগস্টে, সেবার তাদের শহরে অনেক থই থই পানি জমে। পানির ঢেউ বিল্ডিঙয়ের ল্যান্ডিং জুড়ে অনেক শ্যাওলা ঠেলে নিয়ে আসে। দারোয়ানের রোজ সকালের খেউ খেউ শোনা যায়, বস্তির ওখানে টিনের চালগুলোর ফাঁকে ফাঁকে জলমগ্ন জীবন কিশোর এবং কিশোরীর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সেখান থেকে কী করে তারা রান্না করে, এটা কিশোরীর গভীর রহস্যজনক লাগে। শুনে কিশোর বুঝতে পারে যে তারা আলাদা। অনেক আগে, একদিন কিশোরী যেভাবে গোপনে চমকে গিয়েছিল, সেভাবেই একদিন সে চমকে ওঠে।

আরো চমকে যাওয়ার মত কিছুদিন পরে তারা উজানে নতুন বাসায় উঠে যায়। মাঝখানে পড়ে ইশকুল। এখন কিশোরের বাসায় ফেরার পথ উল্টে যায়, সাথে উল্টে যায় দিনের ছন্দ। তার তাল কেটে যায়, সুর কেটে যায়। প্রায়ই স্কুল থেকে বেরিয়ে সে পুরনো পথের দিকেই হেঁটে যাবার চেষ্টা করে। সেদিকে অনেক সুন্দর পিচ-ঢালাই হয়েছে এখন, ফুটপাতের পাশের নিচুমাঠে অনেকগুলো দোকান, দুটা সেলুন আর সাইকেল-অটোরিক্সা সারাইয়ের দোকানও হয়েছে। এসবকিছুই সে জানে। কারণ মাঝে মাঝে সেদিকে গিয়েও ফিরে এসেছে। চমকে ওঠার পরদিন থেকেই তার কাছে বিল্ডিঙের পুরনো গেইটটাকে অচেনা লাগে। ভিন্‌দেশী মনে হয় সিঁড়িগুলো, তিনতলার ঠিকানাও মনে হতে থাকে অজ্ঞাত। তাই দূরবর্তী নৌকার মতোন ক্ষুদ্র লাগতে থাকে ডোরবেল, চৌকাঠের কমলাটে রং! পথ ভুলে ওদিকে হেঁটে হেঁটে দুপুরটা পুড়ে গেলে সে বাসায় ফিরে আসে। তালা খুলে গুমোট বাতাস ভর্তি বাসায় তার একা লাগে। এই বাসাটা একতলা। মাটির কাছে ভ্যাপসা রোদ আর ছায়া মিলমিশ করছে। সেখানে ব্যাগের ওজন সহসাই অনেক বেশি মনে হয় তার।

কিশোরীর খবরও পাওয়া যায় না অনেকদিন। চোখের আড়াল হলেই কেউ কেউ মনের আড়ালে চলে যায়–এই আপ্তবাক্য তখন কিশোরকে শিখে নিতে হয়। ঐ পথে রাস্তা চওড়া হয়, নতুন চকচকে বিল্ডিং ওঠে পুরনো পরিচিতটির গা ঘেঁষে। আর সজোরে উত্থিত হয় সুপার মার্কেট। এ সবই বহু বহু পুরাতন পরিবর্তন, কিশোরের অজ্ঞাতেই এহেন ভাঙা-গড়া চলতেই থাকে।

শুধু ঐ বিল্ডিঙটা বদলায় না। সেখানে তিনতলার দরজা খুলে ভেতরে গেলে আমরা দেখি সবকিছুই বদলে গেছে! বসার ঘরের বিন্যাস, দেয়ালের চিত্রকর্ম, মেঝের কার্পেট, মায় খাবার টেবিলের গ্লাস আর জগ পর্যন্ত সবই নতুন, পরিপাটি। বারান্দার বাইরে টিনের চালাগুলো আরো পুরাতন কালচে হয়ে উঠেছে, ঘন ঝিলিকের মত রোদ এখন আর সেখানে পিছলে যায় না। বাসার ভেতরে নতুনের পসরা সেজেছে অনেকদিন হলো। কিশোরী বড়ো হয়ে গেছে, তার মায়ের শরীর ভেঙে পড়েছে। কিশোরী চাকরি পেয়েছে, সে প্রেমে পড়েছে। তারপরে একদিন প্রেমিকের সাথে সে বিয়েও করে ফেলেছে।

এইসকল হাইলাইটেড খবর কিশোরের জানা আছে। অনুষ্ঠানে তারা মুখোমুখি হয়, দেখা হয়ে যায় কখনো কখনো পথ চলতেও। শুধু অবসর মিলে না। অথবা বলা চলে তারা কেউই সেই অবসরটুকু খুঁজতে চায় না। তাদের দু’জনের অগোচরেই বারান্দার অপরিবর্তিত গ্রীল, তার গায়ে জমে থাকা মরিচা, হু হু করে কাঁদতে থাকে!

***
৮.৮.৯

২,৬৯২ বার দেখা হয়েছে

৩৭ টি মন্তব্য : “ভাঁজবিহীন সময়ের গল্প”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    তোমার গল্পগুলি পড়তে চমৎকার লাগে।
    কী দারুন ভাষা।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  2. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    আপনি তো জানেনই যে আপনার লেখা আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু এই লেখায় সামান্য অনুযোগ আছে আমার। আপনার গল্পের ঢংটা যেন কার সাথে মিলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে(মনে হয় মঈনুল আহসান সাবের)। মানে বুঝাতে চাচ্ছিলাম আপনার লেখার মৌলিক ভাব যেটা সবসময়ই আমাকে মগ্ধ করেছে সেটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মন্তব্যে কোন ভুল করে থাকলে ধরিয়ে দিবেন, কষ্ট পেলে ঝারি দেবেন, কিন্তু মাইন্ড করতে পারবেন না, ছোট ভাই হিসেবে দাবী করলাম।

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      আরে, শেষের লাইনটা লিখলা বলেই তো ঝাড়ি দেয়া দরকার। আমি লেখার ব্যাপারে, আর কোনকিছুকেই গুরুত্বপূর্ণ ভাবি না শার্লী। আর যেহেতু এই বিষয়টা বেস্ট ইনপুট দেয়ার সাথে জড়িত, তাই যে কোন মতামতই কিন্তু আমাকে পথ দেখায়। লেখার পরে শুধুমাত্র নিজের দৃষ্টি ছাড়াও অন্যদের দৃষ্টি কতো যে উপকার করে, তা বলে শেষ করতে পারবো না।

      তোমার অনুযোগ নিয়েই বলি। মইনুল আহসান সাবেরের লেখা আমার খুব বেশি পড়া হয়নি। সম্ভবত 'বৃষ্টির দিন' নামে একটা উপন্যাস পড়েছিলাম কোন এক পত্রিকার ঈদসংখ্যায় অনেকদিন আগে। এই লেখাতে যদি তাঁর লেখার ঢং পাওয়া যায় তাহলে সেটা নিতান্তই কাকতাল। আমি যেহেতু গল্প খুবই কম লিখি, তাই চেষ্টা করছিলাম একটা থেকে আরেকটাতে যেন ভঙ্গিটা সহসাই বদলে যায়। 'মুরতাজা বিষয়ক সিদ্ধান্ত' গল্পে যেমন সবার কথা ছিল যে কথকের চিন্তাধারা অতি জটিল হয়ে পড়েছে। আমি তাই এই গল্পে ভাবলাম সেটাকে ভেঙে সরলভাবে বয়ান করি।

      এটা বেশ জরুরি পর্যবেক্ষণ হয়ে থাকবে আমার জন্য। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। 🙂

      জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    তুমি যে গদ্যে হাত পাকিয়ে ফেলেছো সন্দেহ নাই।
    আরো নির্মোহ, নির্মম গদ্য লেখো।
    খুব ভালো লিখছো, তবে এখনো তোমার বলে চেনা যাচ্ছেনা।
    সেদিন এই এলো বলে।
    অধীর, খুবই অধীর প্রতীক্ষায় আছি।

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      ঠিক বলেছেন। আমি নিজেও মনে করি আমার গদ্যে কারো না কারো ছায়া রয়ে গেছে (যদিও আমি ঠিক জানি না কার)। এটা আসলে চর্চার বিষয়। আর আমার আগ্রহ বরাবরই কবিতার দিকে বেশি!
      তবে আমি ভাবছি গদ্যের ভাষাটাকে এর পরে নিস্পৃহ করে তুলবো। সেখানে আপনার সাথে মিলে গেলো নূপুর ভাই! 😀 😀

      জবাব দিন
  4. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    তোমার লেখা পাঠককে ভাবায়। এটাই তো সাফল্য। যদিও ওটা অনেক দূর। তবে তুমি ঠিক রাস্তায় হাটছো। গল্প শেষ করার পর যদি সেটা মাথা থেকে হারিয়ে যায়, তাহলে সেটা পড়েই লাভ কি, পড়ার আনন্দই বা কোথায়? তোমারগুলো ঠিক তার উল্টো। লিখতে থাকো। লেখা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করো। মনে করো সিসিবি তোমার পরীক্ষাগার।

    ভালো লেগেছে। আর গদ্যে সাবলীলতা কেন জানি আমার ভীষণ প্রিয়। বিষয় নির্বাচন আর সাবলীলতা- তোমার কাছে দুটোই পেলাম। :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      সানা ভাই, আমিও আসলে সেটাই চাই। একটা লেখা যদি পাঠকের মনে অনুরণন তৈরি না করে, তাহলে সেটার সার্থকতা খুব একটা থাকে না। আমিও চেষ্টা করছি, গল্পের ভেতরে যেন মনে দাগ কাটার মত কিছু একটা থাকে।
      আর ব্লগটা তো আসলেই খেরোখাতা। ইচ্ছামতো লেখা যায়, সবার মতামতও পাওয়া হয়। এটা খুবই ভালো কাজ করে আমার জন্য। চেক অ্যাণ্ড ব্যালেন্স। :hatsoff: :hatsoff:

      জবাব দিন
  5. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    প্রথম প্যারটা তোরই লেখা কোন কবিতার মত মনে হল । শুরু থেকেই ভাল লেগেছে । শার্লী দেখলাম মইনুল আহসান সাবেরের ছায়া আছে বললো । যেহেতু উনার লেখা তেমন পড়ি নাই (আদৌ পড়েছি কিনা সন্দেহ), সো নো কমেন্টস । গল্পের শেষটা নিয়ে আমার একটা অনুযোগ আছে । কিশোর-কিশোরীর পূর_নবয়স্ক হয়ে ওঠার পর্যায়টাতে আমার মনে হয়েছে একটু তাড়াহুড়ো করেছিস । পুরো গল্পটা যেমন নদীর মতো ধীরে ধীরে বয়ে জাচ্ছিলো । সেভাবে শেষটা হলে মন্দ হতো না । আমার এরকম মনে হল । ভেবে দেখ । আরো বিচিত্র বিষয়ে তোর লেখা পড়ার আগ্রহ জানিয়ে রাখলাম । :thumbup:

    জবাব দিন
    • আন্দালিব (৯৬-০২)

      হুম, ওখানে আসলেই আলাদা করে কিছু বলার সুযোগ নাই। মানে দু'জনে চোখের আড়াল। দেখা নাই। কথা নাই। সেখানে ঘটনাগুলো হয়ত আরো বাড়িয়ে বলা যেত। কিন্তু মনোটোনাস লাগতে পারে ভেবে বলিনি।

      মানে এই জায়গাটায় হয়ত লেখাটা আমার গল্প লেখার দূর্বলতা প্রকাশ করে দিয়েছে। এটাকে এডিট করার সময়ে মাথায় রাখবো! 🙂

      অনেক ধন্যবাদ আদনান ভাই।

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাদিক (২০০০-২০০৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।