ক্রমশ নির্মীয়মান দৃশ্য কিংবা চরিত্রের গল্প

আচ্ছা, আচ্ছা।

আসো এইবার একটা গলপো বানাই আর পড়ি, পড়ি আর বানাই। আমি কদ্দুর ধরে রাখতে পারবো তার থেকেও বড়ো দায় তুমি, তোমরা কদ্দুর টেনে যেতে পারবা, বা কদ্দুর এক জায়গায় আটকে দাঁড়িয়ে পেনিট্রেইট করতে পারবা। তার মানে আমি এখানে চতুর শকুনির মতো প্যাসিভ-অ্যাগ্রেসিভ ভেক নিলাম। শুরু থেকেই সব খেলা তোমার। র‌্যাকেট-ব্যাট, জুতো-মোজা পরিয়ে তোমাকে নামিয়ে দিলাম। আমি খালি মাঠের কিউরেটর।

লোকে বলে গলপের শুরুতে খুব আকর্ষণীয় করতে হয়। বিজ্ঞাপিত করে দিতে হয়, মোড়কে মুড়িয়ে দিতে হয় শরীরকে। আর চিন্তা শেষটুক নিয়ে। মোড়ক খুলেই শিশুসুলভ আমরা জানতে চাই উপহারের ভিতর-সংবাদ! তো ঠিকাছে, শুরুটা আকর্ষণীয় করে দি। জনপদ অনেক বড়ো বিস্তৃত। তারচে’ ছোট্ট বাসা অনেক ঘনোগহীন। ঢাকা শহরের গলি ঘুপচিতে ঢুকিয়ে ঢুকিয়ে তোমাকে একেবারে ফেলোপিয়ানের সফর করালাম, সেখানে একটা ডিম্বাশয়-সম বাসা। বাইরেটা রুক্ষ- ভিতরে টাইলস, ঝকঝকে তকতকে আরামের নীড়।

তো, এখন ক্যারেক্টার বানাতে হবে। হুঁ হুঁ বাবা, এবারে আমি আর কিউরেটর হয়ে থাকতে পারবো না। বাসা না হয় সিভিল কিম্বা আর্কি-পাশ কেউ বানালো, পেটমোটা ভুঁড়িওলা বাড়িওলাও বানায়ে দিলাম- কিন্তু চরিত্র, জলজ্যান্ত মানুষগুলো ক্যাম্বায় বানায়? পাঠকেরা একমতে পৌঁছুতে পারবে না জানি (কারণ বৈচিত্র্যময়তায় বন্দী আমরা!)। সেখানে কিউরেটর ঠিক করে দিক পিচের প্রকৃতি, তাই না?

গলাখাঁকারি দিয়ে নিই- প্রথমে একটা পুরুষ বানাই। হ্যাঁ পুরুষ, কারণ নারী বানানো এতো সোজা নয়। তাছাড়া পুরুষ পাঠকরা পূর্বানুমান করে নিবে যে আমি নারীকেন্দ্রিক গলপো বানাচ্ছি, সেখানে শিশ্ন নেতিয়ে পড়ার মতো বিপন্নতা বা সজাগ হবার মতো উচ্ছ্বাস তৈরি হতে পারে। তাতে গলপো পুরোপুরি লিঙ্গানুগ-বিধেয়তে আটকে যাবে বলে আমি পুরুষই বানালাম। এখন নাম দিতে হইবেক। এই তো মামু (এটা খুবই নিরীহ সম্বোধন! কোনও পাঠক নিজেকে অফেন্ডেড ভাবতে পারে, ইচ্ছা করেই। তাতে পরের গলপো তাহার ভাগিনা-রচিত ধরে নিতে সমস্যা হইলেও আমার কিছুই করার নাই।), আমাকে ঝামেলায় ফেলে দিলে! নামকরণে আমি খুবই কাঁচা। গলপো বানানো না হয় কোন না কোনওভাবে তোমাগো ঘাড়ে চাপাইছি, নাম তো আর তোমরা দিবা না। ঠিকাছে ঠিকাছে, আমি তাহলে আগ-বাড়ায়া ঠিক করে ফেলি যে মূল চরিত্রের একটা “আমি”। তাতে বিবিধ লাভঃ কোন নাম দেয়ার ঝামেলা হলো না, নিজের স্ব-রতিমূলক স্বভাবটাও বেশ খেলাইতে পারলাম, আর তোমরাও নিজেদেরকে “আমি”-স্থলে বসিয়ে বসিয়ে স্বাদ নিতে পারবা!

এবারে একঘেঁয়ে সুর ছেড়ে একটু তালবদল করি। একটা নারী চরিত্র নিয়ে আসি। তবে তাকে আর নামহীন রাখা যাবে না। সেখানে বরং নাম দেয়াটাই গলপের জন্য লাভবাচক। কী নাম দেয়া যায়? একটা নামে তো অনেক কিছুই বুঝে নেয়া যায়- সামাজিক অবস্থান, আর্থিক সঙ্গতি বা সামর্থ্য, অনেক সময় কোন সময়ের চরিত্র সেটা দশক ধরে বলে দেয়া যায়। তবে পাঠকেরা বিরক্ত হবার আগেই একটা টেনে-রাখা নাম দিতে হবে, লৌহবাচক কোন কিছুকে চৌম্বকবল যেভাবে টানে- সেরকম। আচ্ছা নাম দিলাম “ঐন্দ্রিলা”। বাহ বাহ বেশ নাম। নামের মধ্যেই মেয়েটির কামনা, বাসনা, চাহনি, চুল সব ভেসে উঠছে, না? বেশ দারুন মেয়েটি। চোখ মুখ বাদ দিলাম, শরীরে আসি, বায়বীয় অনুভূতি উড়ে গেলে শুন্যস্থানই গুরুত্বপূর্ণ! শরীরের কথায় ৩৪২৬৩৬ চলে আসে। শরীরে ঝুলানো উঠে উঠে আসা সালোয়ার চলে আসে। শরীরে শিফন ওড়না আর রূপালি স্কার্ফ চলে আসে। শরীরে এমন কি খয়েরি কাঠের বালা, গোলাপি লিপস্টিক, অন্তর্বাস চলে আসে। শুধু আদিঅকৃত্রিম শরীরটাই আসে না। পরত পরত লেবাস-রূপবর্ধক-শ্যাম্পু-জেল-মেকাপে শরীরত্বক ঢেকে যায়। আমি ত্বকও খুলে ফেলতে চাই ঐন্দ্রিলার। ত্বকের নিচে মাংস, হাড়ের নিচের মজ্জাও ফেলে দিতে চাই। তারপরে কিছু কি বাকি থাকবে? মন? মনন? হৃদয়?

এবারে গলপো জমতে গিয়ে ঝুলে গেল। ওফ্‌, আবারও সেই পুরোনো হৃদয়ভিত্তিক আলোচনা। তবে আমরা গলপে ঢোকার সময়েই ঠিক করেছি এতে বায়বীয়তার বর্জন ঘটাতে হবে। সেজন্য আমরা আমি-কে বেশ নপুংসক করে দিই। সারাজীবনে সে কিছুই পায় নাই, কিছুই ঘটায় নাই। অর্জন আর কীর্তি বাদ দিলে কিছুই থাকে না আমাদের। তাহলে নপুংসক কাউকে চেনা যাবে অবয়ব দিয়ে। মুশকিল হলো “আমি”-র তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য অবয়ব নাই। কিন্তু তাহার রিপু আছে। প্রবল প্রতাপী পরিষ্কার রিপু। রিপুসকল তাকে দোলায়, গলায়, এমনকি জমাট বাঁধতেও সাহায্য করে!

আমার সাথে ঐন্দ্রিলার দেখা করানোর জন্যে কোনও বিদঘুটে কাকতালীয় ঘটনার আমরা অবতারণা না ঘটাই! ধরে নেই আমরা একে অপরকে চিনি। কোন না কোন বন্ধু-সমাবেশ-আড্ডা বা চেনা-পরিচিত আত্মীয়ের বাসায় তাদের দেখা হয়েছে, টুকটাক কথা হয়েছে। এমন মাপবিশিষ্ট চুল-চর্ম নারীর সাথে অর্জনহীন আমার এভাবে ‘দেখা হইলো’, আবার ‘কথাও হইলো’ এটা অবাস্তব লাগতে পারে। তাই কথা হওয়ার ঘটনাটা বলিঃ আমার আসলে একটা আড্ডা বা আত্মীয়ের বাসায় বসে থাকতে থাকতে বোরিং লাগতেছিলো, বারান্দায় গিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে বাইরে দেখছিলাম ১৭তলা নিচে মানুষেরা কেমন পিলপিলিয়ে হাঁটছে, চারপাশে তাদেরকে রিকশা আর গাড়িগুলো ছেঁকে ধরছে। ফেলোপিয়ানে চলাচলকারী শুক্রাণুসব! দেখতে দেখতে খেয়াল করলাম বারান্দায় আমি ছাড়াও আরেকজন এসেছে। মুখ-চেনার কারণে মুখে একটা স্মিতহাসি ঝুলিয়ে দিলো সে। আমিও ক্যাচ ধরে রিটার্নে আরেকটা লোফা বল ঠেলে দিলাম।

পরস্পর কয়েক মুহুর্ত চুপ থাকলে সে হয়তো বুঝতে পারে আমি নীরব থাকবো ভেবে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু সে সম্ভবত শোরগোল এড়িয়ে এখানে এসেও নৈঃশব্দ্য পছন্দ করছে না। কথা শুরু হলেও ঠিক গতি পাচ্ছিলো না, দায়সারা সামাজিকতার টুংটাং সেরে আমরা আবার নীরব হয়ে পড়তে পড়তেই ঐন্দ্রিলার ফোন বেজে উঠলো। ঈষৎ গাঢ়স্বরে তার কথাগুলো শুনে আর কথা বলার সময়ে তার সন্তর্পণে চুল কানের-পেছনে-ঠেলে-দেয়া দেখে আমি একটু সিদ্ধান্ত নেই যে ফোনের ওপাশে তার হৃদয়পুরের মানুষ।

এমন হঠকারী চকিত সিদ্ধান্ত আমি প্রায়ই নিয়ে থাকি। এবং দ্রুত নিয়ে ফেলা সিদ্ধান্তে অনড় থাকার প্রবল চেষ্টা করতে করতে আমি অন্যান্য সম্ভাব্য সিদ্ধান্তগুলোর ফলপ্রসূতা নিয়ে চিন্তা করতে থাকি। ঐন্দ্রিলার বেলাতেও তাই ঘটলো। আমি টের পাচ্ছিলাম যে যেহেতু আমি এই মঞ্চে নপুংসক এবং নিতান্তই ধীরজ, সেহেতু সুন্দরী এবং কমনীয় বাক-উৎসাহী নারীটিকে একজন সাথী দিতে হবে। তাকে একই সাথে পৌরুষোদ্দীপ্ত এবং চৌকস এবং সন্দেহপরায়ণ হতে হবে। ফোনালাপ হুট করেই শেষ হওয়াতে আমার চিন্তায় বাধা পড়ে। একটু বিব্রতমুখে ঐন্দ্রিলা তাকালে আমি জিজ্ঞেস করি, “কোন ঝামেলা?” সাথে একটু অতি অমায়িক মুখোশ বজায় রাখতে, “অবশ্য সমস্যা হলে বলার দরকার নাই।”

এটা যে একটা ফেইক লাইন সেটা অন্তত ঐন্দ্রিলা জানে। যত সমস্যাই হোক সেটা আমার সাথে সে এখন ভাগ করবে কারণ বারান্দায় অনুজীবেরা ছাড়া আর একটা মানিপ্ল্যান্ট ছাড়া জীবিত বস্তু নাই।
“আসলে একটু সমস্যা হয়েছে। আমার বয়ফ্রেণ্ড আজকে আসতে পারছে না তো, তাই বলেছিল যেন আমি না যাই। কিন্তু আমার বন্ধুটি রাগ করবে ভেবে এসেছি। এখন …”

ঠোঁটের ঈষৎ বেঁকে যাওয়া-টা টের পেলাম কথা বলা টাউন-বাসের মতোন থেমে যাওয়াতে। স্বরে অস্বস্তি।
বললাম, “ঠিকাছে, তো এখন চলে যান। বয়ফ্রেণ্ডের রাগ ভাঙান।”
“ও আসলে এরকম কখনো করে না, আজকে কী যে হলো!”
প্রগলভ মেয়েটা কি আমাকে ফ্রয়েড ঠাউরেছে? নাকি তার কাউন্সেলর? একটু ঠেশ দিয়ে বললাম, “কী-ই আর হবে! জেলাসি, অভিমান। বড়োজোর সন্দেহ বা রাগ! গিয়ে কথা বলেন, ঠিক হয়ে যাবে।”
ঐন্দ্রিলার ইতস্তত ভাব তবুও যায় না! “আপনি যদি একটু পৌঁছে দিতেন!”
“আমি?”
“আপনার সমস্যা হলে দরকার নেই।”
বাহ! আমার কথার এতো ত্বরিত ফেরত! মেয়েটা শার্প আছে।
আড্ডা ভালো দিচ্ছিলাম না। এমন আত্মীয়ও নয় যে অনেক রাত পর্যন্ত হা হা হে হে করে থাকতে হবে। আমি এই ঐন্দ্রিলার কথায় ঘুরে দাঁড়িয়ে সাথে যেতে উদ্যত হলাম। পথে বেরিয়ে রিকশা না সিএনজি কী নিবো জিজ্ঞেস করলে ঐন্দ্রিলার চকিত জবাব, “সিএনজি নেন”। আরো একটু ভাঙলো আগল, নাকি?

এই সিএনজি-তে উঠে আমাদের মধ্যে বেশ সহজিয়া কথোপকথন হতে থাকে। কী ভালো লাগে, কী খারাপ লাগে এগুলো পেরিয়ে আমরা ব্যক্তিগত হই। দূরত্ব বজায়ে রেখে কাছে আসার চেষ্টা করি।
আমার দেশের বাইরে যাবার ইচ্ছা নাই,
ঐন্দ্রিলা খুব ইলিশ-সর্ষে ভালবাসে,
আমি ঘুমকাতুরে এবং অলস,
ঐন্দ্রিলা এমবিএ করবে সামনে বছর।
এরকম নানা অপ্রয়োজনীয় তথ্যাদি আমাদের মাঝে চলাচল করতে থাকে ঐ ঘেরাটোপের সিএনজিতে। বাইরের গুমোটেও ফাঁকা রাস্তার বাতাসে আমার ফতুয়ার প্রান্ত আর ঐন্দ্রিলার ওড়না সামলাতে কষ্ট হয়।

তো, সেই ওভামসদৃশ বাসা ছেড়ে আমরা ঢাকার জরায়ু পেরিয়ে অনেকটা বাইরে উত্তরার দিকে চলে এলাম। সেখানে বড়োরাস্তা ছেড়ে ছোটরাস্তা, তারপর গলি, এদিক ওদিক, ডানে, ডানে, সামনে বামে করে করে আমরা একটা মেটাল দরজা লাগানো বাসায় এসে পৌঁছালাম। রাত বেড়ে দশটার কাছাকাছি। ঐন্দ্রিলার বয়ফ্রেণ্ডপ্রবর এখানে একটা ফ্ল্যাটে থাকে। ওর সাবলীল সরণে আমি টের পাই যে এখানে যাতায়াত নিয়মিত । ভালো ভালো, যাতায়াত থাকতেই পারে। সিঁড়ি বেয়ে পাঁচতলা উঠতে হবে কারণ বাড়িওলা লিফট বানায়নি। এহেন নিষ্ঠুরতা আমার উপরে আর দেখাতে চায় না ঐন্দ্রিলা। তাই আমাকে ট্রু-ফল্‌স অপশন দেয়। বলে, “আপনি চাইলে চলে যেতে পারেন।”
আমি জানি আমি যাবো না। আমার নপুংসক রিপুকুল আমাকে এখান থেকে যেতে দিবে না। যদিও ওগুলো না থাকলে এই এতরাতে শহর ঠেলে আমি অ্যাদ্দুর আসতাম না। বলি, না ঠিকাছে, আপনাকে তো ফিরতে হবে।”
“ওমা! আমাকে তো ও-ই পৌঁছে দিবে। আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম।”
আমি বিরক্তিটুকু ঢেকে বলি, “আর ধুর এটা কোনও ব্যাপার না! চলেন দেখি।”
এভাবে বলার পরেও ঐন্দ্রিলা বারবার সাধাসাধি করতে থাকে। শেষে ভদ্রতার মুখোশ পরে আছি বলেই আমি বলি ঠিকাছে, আমি ফিরে যাচ্ছি। পরে জানায়েন কী হলো।”

যাহোক ঐন্দ্রিলা ভিতরে চলে যাবার পরেও আমি সিএনজি নিয়ে একটু দূরে গলির লেজে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখি মেয়েটা কখন বের হয়! ঔৎসুক্যের চাইতেও উদ্বিগ্নতা সচল ছিলো বেশি। অপেক্ষার সময়টাকে আরেকটু দ্রুত কাটানোর জন্যেই হাতে সিগারেট আসে, লাইটার ধোঁয়া মিশিয়ে ফেলে আমি ওটা শেষ করেছি কি করি নাই, দেখি লোহার গেট ঠেলে ঐন্দ্রিলা বেরিয়ে আসছে। দ্রুত কোনও সম্মিলন শেষ হলে একটা চোরা-শঙ্কা জেগে ওঠে। আমি এগিয়ে দেখি ঐন্দ্রিলা লাশ হয়ে গেছে। চেহারা সাদাটে। খুব জোর থমথমে ঝড় চোখে জমে আছে। ওর পদক্ষেপে জড়ানো-তাল। “কী হয়েছে?”- এটা জিজ্ঞেস করলেও কোন উত্তর ফেরত পাইনা আমি। বাকরহিত ঐন্দ্রিলাকে আমার আর পছন্দ হয় না। তারপরও, যেহেতু এই অর্থোডক্স রাতটা তার কারণে বদলে যাচ্ছে তাই আমি তৎপর হই। সিএনজিতে টেনে বসিয়ে দিই। ওর বাসার ঠিকানাটা জানতাম। তাই বলি, “ধানমণ্ডি চলেন।” পাশে ঐন্দ্রিলা কাঠ হয়ে বসে থাকে। মৃদু ঝাঁকুনিতেও তার সাড় আসে না। আমি দুয়েকবার চেষ্টা করি পুনরায় “কী হয়েছে?” শব্দগুচ্ছ ঠেলে দিয়ে। কিন্তু অভিমানী বিড়ালের মতোই ঐন্দ্রিলা মুখ ঘুরিয়ে নেয় । পাশে এরকম নিরুত্তর বসে থাকা ঐন্দ্রিলা রেখে আমি ফেরার পথে বাইরে চোখ রাখি। রাত এগারো ছুঁই ছুঁই, এয়ারপোর্ট রোডের পাশে খিলক্ষেত দেখে মনে হয় রেচননালী নিয়ে বৃক্ক পড়ে আছে। হঠাৎ লোডশেডিঙের ঝাপ্টায় টের পাই আবছা তীব্র আলো জ্বেলে আকাশে চাঁদ জেগে আছে।

মুহুর্তেই সব মিথ্যা হয়ে যায়। এই গলপো বানানো, চরিত্র বানানো, পটভূমি বানানো সব। এই আমি, এই ঐন্দ্রিলা, এই ফোনের ওপাশে তার পৌরুষ-বন্ধু সব। এমনকি মায় এই সিএনজিসুদ্ধা রাস্তাঘাটও কর্পুরের মত উবে যেতে থাকে। এই সন্ধ্যাটা আর রাতটা খালি জেগে থাকে। সেখানে ঐন্দ্রিলা আর আমি পাশাপাশি বিযুক্ত আর নির্বাক হয়ে ছুটে যেতে থাকি।

—-
-১৬ই অক্টোবর, ২০০৮

১,৩১৩ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “ক্রমশ নির্মীয়মান দৃশ্য কিংবা চরিত্রের গল্প”

  1. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    ভাই খুবই ভালো লাগলো 🙂 🙂 🙂


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  2. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    অসাধারণ....... :hug:

    যদিও পাঠক হিসেবে আমার জন্য এ ধরণের লেখা বেশ কঠিন। তাতে কি?????????
    তোমার লেখা তুমি লিখবে......আমি পড়বও। কারণ
    :clap: তোমার লেখায় চমতকার নিজস্বতা আছে। সেটাকে :salute:


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  3. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)
    হঠাৎ লোডশেডিঙের ঝাপ্টায় টের পাই আবছা তীব্র আলো জ্বেলে আকাশে চাঁদ জেগে আছে।

    মনে হচ্ছে তোমাকে দিয়ে হবে। ঠাট্টা নয়। আসলেই ভালো লিখেছ। অভিনন্দন।।।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  4. আন্দালিব (৯৬-০২)

    অনেক অনেক গুলো করে ধন্যবাদ সবাইকেই। আমি এই ব্লগে এখনও সেভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারি নাই। পুরাই আমার ব্যর্থতা! সময়টাও কিছুটা ব্যস্ত কাটতেছে। সেটা কাটিয়ে নিরবচ্ছিন্ন একটা নিজস্ব সময় চাইতেছি মনে মনে। সবার পাঠ আমাকে অনেক বেশি উৎসাহ দিচ্ছে। সেটার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তাইফুর (৯২-৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।